০৩:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

টার্গেটের ‘১০–৪’ নীতি: অদ্ভুত আচরণ, নাকি স্মার্ট ব্যবসায়িক কৌশল?

টার্গেটের নতুন গ্রাহক-সেবা নীতি
আমেরিকান খুচরা বিক্রেতা টার্গেট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিছিয়ে পড়েছে। দোকানে গ্রাহকের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে তারা চালু করেছে নতুন নীতি—‘১০–৪ প্রোগ্রাম’। এই নিয়মে গ্রাহক কর্মীর দশ ফুটের মধ্যে এলে কর্মীকে হাসতে হবে, চোখে চোখ রাখতে হবে, হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে হবে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ শরীরী ভাষা দেখাতে হবে। আর গ্রাহক চার ফুটের মধ্যে এলে ব্যক্তিগতভাবে অভিবাদন জানিয়ে সহায়ক আলাপ শুরু করতে হবে।

নীতি কি অত্যন্ত অদ্ভুত?
শুনতে প্রথমেই মনে হতে পারে—মানুষের ভবিষ্যৎ কি তবে এতটাই কৃত্রিম? কর্মীদের কি হাসতেও শেখাতে হবে? কেউ পাঁচ ফুট দূরে দাঁড়ালেই কি হাত নাড়তে হবে? আর খুব কাছে এলে কি বাড়তি অস্বস্তি তৈরি হবে?

নীতির যৌক্তিকতা
তবে ভাবলে দেখা যায় এর পেছনে যুক্তি আছে। খারাপ গ্রাহকসেবা ব্যবসার ক্ষতি করে। অপ্রাকৃতিক হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ অসৌজন্যের চেয়ে ভালো। তাই কর্মীদের আচরণ নিয়ে সুস্পষ্ট প্রত্যাশা নির্ধারণ করা যৌক্তিক। ওয়ালমার্টেরও আছে ‘দশ ফুট নীতি’; অনেক হোটেলে চলে ‘১৫–৫ নীতি’। এগুলো ‘হসপিটালিটি জোন’ নামে পরিচিত—নির্দিষ্ট দূরত্বে সেবার নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া।

নীতি বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা
নীতি কীভাবে কার্যকর করা হচ্ছে তার ওপর সবকিছু নির্ভর করে। কেউ কেউ নীতির চরম ব্যাখ্যা দেন—কাঁচের আড়ালেও হাসতে হবে, পেছনের গ্রাহকের প্রতিও হাত নাড়তে হবে! এতে কর্মীরা যেন সারাক্ষণ ঘুরতেই থাকেন। যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রয়োগ করলেও কিছু ঝুঁকি থাকে।

গ্রাহকের ভিন্ন পছন্দ
সব গ্রাহক সমান মনোযোগ চান না। কেউ দ্রুত নিজের মতো কেনাকাটা করতে চান—তাদের জন্য অতিরিক্ত শুভেচ্ছা বিরক্তিকর হতে পারে। রেস্তোরাঁয় বারবার “খাবার উপভোগ করছেন?” জিজ্ঞেস করার মতোই এটি বিরক্তির কারণ হতে পারে।

 প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা
গ্রাহকসেবায় কিছু মুহূর্ত সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিটি যোগাযোগকে যদি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলা হয়, অন্য কাজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সব পরিস্থিতি সমান গুরুত্ব বহন করে না।

কর্মীদের অন্যান্য কাজ ব্যাহত হওয়া
কর্মীদের পণ্য সাজানো, অনলাইন অর্ডার বাছাইসহ আরও নানা কাজ থাকে। কম কর্মী থাকলে প্রতিটি গ্রাহককে অভিবাদন জানানোর চাপ অন্য কাজ ব্যাহত করতে পারে—ফলে খালি তাক বা ভুল অর্ডারের ঝুঁকি বাড়ে।

 কর্মীদের মানসিক চাপ
গবেষণায় দেখা গেছে—স্বাধীনতা বাড়লে কর্মীর সন্তুষ্টিও বাড়ে। কিন্তু নির্দিষ্ট দূরত্বে কী করতে হবে তার কঠোর নির্দেশ মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, যা সেবার মান কমিয়ে দেয়।

 সূত্র নয়, পরিবেশই সফলতার চাবিকাঠি
টার্গেটের উদ্দেশ্য ভালো—গ্রাহকের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করা। তবে উৎকৃষ্ট সেবা আসে সামগ্রিক পরিবেশ, বিবেচনা ও পরিস্থিতি বিচার করার সক্ষমতা থেকে। নীতি নয়, আসল সফলতা নির্ভর করে সঠিক পরিবেশ ও নমনীয়তার ওপর।

#সার্ভিসনীতি #টার্গেটনীতি #ব্যবসাবিশ্লেষণ
জনপ্রিয় সংবাদ

টার্গেটের ‘১০–৪’ নীতি: অদ্ভুত আচরণ, নাকি স্মার্ট ব্যবসায়িক কৌশল?

১২:৫৮:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

টার্গেটের নতুন গ্রাহক-সেবা নীতি
আমেরিকান খুচরা বিক্রেতা টার্গেট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিছিয়ে পড়েছে। দোকানে গ্রাহকের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে তারা চালু করেছে নতুন নীতি—‘১০–৪ প্রোগ্রাম’। এই নিয়মে গ্রাহক কর্মীর দশ ফুটের মধ্যে এলে কর্মীকে হাসতে হবে, চোখে চোখ রাখতে হবে, হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে হবে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ শরীরী ভাষা দেখাতে হবে। আর গ্রাহক চার ফুটের মধ্যে এলে ব্যক্তিগতভাবে অভিবাদন জানিয়ে সহায়ক আলাপ শুরু করতে হবে।

নীতি কি অত্যন্ত অদ্ভুত?
শুনতে প্রথমেই মনে হতে পারে—মানুষের ভবিষ্যৎ কি তবে এতটাই কৃত্রিম? কর্মীদের কি হাসতেও শেখাতে হবে? কেউ পাঁচ ফুট দূরে দাঁড়ালেই কি হাত নাড়তে হবে? আর খুব কাছে এলে কি বাড়তি অস্বস্তি তৈরি হবে?

নীতির যৌক্তিকতা
তবে ভাবলে দেখা যায় এর পেছনে যুক্তি আছে। খারাপ গ্রাহকসেবা ব্যবসার ক্ষতি করে। অপ্রাকৃতিক হলেও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ অসৌজন্যের চেয়ে ভালো। তাই কর্মীদের আচরণ নিয়ে সুস্পষ্ট প্রত্যাশা নির্ধারণ করা যৌক্তিক। ওয়ালমার্টেরও আছে ‘দশ ফুট নীতি’; অনেক হোটেলে চলে ‘১৫–৫ নীতি’। এগুলো ‘হসপিটালিটি জোন’ নামে পরিচিত—নির্দিষ্ট দূরত্বে সেবার নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া।

নীতি বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা
নীতি কীভাবে কার্যকর করা হচ্ছে তার ওপর সবকিছু নির্ভর করে। কেউ কেউ নীতির চরম ব্যাখ্যা দেন—কাঁচের আড়ালেও হাসতে হবে, পেছনের গ্রাহকের প্রতিও হাত নাড়তে হবে! এতে কর্মীরা যেন সারাক্ষণ ঘুরতেই থাকেন। যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রয়োগ করলেও কিছু ঝুঁকি থাকে।

গ্রাহকের ভিন্ন পছন্দ
সব গ্রাহক সমান মনোযোগ চান না। কেউ দ্রুত নিজের মতো কেনাকাটা করতে চান—তাদের জন্য অতিরিক্ত শুভেচ্ছা বিরক্তিকর হতে পারে। রেস্তোরাঁয় বারবার “খাবার উপভোগ করছেন?” জিজ্ঞেস করার মতোই এটি বিরক্তির কারণ হতে পারে।

 প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা
গ্রাহকসেবায় কিছু মুহূর্ত সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রতিটি যোগাযোগকে যদি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ বলা হয়, অন্য কাজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সব পরিস্থিতি সমান গুরুত্ব বহন করে না।

কর্মীদের অন্যান্য কাজ ব্যাহত হওয়া
কর্মীদের পণ্য সাজানো, অনলাইন অর্ডার বাছাইসহ আরও নানা কাজ থাকে। কম কর্মী থাকলে প্রতিটি গ্রাহককে অভিবাদন জানানোর চাপ অন্য কাজ ব্যাহত করতে পারে—ফলে খালি তাক বা ভুল অর্ডারের ঝুঁকি বাড়ে।

 কর্মীদের মানসিক চাপ
গবেষণায় দেখা গেছে—স্বাধীনতা বাড়লে কর্মীর সন্তুষ্টিও বাড়ে। কিন্তু নির্দিষ্ট দূরত্বে কী করতে হবে তার কঠোর নির্দেশ মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, যা সেবার মান কমিয়ে দেয়।

 সূত্র নয়, পরিবেশই সফলতার চাবিকাঠি
টার্গেটের উদ্দেশ্য ভালো—গ্রাহকের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করা। তবে উৎকৃষ্ট সেবা আসে সামগ্রিক পরিবেশ, বিবেচনা ও পরিস্থিতি বিচার করার সক্ষমতা থেকে। নীতি নয়, আসল সফলতা নির্ভর করে সঠিক পরিবেশ ও নমনীয়তার ওপর।

#সার্ভিসনীতি #টার্গেটনীতি #ব্যবসাবিশ্লেষণ