জার্মানির অর্থমন্ত্রী লার্স ক্লিংগবেইল নতুন জোট সরকারের প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে চীন সফরে পৌঁছেছেন। জার্মানির সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি দ্রুত বাড়ছে, সরবরাহ শৃঙ্খলে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে—এ অবস্থায় বার্লিন চাপের মধ্যে রয়েছে চীননীতি স্পষ্ট করার জন্য।
সফরের প্রেক্ষাপট
ক্লিংগবেইলের সফরটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুলের পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল হয়েছিল। চীন তার প্রস্তাবিত বেশিরভাগ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছিল। এর ফলে সরকারি মহলে শক্ত অবস্থান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে যায়।
চীনের সঙ্গে আলোচনার প্রধান বিষয়
জার্মান কর্মকর্তারা জানান, ক্লিংগবেইল চীনা সীমাবদ্ধতা—বিশেষ করে রেয়ার আর্থ বা বিরল খনিজ রপ্তানি—নিয়ে আলোচনা করবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আগেই আলোচনার অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
ক্লিংগবেইল যাত্রার আগে বলেন:
“জার্মানির অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং চীনের স্টিল ও ইলেকট্রিক যানবাহন খাতে অতিরিক্ত উৎপাদন কমানো এখন অত্যন্ত জরুরি।”

যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব
ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য যুদ্ধ জার্মান রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর ফলে চীন থেকে জার্মানিতে সস্তা পণ্যের প্রবাহ বেড়েছে, সরবরাহ শৃঙ্খলে নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং বিরল খনিজ ও গাড়ির চিপ আমদানিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
বেইজিং-এর বৈঠক ও পরবর্তী পরিকল্পনা
ক্লিংগবেইল চীনেরউপ-প্রধানমন্ত্রী হি লিফেং’র সঙ্গে জার্মান–চীন অর্থনৈতিক সংলাপে অংশ নেবেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বুন্ডেসব্যাংকের প্রধান ইয়োয়াখিম ন্যাগেল এবং জার্মান ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির একটি ছোট প্রতিনিধি দল।
পরে তিনি সাংহাই যাবেন জার্মান মাঝারি আকারের কোম্পানির প্রধানদের সঙ্গে দেখা করতে। এরপর সিঙ্গাপুরে উড়াল দেবেন।
ইউরোপে সতর্কতা: রেয়ার আর্থ ও নেক্সপেরিয়া ইস্যু
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনের রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে অটোমোবাইল চিপ কোম্পানি নেক্সপেরিয়াকে ঘিরে বিরোধ ইউরোপের জন্য বড় সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জার্মান চেম্বার অফ কমার্স-এর কর্মকর্তা ম্যাক্সিমিলিয়ান বুটেক বলেন:
“চীনের নিয়ন্ত্রণ প্রায় উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার মতো প্রভাব ফেলতে পারে। রেয়ার আর্থ দেখিয়ে তারা নিজেদের শক্তি স্পষ্ট করেছে।”

জার্মানির নীতি পুনর্মূল্যায়ন
জার্মান রাজনীতিবিদরা বলছেন—পূর্ববর্তী সরকার চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করে ভুল করেছে। দুটি বড় ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে: চীন জার্মানির শিল্প পণ্যের প্রধান বাজার এবং একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের সরবরাহকারী।
থিংক ট্যাংক মেরিক্স-এর অর্থনৈতিক প্রধান জ্যাকব গান্টার বলেন:
“আরও কঠিন বাস্তবতা সামনে না এলে রাজনৈতিকভাবে শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।”
জার্মান পার্লামেন্ট ইতোমধ্যেই চীননীতি পুনর্বিবেচনায় একটি বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন করেছে।
অর্থনৈতিক স্বার্থ ও ভূ–রাজনীতির টানাপোড়েন
জার্মান বাণিজ্য চেম্বারের কর্মকর্তা ভল্কার ট্রায়ার সতর্ক করেন:
“নেক্সপেরিয়া ইস্যু দেখিয়ে দেয়—যদি স্বচ্ছতা না থাকে, তাহলে ব্যবসায়িক সমস্যা সহজেই ভূ-রাজনৈতিক হয়ে যেতে পারে।”

সিডিইউ–র নেতা ইউয়ার্গেন হার্ট বলেন:
“চীনা সরকারকে বুঝতে হবে—অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থ মিশিয়ে ফেলা আমরা মেনে নেব না।”
জার্মানি–চীন বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড পর্যায়ে
যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কের কারণে চীনা কোম্পানিগুলো পণ্য ইউরোপে বেশি পাঠাচ্ছে। বিডিআই-এর চীনা বাজার বিশেষজ্ঞ ফার্দিনান্দ শ্যাফ বলেন:
“চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা চরম পর্যায়ে—ইউরোপকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
২০২৫ সালের প্রথম আট মাসে চীন জার্মানির বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। এ বছর জার্মানির চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ৮৭ বিলিয়ন ইউরো ছাড়াতে পারে। জানুয়ারি–আগস্টে জার্মান রপ্তানি কমেছে ১৩.৫%, একই সময়ে আমদানি বেড়েছে ৮.৩%।
মেরিক্স-এর গান্টার সতর্ক করেন:
“চীনা শিল্পের অতিরিক্ত উৎপাদন জার্মানির জন্য বড় ঝুঁকি—এটি কঠিন আঘাত হানবে।”
#china #germany #trade #economy #supply_chain #rare_earths
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















