ডুকোভানি প্ল্যান্টে দুই নতুন রিঅ্যাক্টর
ইউরোপের অন্যতম বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চেক রিপাবলিক। দেশটির ডুকোভানি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুইটি নতুন রিঅ্যাক্টর নির্মাণে ১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা ধীরে ধীরে দেশের পারমাণবিক উৎপাদন অন্তত দ্বিগুণ করবে বলে কর্মকর্তারা আশা করছেন। প্রতিটি নতুন রিঅ্যাক্টরের সম্ভাব্য উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয়েছে এক হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি; পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ দিতে পারে। বর্তমানে ডুকোভানিতে ১৯৮০–এর দশকে নির্মিত চারটি রিঅ্যাক্টর রয়েছে; নতুন দুইটির পাশাপাশি ভবিষ্যতে অন্য প্ল্যান্ট তেমেলিনেও অতিরিক্ত ইউনিট যোগ করার অপশন রাখা হয়েছে।
চেক সরকারের মতে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ধীরে ধীরে বন্ধ করে জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা সামাল দেওয়ার জন্য পারমাণবিক শক্তির বিকল্প নেই। ডেটা সেন্টার, বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং নতুন শিল্পখাত একসঙ্গে গ্রিডের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে বলেই তাদের এই পরিকল্পনা। সরকারি প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন প্ল্যান্টে ৮০ শতাংশ শেয়ার থাকবে সরকারের হাতে; রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা বিদ্যুৎ কোম্পানি সিইজেড আন্তর্জাতিক ঋণ নিয়ে নির্মাণব্যয় বহন করবে এবং ৩০ বছরে সেটি পরিশোধ করবে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে এমন একটি চুক্তি মডেলের অনুমোদন চাইছে প্রাগ, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুতের দাম গ্যারান্টি থাকার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীল রিটার্ন নিশ্চিত পাবে।

ইউরোপের পারমাণবিক পুনর্জাগরণ ও বিতর্ক
চেক রিপাবলিকের এই পদক্ষেপকে অনেকেই পুরো মহাদেশজুড়ে পারমাণবিক শক্তির “ফিরে আসা”র অংশ হিসেবে দেখছেন। ফ্রান্স নতুন রিঅ্যাক্টর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, পোল্যান্ড প্রথমবারের মতো পারমাণবিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে, আবার বেলজিয়াম ও সুইডেন পূর্বের ধাপে ধাপে বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। সমর্থকেরা বলেন, বেসলোড কম–কার্বন বিদ্যুৎ সরবরাহে পারমাণবিক শক্তি এখনো গুরুত্বপূর্ণ; বাতাস ও সূর্যের মতো নবায়নযোগ্য উৎসের ঘাটতি যখন হয়, তখন এটাই ভরসা।
তবে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো খরচ, নির্মাণ বিলম্ব এবং দীর্ঘমেয়াদি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারা সতর্ক করে বলছে, দশকের পর দশক ধরে স্থির দাম গ্যারান্টি দিয়ে রাখা হলে ভবিষ্যতে প্রযুক্তি সস্তা হলে ভোক্তাদেরই অতিরিক্ত বিল গুনতে হতে পারে। প্রতিবেশী অস্ট্রিয়া শুরু থেকেই পারমাণবিক প্রকল্পের বিরোধী; তারা ডুকোভানি ও তেমেলিন প্ল্যান্ট ঘিরে নিরাপত্তা ও সীমান্ত–পার পরিবেশ ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছে। এর জবাবে চেক কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সর্বোচ্চ ইউরোপীয় মানদণ্ড মেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং রাশিয়া ছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে জ্বালানি সরবরাহ বৈচিত্র্যময় করা হয়েছে। ডুকোভানির চারপাশে যখন ভূতত্ত্ব যাচাইয়ের জন্য গভীর ছিদ্রকরণ চলছে, তখনই প্রকল্পটি হয়ে উঠেছে—জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু লক্ষ্য ও রাজনীতির ভারসাম্য খোঁজার এক বাস্তব পরীক্ষাগার।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















