০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৭)

  • নাঈম হক
  • ০৩:০০:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • 7

প্রবল বৃষ্টির জন্য কখনো বা বোমাবর্ষণ স্থগিত রাখতে হয়েছে। আর ভেজামাটিতে ট্রাকের চাকার হাঁটু অব্দি বসে যাওয়াও মোটেই প্রীতিকর ছিল না।

মার্কিন সেনারা কখনোবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঢাকার রমনা রেসকোর্সে যেতেন। তারা ঢাকা ক্লাবেও যেতেন। তবে ঢাকা ক্লাবের অতিথিদের বিরাট অংশই ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। ঢাকার কাছাকাছিতে কর্মরত অধিকাংশ নার্স ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত, আর চমকপ্রদ ব্যাপার হলো যে এইসব নার্স ব্রিটিশ ও ভারতীয় সমাজে সামাজিকভাবে অদ্ভুত ছিলেন। একবার হলো কি যে মার্কিন সেনারা ঢাকা ক্লাবে গেল, সঙ্গে যার যার গার্ল-ফ্রেন্ডকে নিয়ে, আর ঘটনাক্রমে গার্লফ্রেন্ডরা সবাই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নার্স। ব্যস আর যায় কোথা! এই কলঙ্কজনক ঘটনাটিকে একেবারেই ধামাচাপা দেয়া হয়। এবং সাফল্যের সঙ্গে।)

ঘাঁটির অপারেশন পরিচালনায় সত্যিকারের সপত্ন বা শনি ছিল বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টির জন্য কখনো বা বোমাবর্ষণ স্থগিত রাখতে হয়েছে। আর ভেজামাটিতে ট্রাকের চাকার হাঁটু অব্দি বসে যাওয়াও মোটেই প্রীতিকর ছিল না।

মশা ও বাঁদর নিয়ে কুর্মিটোলায় ছিল বাড়তি আরেক সমস্যা। মশার বিরুদ্ধে মশারি টাঙানো হতো বটে কিন্তু খালি “বাসা” পেলেই বাঁদর ভেতরে ঢুকে কুচি কুচি করে মশারি ছিঁড়ে ফেলত। বাঁদরের দলকে প্রতিরোধ করার জন্য এমনকি একজন নিয়মিত পাহারাদার রাখা হয় যার কাজই ছিল ফাঁকা গুলি করে বাঁদরদের ভয় পাইয়ে তাড়িয়ে দেয়া।

একবার তো এক ধেড়ে বাঁদর জল মজুদ করে রাখার ওয়াটার-টাওয়ারে গিয়ে হাজির হয়। ট্যাঙ্কটির কোনো ঢাকনা ছিল না, কারণ সেটিতে বৃষ্টির জল ধরা হতো এবং ক্লোরিন দিয়ে বিশুদ্ধ করণের পর খাওয়ার জল হিসেবে ব্যবহার হতো। ধেড়ে বাঁদরটি কি করছে আর করতে পারে’র তামাশা দেখার জন্য জিআই-এর লোকজনেরা সেখানে গিয়ে ভিড় জমায়।

প্রথমে বাঁদরকে লক্ষ্য করে কিছু পাথর ছোঁড়া হলো, কিন্তু বাঁদরটি নড়াচড়ার কোনো লক্ষণ দেখালো না। সদ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এক লেফটেন্যান্ট-ও ঘটনাস্থলে এসে হাজির। তিনি কারো কাছ থেকে একটি রাইফেল নিয়ে ধাঁ করে বাঁদরটিকে গুলি করে বসেন। গুলি খাওয়া বাঁদরটি পড়বি তো পড় সোজা সেই জলের ট্যাঙ্কের ভেতরে গিয়ে পড়ল।

(চলবে)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬)

জনপ্রিয় সংবাদ

ধর্মীয় পরিবার থেকে অভিনয়ের মঞ্চে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৭)

০৩:০০:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

প্রবল বৃষ্টির জন্য কখনো বা বোমাবর্ষণ স্থগিত রাখতে হয়েছে। আর ভেজামাটিতে ট্রাকের চাকার হাঁটু অব্দি বসে যাওয়াও মোটেই প্রীতিকর ছিল না।

মার্কিন সেনারা কখনোবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঢাকার রমনা রেসকোর্সে যেতেন। তারা ঢাকা ক্লাবেও যেতেন। তবে ঢাকা ক্লাবের অতিথিদের বিরাট অংশই ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। ঢাকার কাছাকাছিতে কর্মরত অধিকাংশ নার্স ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত, আর চমকপ্রদ ব্যাপার হলো যে এইসব নার্স ব্রিটিশ ও ভারতীয় সমাজে সামাজিকভাবে অদ্ভুত ছিলেন। একবার হলো কি যে মার্কিন সেনারা ঢাকা ক্লাবে গেল, সঙ্গে যার যার গার্ল-ফ্রেন্ডকে নিয়ে, আর ঘটনাক্রমে গার্লফ্রেন্ডরা সবাই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান নার্স। ব্যস আর যায় কোথা! এই কলঙ্কজনক ঘটনাটিকে একেবারেই ধামাচাপা দেয়া হয়। এবং সাফল্যের সঙ্গে।)

ঘাঁটির অপারেশন পরিচালনায় সত্যিকারের সপত্ন বা শনি ছিল বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টির জন্য কখনো বা বোমাবর্ষণ স্থগিত রাখতে হয়েছে। আর ভেজামাটিতে ট্রাকের চাকার হাঁটু অব্দি বসে যাওয়াও মোটেই প্রীতিকর ছিল না।

মশা ও বাঁদর নিয়ে কুর্মিটোলায় ছিল বাড়তি আরেক সমস্যা। মশার বিরুদ্ধে মশারি টাঙানো হতো বটে কিন্তু খালি “বাসা” পেলেই বাঁদর ভেতরে ঢুকে কুচি কুচি করে মশারি ছিঁড়ে ফেলত। বাঁদরের দলকে প্রতিরোধ করার জন্য এমনকি একজন নিয়মিত পাহারাদার রাখা হয় যার কাজই ছিল ফাঁকা গুলি করে বাঁদরদের ভয় পাইয়ে তাড়িয়ে দেয়া।

একবার তো এক ধেড়ে বাঁদর জল মজুদ করে রাখার ওয়াটার-টাওয়ারে গিয়ে হাজির হয়। ট্যাঙ্কটির কোনো ঢাকনা ছিল না, কারণ সেটিতে বৃষ্টির জল ধরা হতো এবং ক্লোরিন দিয়ে বিশুদ্ধ করণের পর খাওয়ার জল হিসেবে ব্যবহার হতো। ধেড়ে বাঁদরটি কি করছে আর করতে পারে’র তামাশা দেখার জন্য জিআই-এর লোকজনেরা সেখানে গিয়ে ভিড় জমায়।

প্রথমে বাঁদরকে লক্ষ্য করে কিছু পাথর ছোঁড়া হলো, কিন্তু বাঁদরটি নড়াচড়ার কোনো লক্ষণ দেখালো না। সদ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এক লেফটেন্যান্ট-ও ঘটনাস্থলে এসে হাজির। তিনি কারো কাছ থেকে একটি রাইফেল নিয়ে ধাঁ করে বাঁদরটিকে গুলি করে বসেন। গুলি খাওয়া বাঁদরটি পড়বি তো পড় সোজা সেই জলের ট্যাঙ্কের ভেতরে গিয়ে পড়ল।

(চলবে)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৬)