০৭:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
লরা লুমারের গোপন ক্ষমতার নেটওয়ার্ক—হোয়াইট হাউস কাঁপছে এক ইনফ্লুয়েন্সারের হাতেও ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৯২০ চীন থেকে সরে যাচ্ছে মার্কিন কোম্পানিগুলো আবারও ভারতীয় কোম্পানি থেকে চাল আমদানি করবে বাংলাদেশ ন্যায্য সুযোগের সন্ধানে প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েটদের ২৫ দিনের মানবিক লড়াই পুতিনের ভারতের সফর সামনে রেখে ভারত–রাশিয়ার চুক্তি চূড়ান্তের প্রস্তুতি ২৪ ঘণ্টায় উদ্ধার ১০টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩০ কেজি গানপাউডার পুরান ঢাকায় তিনজন গ্রেপ্তার: বিদেশি পিস্তল, গুলি ও মাদক উদ্ধার পাকিস্তানে গিয়ে ধর্ম পাল্টে বিয়ে করে ‘নিখোঁজ’ ভারতীয় নারীকে খুঁজছে পুলিশ গাজীপুরে পাটের বস্তার ৫ গুদামে আগুন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে নীরব গান, নীরব প্রতিবাদ পল ম্যাককার্টনির

সাইলেন্ট ট্র্যাক দিয়ে কপিরাইট ও এআই ইস্যুতে বার্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কপিরাইট নিয়ে তর্ক যখন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, ঠিক তখনই এক অদ্ভুত পথে প্রতিবাদ জানালেন বিটলস কিংবদন্তি পল ম্যাককার্টনি। তিনি অংশ নিয়েছেন ইজ দিস হোয়াট উই ওয়ান্ট? নামের এক সঙ্গীত প্রকল্পে, যেখানে স্টুডিওর পরিবেশগত শব্দ কিংবা সম্পূর্ণ নীরবতা দিয়ে এআই প্রশিক্ষণে শিল্পীদের কাজ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করার বিরোধিতা দেখানো হচ্ছে। রোলিং স্টোনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যালবামের আসন্ন ভিনাইল সংস্করণের জন্য ম্যাককার্টনি যে “বোনাস ট্র্যাক” যোগ করেছেন, সেটি প্রায় পুরোটা সময়ই একেবারে নীরব—কোনো বাদ্যযন্ত্র, কণ্ঠ বা সুর নেই।

অ্যালবামের মূল ধারণা ছিল—যদি শিল্পীরা তাদের গান ব্যবহার করতে না দেন, তাহলে ভবিষ্যতের সঙ্গীত কেমন হতে পারে—তারই এক প্রতীকী ছবি তুলে ধরা। আগের রিলিজে যেখানে স্টুডিওর পটভূমি শব্দই প্রধান উপাদান ছিল, সেখানে ম্যাককার্টনির নতুন ট্র্যাক সেই ধারণাকে আরও দূর পর্যন্ত নিয়ে গেছে; একেবারে শব্দহীন কয়েক মিনিট যেন শিল্পীদের নীরব কণ্ঠস্বর হয়ে উঠে এসেছে। সংগঠকদের ব্যাখ্যায়, এটি মূলত সেই শূন্যতাকে দেখায়, যা তৈরি হবে যদি সৃজনশীল কাজকে বিনা মূল্যায়নে ও বিনা অনুমতিতে প্রযুক্তি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

শিল্পীদের আক্রোশ, নীতিনির্ধারকদের সামনে নতুন চাপ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেনারেটিভ এআই টুল ব্যবহার করে গায়কের কণ্ঠ, সুর ও স্টাইল প্রায় হুবহু নকল করা সহজ হয়ে গেছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাজারে বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো বিশাল সাউন্ড ডেটাসেট ব্যবহার করে মডেল তৈরি করছে, যেখানে পুরনো রেকর্ডিং থেকে শুরু করে সর্বশেষ পপ গান পর্যন্ত সবকিছুই প্রশিক্ষণ ডেটা হিসেবে কাজে লাগতে পারে। যুক্তরাজ্যে টেক্সট অ্যান্ড ডেটা মাইনিং–সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের আলোচনা শুরু হওয়ার পর সংগীতশিল্পী, রেকর্ড লেবেল ও স্বত্ব সংরক্ষণ সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—তাদের কাজ কি বিনা পারিশ্রমিকে ও বিনা নিয়ন্ত্রণে এআই মডেলের খাদ্য হয়ে যাবে?

ম্যাককার্টনি একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর মূল চিন্তা পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে। স্ট্রিমিং যুগে যেখানে গানের প্রতি প্লে থেকে আয় আগের তুলনায় কমে গেছে, সেখানে এআই যদি আরও ‘সস্তা বিকল্প’ তৈরি করে, তাহলে নতুন গীতিকার ও সুরকারদের বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি নিজের সম্মতি ছাড়াই কোনো শিল্পীর কণ্ঠ ক্লোন করে মৃত্যুর পর নতুন গান বানানো বা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা—এসব নিয়ে নৈতিক প্রশ্নও সামনে এসেছে। এ অবস্থায় নীরব গানটি একধরনের প্রশ্ন ছুড়ে দেয়—শিল্পীরা যদি কোনোদিন সিদ্ধান্ত নেন যে তারা আর এই খেলায় থাকতে চান না, তাহলে সঙ্গীত জগৎটা কেমন হবে?

বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ সৃজনশীল খাতে এআই ব্যবহারের সীমা নির্ধারণের লড়াইয়ের অংশ। হলিউডের চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতারা ইতিমধ্যে নিজেদের ডিজিটাল ডাবল নিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন, ভিজ্যুয়াল আর্টে ডেটাসেট নিয়ে মামলাও চলছে। সঙ্গীতে সীমারেখা টানা তুলনামূলক কঠিন, কারণ প্রেরণা ও নকলের পার্থক্য প্রায়ই ধূসর। তবু ম্যাককার্টনির মতো আইকনিক শিল্পীর স্পষ্ট অবস্থান নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে—শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, সৃষ্টিশীল শ্রমের মূল্য ও সম্মতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

শ্রোতাদের কাছে হয়তো নীরব গান কেনার বিষয়টি প্রথমে কৌতুকের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু সমর্থকদের মতে, আসল বিষয় হলো—এই “নীরবতা” মানুষকে কী ভাবতে বাধ্য করছে। প্রিয় গানগুলো যারা লেখেন, সুর করেন ও গেয়ে তোলেন, তারা যদি আর বিশ্বাস না পান যে নিজের কাজের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তাহলে ভবিষ্যতে কোন সাহসে নতুন শিল্পী এই পেশায় আসবেন? ম্যাককার্টনির এই নিরব ট্র্যাক তাই কেবল একটি শিল্পকর্ম নয়; এটি এক ধরনের সতর্কতাও—যদি সঙ্গীত জগতের নিয়ম পুরোপুরি প্রযুক্তি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো একদিন আমরা কণ্ঠস্বর হারিয়ে শুধু নীরবতা নিয়েই পড়ে থাকব।

জনপ্রিয় সংবাদ

লরা লুমারের গোপন ক্ষমতার নেটওয়ার্ক—হোয়াইট হাউস কাঁপছে এক ইনফ্লুয়েন্সারের হাতেও

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে নীরব গান, নীরব প্রতিবাদ পল ম্যাককার্টনির

০৪:৩৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

সাইলেন্ট ট্র্যাক দিয়ে কপিরাইট ও এআই ইস্যুতে বার্তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কপিরাইট নিয়ে তর্ক যখন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, ঠিক তখনই এক অদ্ভুত পথে প্রতিবাদ জানালেন বিটলস কিংবদন্তি পল ম্যাককার্টনি। তিনি অংশ নিয়েছেন ইজ দিস হোয়াট উই ওয়ান্ট? নামের এক সঙ্গীত প্রকল্পে, যেখানে স্টুডিওর পরিবেশগত শব্দ কিংবা সম্পূর্ণ নীরবতা দিয়ে এআই প্রশিক্ষণে শিল্পীদের কাজ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করার বিরোধিতা দেখানো হচ্ছে। রোলিং স্টোনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যালবামের আসন্ন ভিনাইল সংস্করণের জন্য ম্যাককার্টনি যে “বোনাস ট্র্যাক” যোগ করেছেন, সেটি প্রায় পুরোটা সময়ই একেবারে নীরব—কোনো বাদ্যযন্ত্র, কণ্ঠ বা সুর নেই।

অ্যালবামের মূল ধারণা ছিল—যদি শিল্পীরা তাদের গান ব্যবহার করতে না দেন, তাহলে ভবিষ্যতের সঙ্গীত কেমন হতে পারে—তারই এক প্রতীকী ছবি তুলে ধরা। আগের রিলিজে যেখানে স্টুডিওর পটভূমি শব্দই প্রধান উপাদান ছিল, সেখানে ম্যাককার্টনির নতুন ট্র্যাক সেই ধারণাকে আরও দূর পর্যন্ত নিয়ে গেছে; একেবারে শব্দহীন কয়েক মিনিট যেন শিল্পীদের নীরব কণ্ঠস্বর হয়ে উঠে এসেছে। সংগঠকদের ব্যাখ্যায়, এটি মূলত সেই শূন্যতাকে দেখায়, যা তৈরি হবে যদি সৃজনশীল কাজকে বিনা মূল্যায়নে ও বিনা অনুমতিতে প্রযুক্তি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

শিল্পীদের আক্রোশ, নীতিনির্ধারকদের সামনে নতুন চাপ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেনারেটিভ এআই টুল ব্যবহার করে গায়কের কণ্ঠ, সুর ও স্টাইল প্রায় হুবহু নকল করা সহজ হয়ে গেছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাজারে বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো বিশাল সাউন্ড ডেটাসেট ব্যবহার করে মডেল তৈরি করছে, যেখানে পুরনো রেকর্ডিং থেকে শুরু করে সর্বশেষ পপ গান পর্যন্ত সবকিছুই প্রশিক্ষণ ডেটা হিসেবে কাজে লাগতে পারে। যুক্তরাজ্যে টেক্সট অ্যান্ড ডেটা মাইনিং–সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের আলোচনা শুরু হওয়ার পর সংগীতশিল্পী, রেকর্ড লেবেল ও স্বত্ব সংরক্ষণ সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—তাদের কাজ কি বিনা পারিশ্রমিকে ও বিনা নিয়ন্ত্রণে এআই মডেলের খাদ্য হয়ে যাবে?

ম্যাককার্টনি একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তাঁর মূল চিন্তা পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের নিয়ে। স্ট্রিমিং যুগে যেখানে গানের প্রতি প্লে থেকে আয় আগের তুলনায় কমে গেছে, সেখানে এআই যদি আরও ‘সস্তা বিকল্প’ তৈরি করে, তাহলে নতুন গীতিকার ও সুরকারদের বেঁচে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি নিজের সম্মতি ছাড়াই কোনো শিল্পীর কণ্ঠ ক্লোন করে মৃত্যুর পর নতুন গান বানানো বা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা—এসব নিয়ে নৈতিক প্রশ্নও সামনে এসেছে। এ অবস্থায় নীরব গানটি একধরনের প্রশ্ন ছুড়ে দেয়—শিল্পীরা যদি কোনোদিন সিদ্ধান্ত নেন যে তারা আর এই খেলায় থাকতে চান না, তাহলে সঙ্গীত জগৎটা কেমন হবে?

বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ সৃজনশীল খাতে এআই ব্যবহারের সীমা নির্ধারণের লড়াইয়ের অংশ। হলিউডের চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতারা ইতিমধ্যে নিজেদের ডিজিটাল ডাবল নিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন, ভিজ্যুয়াল আর্টে ডেটাসেট নিয়ে মামলাও চলছে। সঙ্গীতে সীমারেখা টানা তুলনামূলক কঠিন, কারণ প্রেরণা ও নকলের পার্থক্য প্রায়ই ধূসর। তবু ম্যাককার্টনির মতো আইকনিক শিল্পীর স্পষ্ট অবস্থান নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে—শুধু প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, সৃষ্টিশীল শ্রমের মূল্য ও সম্মতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

শ্রোতাদের কাছে হয়তো নীরব গান কেনার বিষয়টি প্রথমে কৌতুকের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু সমর্থকদের মতে, আসল বিষয় হলো—এই “নীরবতা” মানুষকে কী ভাবতে বাধ্য করছে। প্রিয় গানগুলো যারা লেখেন, সুর করেন ও গেয়ে তোলেন, তারা যদি আর বিশ্বাস না পান যে নিজের কাজের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তাহলে ভবিষ্যতে কোন সাহসে নতুন শিল্পী এই পেশায় আসবেন? ম্যাককার্টনির এই নিরব ট্র্যাক তাই কেবল একটি শিল্পকর্ম নয়; এটি এক ধরনের সতর্কতাও—যদি সঙ্গীত জগতের নিয়ম পুরোপুরি প্রযুক্তি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো একদিন আমরা কণ্ঠস্বর হারিয়ে শুধু নীরবতা নিয়েই পড়ে থাকব।