০৪:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
ব্রাজিলে কোপ৩০ আলোচনার শেষ সপ্তাহে তীব্র টানাপোড়েন নন-প্রফিট কাঠামোতে যাচ্ছে মাষ্টডন, সিইও পদ ছাড়ছেন প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রখকো ঢাকায় ১০ মাসে ১৯৮ খুন- পুলিশ তথ্য বিশ্বজুড়ে তীব্র ক্ষুধা সংকটের সতর্কতা, তহবিল ঘাটতিতে বিপদে ডব্লিউএফপি দ্য গুড সামারিটান’ ছবিতে জাঁকিয়ে অ্যাকশনে ফিরছেন ডেইজি রিডলি নারীর যৌন হয়রানি : অভিযোগের হিমশৈল, প্রকাশ্যে শুধু চূড়া? দুনিয়া জুড়ে ম্যাচা জ্বর, চাপে জাপানের চা–খাত ও ভোক্তার আস্থা জ্বালানি নিরাপত্তায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক বাজি ধরল চেক রিপাবলিক স্টার্টআপ ‘প্রজেক্ট প্রমিথিয়াস’-এ সহ–প্রধান নির্বাহী হয়ে এআই দুনিয়ায় ফিরছেন জেফ বেজোস ছেলের মৃত্যুতে অনশন ভাঙলেন সার্বীয় মা, রাস্তায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

ব্যবসা কি সত্যিই বদলাবে? বেলেমের কপ৩০ সম্মেলনে বড় পরীক্ষায় করপোরেট দুনিয়া

কম সিইও, কিন্তু প্রত্যাশা বেশি
ব্রাজিলের বেলেম শহরে শুরু হওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-এ এবার আগের অনেক আসরের তুলনায় বড় করপোরেট সিইওদের উপস্থিতি কম। তবু ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের ওপর চাপ কখনোই এত বেশি ছিল না। আলোচনাকক্ষের ভেতরে দেশগুলোর প্রতিনিধিরা আগামী দশকে কত দ্রুত নির্গমন কমানো যাবে, সে হিসাব কষছেন; বাইরে করিডরে ব্যাংক, ফান্ড ম্যানেজার আর বড় কোম্পানিগুলো নিজ নিজ “নেট-শূন্য পথনকশা” আর সবুজ হাইড্রোজেন, কার্বন অপসারণ প্রকল্পের জোর প্রচার চালাচ্ছে।

সমস্যা হলো, এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই এখনও কয়লা, তেল ও গ্যাসভিত্তিক প্রকল্পে জোরালোভাবে জড়িত। জলবায়ু কর্মীরা তাদের ওপর “সবুজ প্রলেপ” দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন। জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র ও ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ধাপে ধাপে বন্ধ করার স্পষ্ট সময়সীমা না দিলে নতুন নবায়নযোগ্য প্রকল্প দিয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য ধরা যাবে না। শুধু নতুন সোলার পার্ক বা উইন্ড ফার্ম দেখানো যথেষ্ট নয়; বিদ্যমান উচ্চ কার্বন অবকাঠামোতে কাঁচি চলতেই হবে।

টাকা, সময়সীমা আর দায়বদ্ধতার লড়াই
কপ৩০-এর আরেক বড় বিতর্ক অর্থ জোগান নিয়ে। উন্নয়নশীল দেশগুলো চাইছে সস্তা ও সহজ শর্তের অর্থ, যাতে তারা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ, জলবায়ু-সহনশীল সড়ক ও শহর গড়ে তুলতে পারে। অনেক দেশের অভিযোগ—প্রতিশ্রুত অনুদান আসছে না, বরং উচ্চ সুদের ঋণ এসে ঋণঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। ব্যবসায়ী মহলের যুক্তি, স্থিতিশীল নীতি, দ্রুত অনুমোদন আর স্বচ্ছ বিধান থাকলে তারা নিজ থেকেই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ঢালতে পারবে।

বেলেমে এখন বড় প্রশ্ন হলো, সরকারগুলো কি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের সময়সীমা আর নতুন তেল-গ্যাস প্রকল্প সীমিত করার ব্যাপারে মুখ খোলবে? জ্বালানি কোম্পানিগুলোর বক্তব্য, গ্যাস অন্তত কিছু বছর ‘স্থানান্তর জ্বালানি’ হিসেবে জরুরি থাকবে। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিটি নতুন জীবাশ্ম প্রকল্পই অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ, বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

কিছু ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা কার্বন ধরপাকড় প্রযুক্তিকে (কার্বন ক্যাপচার) বড় সমাধান হিসেবে তুলে ধরছেন, বিশেষ করে স্টিল, সিমেন্টের মতো শিল্পে দ্রুত নির্গমন কমানো কঠিন বলে। সমালোচকেরা মনে করেন, এখনও পুরোপুরি পরীক্ষিত না হওয়া এসব প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত ভরসা দিলে বাস্তবিক নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ পিছিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য কপ৩০-এর সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপকূল রক্ষা বাঁধ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, ফসলের বৈচিত্র্যকরণ বা নগর ড্রেনেজ—এসব অভিযোজন প্রকল্পে কতটা অর্থ পাওয়া যাবে, তার আভাস মিলবে এখান থেকেই। পর্যবেক্ষকদের মতে, সম্মেলনের সফলতা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে এই প্রশ্নের ওপর—বড় কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আসলেই কি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পুঁজি তুলে নিয়ে যথেষ্ট মাত্রায় পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে বিনিয়োগ শুরু করেছে, নাকি শুধু ভাষণে অঙ্গীকার জুড়ে যাচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রাজিলে কোপ৩০ আলোচনার শেষ সপ্তাহে তীব্র টানাপোড়েন

ব্যবসা কি সত্যিই বদলাবে? বেলেমের কপ৩০ সম্মেলনে বড় পরীক্ষায় করপোরেট দুনিয়া

০২:২৫:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

কম সিইও, কিন্তু প্রত্যাশা বেশি
ব্রাজিলের বেলেম শহরে শুরু হওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-এ এবার আগের অনেক আসরের তুলনায় বড় করপোরেট সিইওদের উপস্থিতি কম। তবু ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের ওপর চাপ কখনোই এত বেশি ছিল না। আলোচনাকক্ষের ভেতরে দেশগুলোর প্রতিনিধিরা আগামী দশকে কত দ্রুত নির্গমন কমানো যাবে, সে হিসাব কষছেন; বাইরে করিডরে ব্যাংক, ফান্ড ম্যানেজার আর বড় কোম্পানিগুলো নিজ নিজ “নেট-শূন্য পথনকশা” আর সবুজ হাইড্রোজেন, কার্বন অপসারণ প্রকল্পের জোর প্রচার চালাচ্ছে।

সমস্যা হলো, এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই এখনও কয়লা, তেল ও গ্যাসভিত্তিক প্রকল্পে জোরালোভাবে জড়িত। জলবায়ু কর্মীরা তাদের ওপর “সবুজ প্রলেপ” দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন। জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র ও ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ধাপে ধাপে বন্ধ করার স্পষ্ট সময়সীমা না দিলে নতুন নবায়নযোগ্য প্রকল্প দিয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য ধরা যাবে না। শুধু নতুন সোলার পার্ক বা উইন্ড ফার্ম দেখানো যথেষ্ট নয়; বিদ্যমান উচ্চ কার্বন অবকাঠামোতে কাঁচি চলতেই হবে।

টাকা, সময়সীমা আর দায়বদ্ধতার লড়াই
কপ৩০-এর আরেক বড় বিতর্ক অর্থ জোগান নিয়ে। উন্নয়নশীল দেশগুলো চাইছে সস্তা ও সহজ শর্তের অর্থ, যাতে তারা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ, জলবায়ু-সহনশীল সড়ক ও শহর গড়ে তুলতে পারে। অনেক দেশের অভিযোগ—প্রতিশ্রুত অনুদান আসছে না, বরং উচ্চ সুদের ঋণ এসে ঋণঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। ব্যবসায়ী মহলের যুক্তি, স্থিতিশীল নীতি, দ্রুত অনুমোদন আর স্বচ্ছ বিধান থাকলে তারা নিজ থেকেই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ঢালতে পারবে।

বেলেমে এখন বড় প্রশ্ন হলো, সরকারগুলো কি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের সময়সীমা আর নতুন তেল-গ্যাস প্রকল্প সীমিত করার ব্যাপারে মুখ খোলবে? জ্বালানি কোম্পানিগুলোর বক্তব্য, গ্যাস অন্তত কিছু বছর ‘স্থানান্তর জ্বালানি’ হিসেবে জরুরি থাকবে। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিটি নতুন জীবাশ্ম প্রকল্পই অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ, বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

কিছু ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা কার্বন ধরপাকড় প্রযুক্তিকে (কার্বন ক্যাপচার) বড় সমাধান হিসেবে তুলে ধরছেন, বিশেষ করে স্টিল, সিমেন্টের মতো শিল্পে দ্রুত নির্গমন কমানো কঠিন বলে। সমালোচকেরা মনে করেন, এখনও পুরোপুরি পরীক্ষিত না হওয়া এসব প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত ভরসা দিলে বাস্তবিক নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ পিছিয়ে যাবে।

বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য কপ৩০-এর সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপকূল রক্ষা বাঁধ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, ফসলের বৈচিত্র্যকরণ বা নগর ড্রেনেজ—এসব অভিযোজন প্রকল্পে কতটা অর্থ পাওয়া যাবে, তার আভাস মিলবে এখান থেকেই। পর্যবেক্ষকদের মতে, সম্মেলনের সফলতা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে এই প্রশ্নের ওপর—বড় কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আসলেই কি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পুঁজি তুলে নিয়ে যথেষ্ট মাত্রায় পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে বিনিয়োগ শুরু করেছে, নাকি শুধু ভাষণে অঙ্গীকার জুড়ে যাচ্ছে।