ডিজিটাল ডাবল আর অভিনেতাদের চাকরির নিরাপত্তা
সম্পূর্ণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের মাধ্যমে তৈরি এক ভার্চুয়াল “অভিনেত্রী”কে ঘিরে হলিউডে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বাস্তব কোনো মানুষকে মডেল না করেই বিভিন্ন অ্যালগরিদমের সাহায্যে তৈরি এই চরিত্রকে সম্প্রতি একটি বড় প্রজেক্টের প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে—যেন তিনি বাস্তব তারকা। পোস্টার, ট্রেইলার ও প্রোমো ক্লিপে তাঁকে দেখানো হচ্ছে ছবির প্রধান মুখ হিসেবে। অনেক অভিনেতার কাছে এটি ভবিষ্যতের আশঙ্কাজনক ইঙ্গিত: যদি মুখ, কণ্ঠ ও অভিনয় সবই সফটওয়্যার দিয়ে তৈরি করা যায়, তবে স্টুডিওগুলো কি আরও বেশি খরচ ও সময় বাঁচানোর জন্য মানব অভিনেতাদের জায়গা কমিয়ে দেবে না? সাম্প্রতিক ধর্মঘট ও আলোচনায় অভিনেতারা যেসব সুরক্ষা চেয়েছিলেন, এই উদাহরণ সেই উদ্বেগকে আরও বাস্তব করে তুলেছে।
দর্শকদের এক অংশ প্রযুক্তিগত দক্ষতায় মুগ্ধ; তাঁদের মতে, কিছু শটে এআই–নায়িকাকে বাস্তব মানুষের থেকে আলাদা বোঝা কঠিন। অন্য দিকে অনেকেই বলছেন, চোখের নড়াচড়া, মুখের সূক্ষ্ম টান আর শরীরী ভাষায় এক অদ্ভুত অস্বাভাবিকতা রয়েছে, যা তাকে “অস্বস্তিকরভাবে বাস্তব” করে তোলে। ইউনিয়নগুলোর প্রধান উদ্বেগ হলো, এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট থেকে শুরু করে পার্শ্ব চরিত্র—অনেকের কাজেই চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বড় প্রোডাকশনগুলো যদি ভিড়ের দৃশ্য, স্টান্ট বা ছোট ছোট চরিত্রে মানুষের বদলে ভিজ্যুয়াল ডাবল ব্যবহার করতে শুরু করে, তবে কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

আইন, মালিকানা ও অভিনয়ের শিল্প
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিদ্যমান কপিরাইট ও ইমেজ–রাইট আইন মূলত বাস্তব মানুষের ছবি ও ফুটেজ নিয়ে কাজ করার জন্য তৈরি; সেখানে সম্পূর্ণ সফটওয়্যার–উৎপন্ন চরিত্রের মালিকানা, দায়বদ্ধতা কিংবা সাদৃশ্যজনিত ক্ষতির প্রশ্ন স্পষ্টভাবে ওঠেনি। যদি কোনো ডিজিটাল চরিত্রের মুখাবয়বে একাধিক বাস্তব তারকার বৈশিষ্ট্য মিশে থাকে, কিংবা দীর্ঘদিনের আর্কাইভ ফুটেজ দেখে মডেল তৈরি হয়, তবে সেই “মিশ্র” চরিত্রের ওপর কার কতটা অধিকার থাকবে—তা এখনো অস্পষ্ট। অভিনয়শিল্পীরাও ভাবছেন, যখন সফটওয়্যার দিয়ে বারবার মুখের অভিব্যক্তি বদলানো যায়, তখন সেটে দাঁড়িয়ে পরিচালক ও অভিনেতা মিলে যে অভিনয় তৈরি করেন, সেই যৌথ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব কতটা বজায় থাকবে।
প্রযুক্তির সমর্থকেরা অবশ্য এটিকে সম্পূর্ণ নেতিবাচকভাবে দেখতে নারাজ। তাঁদের দাবি, সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতার শর্তে এআই–চরিত্র নিরাপদ স্টান্ট, জটিল ভিজ্যুয়াল দৃশ্য বা বিশেষ কিছু প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু তার আগে দর্শককে পরিষ্কারভাবে জানাতে হবে কখন পর্দায় বাস্তব অভিনেতা এবং কখন ডিজিটাল ডাবল, এবং চুক্তিতে নিশ্চিত করতে হবে যে এআই–নির্মিত চরিত্রের কারণে কারও কাজের জায়গা অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। হলিউডের এই নতুন এআই–নায়িকা তাই কেবল প্রযুক্তিগত পরীক্ষামূলক প্রজেক্ট নয়; তিনি হয়ে উঠেছেন সেই আয়না, যেখানে ভবিষ্যৎ চলচ্চিত্র শিল্পের নৈতিক সীমারেখা নিয়ে আলোচনাগুলো এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















