০৭:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
বিশ্বজুড়ে তীব্র ক্ষুধা সংকটের সতর্কতা, তহবিল ঘাটতিতে বিপদে ডব্লিউএফপি” লরা লুমারের গোপন ক্ষমতার নেটওয়ার্ক—হোয়াইট হাউস কাঁপছে এক ইনফ্লুয়েন্সারের হাতেও ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৯২০ চীন থেকে সরে যাচ্ছে মার্কিন কোম্পানিগুলো আবারও ভারতীয় কোম্পানি থেকে চাল আমদানি করবে বাংলাদেশ ন্যায্য সুযোগের সন্ধানে প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েটদের ২৫ দিনের মানবিক লড়াই পুতিনের ভারতের সফর সামনে রেখে ভারত–রাশিয়ার চুক্তি চূড়ান্তের প্রস্তুতি ২৪ ঘণ্টায় উদ্ধার ১০টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩০ কেজি গানপাউডার পুরান ঢাকায় তিনজন গ্রেপ্তার: বিদেশি পিস্তল, গুলি ও মাদক উদ্ধার পাকিস্তানে গিয়ে ধর্ম পাল্টে বিয়ে করে ‘নিখোঁজ’ ভারতীয় নারীকে খুঁজছে পুলিশ

পাকিস্তানে গিয়ে ধর্ম পাল্টে বিয়ে করে ‘নিখোঁজ’ ভারতীয় নারীকে খুঁজছে পুলিশ

নাসির হুসেন ও সবরজিৎ কৌর

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে এক ভারতীয় নারীর খোঁজ করছে পুলিশ। তার ভিসার মেয়াদ ১৩ই নভেম্বর শেষ হয়ে গেলেও ভারতে ফেরেননি তিনি।

শিখ তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ওই নারী এবং সেখানে পৌঁছে এক পাকিস্তানি নাগরিককে তিনি বিয়ে করেন বলে অভিযোগ। দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরকে চিনতেন এই যুগল।

পাকিস্তানের শেখপুরা জেলার পুলিশ কর্মকর্তা বিলাল জাফর শেখ জানিয়েছেন, বছর ৪৮-এর ওই শিখ নারীর নাম সরবজিৎ কৌর। তিনি পাকিস্তানের নাগরিক নাসির হুসেনকে বিয়ে করেছেন।

এরপরই তারা দু’জনেই আত্মগোপন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরই সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া সম্ভব।

জানা গেছে, সরবজিৎ কৌর অন্যান্য শিখ তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে গত চৌঠা নভেম্বর পাকিস্তানে পৌঁছান। পরের দিন গুরু নানক জয়ন্তী উপলক্ষে তাদের সঙ্গেই পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে নানকানা সাহিব যাওয়ার কথা ছিল। এটি শিখ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থল।

এদিকে, সাতই নভেম্বর তিনি শেখপুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজের বক্তব্য নথিভুক্ত করান। সেখানে ওই নারী উল্লেখ করেন যে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং নাসির হুসেন নামে এক পাকিস্তানি নাগরিককে বিয়েও করেছেন। পাশাপাশি তিনি স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং বিয়ের সিদ্ধান্তও তারই।

তাদের আইনজীবী আহমেদ হাসান পাশা জানিয়েছেন, শেখপুরা ইউনিয়ন কাউন্সিলে তার বিয়ের বিষয়টি নিবন্ধিত করানো হয়েছে।

ওই আইনজীবী আরো জানান, সরবজিৎ কৌর এবং নাসির হুসেনের পরিচয় হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। সম্প্রতি তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

সবরজিৎ কৌর

সবরজিৎ কৌর একটি তীর্থযাত্রী দলের সঙ্গে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন

ইসলাম গ্রহণ করে বিয়ে

আইনজীবী আহমেদ হাসান পাশা বলেছেন, গত ১৫ই নভেম্বর তিনি “দুজনকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন যাতে তারা (সবরজিৎ কৌর ও নাশীর হুসেন) দুই দেশের (ভারত ও পাকিস্তান) কর্মকর্তাদের সামনে নিজেদের বক্তব্য নথিভুক্ত করাতে পারেন”।

“কিন্তু তারা ওই নির্ধারিত দিনে আসেননি। এখন নাসির হুসেনের মোবাইল ফোনও সুইচ অফ করা আছে”।

এই আইনজীবী জানিয়েছেন, তার ধারণা ওই যুগল “তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন”।

পাশাপাশি মি. পাশা জানিয়েছেন সরবজিৎ কৌরের ভিসার মেয়াদ এখনো বাড়ানো হয়নি। এই বিষয়ে তিনি লাহোর হাইকোর্টে একটি পিটিশনও দায়ের করেছেন। সোমবার এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাকিস্তানের শেখপুরা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সরবজিৎ কৌর ও নাসির হুসেনের খোঁজে ফারুখাবাদে পুলিশের একটি দল পাঠানো হলেও তাদের খোঁজ মেলেনি। মি. হুসেনের বাড়ি তালা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নাসির হুসেন এবং তার পরিবার কোথায় আছেন তা এখনো জানা যায়নি বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শেখপুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ খালিদ মাহমুদ ওয়ারাইচের এজলাসে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী সরবজিৎ কৌর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তার নামকরণ করা হয়েছে ‘নূর’।

গত পাঁচই নভেম্বর ইসলাম গ্রহণ সংক্রান্ত একটি প্রমাণপত্র জারি করা হয়েছিল। আদালতে জমা দেওয়া বিয়ের নথি অনুযায়ী নাসির হুসেনের বয়স ৪৩ বছর। সেখান দেনমোহরের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ রয়েছে।

পাশাপাশি সেখানে বলা হয়েছে মি. হুসেন ইতোমধ্যে বিবাহিত। দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তার অনুমতির প্রয়োজন নেই।

কাপুরথালা পুলিশের এএসপি ধীরেন্দ্র ভার্মা
কাপুরথালা পুলিশের এএসপি ধীরেন্দ্র ভার্মা

‘আমরা একে অপরকে নয় বছর ধরে চিনি’

সরবজিৎ কৌর ভারতের পাঞ্জাবের কাপুরথালা জেলার বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে সেখানেও এই মামলার তদন্ত চলছে। বার্তা সংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সবরজিৎ কৌর প্রায় দুই হাজার শিখ তীর্থযাত্রীর রয়েছেন- এমন একটি দলের অংশ ছিলেন।

ভারত থেকে আসা ওই দলের সব তীর্থযাত্রী ১০ দিনের যাত্রা শেষ করে গত ১৩ই নভেম্বর ভারতে ফিরে এলেও সরবজিৎ কৌর কিন্তু তাদের সঙ্গে ছিলেন না। তিনি ভারতে ফেরেননি।

কাপুরথালা পুলিশের এএসপি (অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ সুপার) ধীরেন্দ্র ভার্মা জানিয়েছেন, সরবজিৎ কৌরের ধর্মান্তরের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি জানিয়েছেন গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে একটি পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছিল।

সবরজিৎ কৌরের বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরবজিৎ কৌরের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। যে ব্যক্তির সঙ্গে তার এর আগে বিয়ে হয়েছিল, তিনি গত তিন দশক ধরে তিন দশক ধরে ইংল্যান্ডে বাস করেন। তাদের দু’জন ছেলে সন্তানও রয়েছে।

ভারতের পাঞ্জাবে কাপুরথালা জেলার তালওয়ান্দি চৌধুরীয়ান গ্রামের এসএইচও (স্টেশান হাউজ অফিসার) নির্মল সিং জানিয়েছেন, গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের কাছ থেকে এই বিষয়ে খবর পেয়েছেন তারা। তবে মি. সিং উল্লেখ করেছেন পুলিশ এখনো সরবজিৎ কৌরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।

এদিকে, আইনজীবী আহমেদ হাসান পাশা বিবিসিকে একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। সেখানে যেখানে সরবজিৎ কৌরকে বলতে শোনা যায় যে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। নিজের ইচ্ছায় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং নাসির হুসেনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। গত নয় বছর ধরে তিনি নাসির হুসেনকে চেনেন।

আইনজীবী আহমেদ হাসান পাশা জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ইনস্টাগ্রাম’ মারফত তারা কথা বলতেন। ছয় মাস আগে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন সবরজিৎ কৌর এবং নাসির হুসেন।

পাকিস্তানের একটি পতাকা একটি খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ঝুলে আছে- প্রতীকী ছবি

পাকিস্তানের পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন সবরজিৎ কৌর- প্রতীকী ছবি

পাকিস্তানি পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ

হুমকি দেওয়া ও মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগে পাকিস্তান পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শেখপুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দায়ের করা মামলায় সরবজিৎ কৌর জানিয়েছেন, নিজের ইচ্ছায় নাসির হুসেনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, “কেউ আমাকে অপহরণ করেনি, আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমি আমার বাবা-মায়ের বাড়ি থেকে মাত্র তিনটি জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলাম। আমার কাছে অন্য কিছুই ছিল না”।

“আমার বিয়ে নিয়ে পুলিশ খুবই ক্ষুব্ধ। পাঁচই নভেম্বর রাত নয়টা নাগাদ পুলিশ অফিসাররা জোর করে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তারা আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন, কিন্তু আমি অস্বীকার করায় তারা রেগে যান”।

এই ভারতীয় নারী তাকে এবং তার স্বামীকে পুলিশি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে অনুরোধ করেছিলেন।

অন্যদিকে শেখপুরা পুলিশের মুখপাত্র রাণা ইউনুস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মি. ইউনুস বিবিসি উর্দুকে জানিয়েছেন, পুলিশ কোনো ভারতীয় নারী বা তার পাকিস্তানি স্বামীকে হয়রানি করেনি।

তিনি বলেন, “এই বিষয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই এবং পুলিশের সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্কও নেই”।

পাহাপাশি তিনি বিষয়টিকে সংবেদনশীল বলে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, এই নিয়ে একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে।

রাণা ইউনুসের কথায়, “যেহেতু বিষয়টি সংবেদনশীল, তাই একাধিক সংস্থা এটি খতিয়ে দেখছে। পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

বিবিসি উর্দু, ইসলামাবাদ

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বজুড়ে তীব্র ক্ষুধা সংকটের সতর্কতা, তহবিল ঘাটতিতে বিপদে ডব্লিউএফপি”

পাকিস্তানে গিয়ে ধর্ম পাল্টে বিয়ে করে ‘নিখোঁজ’ ভারতীয় নারীকে খুঁজছে পুলিশ

০৫:২৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে এক ভারতীয় নারীর খোঁজ করছে পুলিশ। তার ভিসার মেয়াদ ১৩ই নভেম্বর শেষ হয়ে গেলেও ভারতে ফেরেননি তিনি।

শিখ তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ওই নারী এবং সেখানে পৌঁছে এক পাকিস্তানি নাগরিককে তিনি বিয়ে করেন বলে অভিযোগ। দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরকে চিনতেন এই যুগল।

পাকিস্তানের শেখপুরা জেলার পুলিশ কর্মকর্তা বিলাল জাফর শেখ জানিয়েছেন, বছর ৪৮-এর ওই শিখ নারীর নাম সরবজিৎ কৌর। তিনি পাকিস্তানের নাগরিক নাসির হুসেনকে বিয়ে করেছেন।

এরপরই তারা দু’জনেই আত্মগোপন করেন বলে অভিযোগ উঠেছে এবং পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পরই সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া সম্ভব।

জানা গেছে, সরবজিৎ কৌর অন্যান্য শিখ তীর্থযাত্রীদের সঙ্গে গত চৌঠা নভেম্বর পাকিস্তানে পৌঁছান। পরের দিন গুরু নানক জয়ন্তী উপলক্ষে তাদের সঙ্গেই পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে নানকানা সাহিব যাওয়ার কথা ছিল। এটি শিখ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থল।

এদিকে, সাতই নভেম্বর তিনি শেখপুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিজের বক্তব্য নথিভুক্ত করান। সেখানে ওই নারী উল্লেখ করেন যে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং নাসির হুসেন নামে এক পাকিস্তানি নাগরিককে বিয়েও করেছেন। পাশাপাশি তিনি স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং বিয়ের সিদ্ধান্তও তারই।

তাদের আইনজীবী আহমেদ হাসান পাশা জানিয়েছেন, শেখপুরা ইউনিয়ন কাউন্সিলে তার বিয়ের বিষয়টি নিবন্ধিত করানো হয়েছে।

ওই আইনজীবী আরো জানান, সরবজিৎ কৌর এবং নাসির হুসেনের পরিচয় হয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। সম্প্রতি তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

সবরজিৎ কৌর

সবরজিৎ কৌর একটি তীর্থযাত্রী দলের সঙ্গে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন

ইসলাম গ্রহণ করে বিয়ে

আইনজীবী আহমেদ হাসান পাশা বলেছেন, গত ১৫ই নভেম্বর তিনি “দুজনকে নিজের চেম্বারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন যাতে তারা (সবরজিৎ কৌর ও নাশীর হুসেন) দুই দেশের (ভারত ও পাকিস্তান) কর্মকর্তাদের সামনে নিজেদের বক্তব্য নথিভুক্ত করাতে পারেন”।

“কিন্তু তারা ওই নির্ধারিত দিনে আসেননি। এখন নাসির হুসেনের মোবাইল ফোনও সুইচ অফ করা আছে”।

এই আইনজীবী জানিয়েছেন, তার ধারণা ওই যুগল “তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন”।

পাশাপাশি মি. পাশা জানিয়েছেন সরবজিৎ কৌরের ভিসার মেয়াদ এখনো বাড়ানো হয়নি। এই বিষয়ে তিনি লাহোর হাইকোর্টে একটি পিটিশনও দায়ের করেছেন। সোমবার এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাকিস্তানের শেখপুরা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সরবজিৎ কৌর ও নাসির হুসেনের খোঁজে ফারুখাবাদে পুলিশের একটি দল পাঠানো হলেও তাদের খোঁজ মেলেনি। মি. হুসেনের বাড়ি তালা বন্ধ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নাসির হুসেন এবং তার পরিবার কোথায় আছেন তা এখনো জানা যায়নি বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শেখপুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ খালিদ মাহমুদ ওয়ারাইচের এজলাসে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী সরবজিৎ কৌর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তার নামকরণ করা হয়েছে ‘নূর’।

গত পাঁচই নভেম্বর ইসলাম গ্রহণ সংক্রান্ত একটি প্রমাণপত্র জারি করা হয়েছিল। আদালতে জমা দেওয়া বিয়ের নথি অনুযায়ী নাসির হুসেনের বয়স ৪৩ বছর। সেখান দেনমোহরের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ রয়েছে।

পাশাপাশি সেখানে বলা হয়েছে মি. হুসেন ইতোমধ্যে বিবাহিত। দ্বিতীয় বিয়ের জন্য তার অনুমতির প্রয়োজন নেই।

কাপুরথালা পুলিশের এএসপি ধীরেন্দ্র ভার্মা
কাপুরথালা পুলিশের এএসপি ধীরেন্দ্র ভার্মা

‘আমরা একে অপরকে নয় বছর ধরে চিনি’

সরবজিৎ কৌর ভারতের পাঞ্জাবের কাপুরথালা জেলার বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে সেখানেও এই মামলার তদন্ত চলছে। বার্তা সংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সবরজিৎ কৌর প্রায় দুই হাজার শিখ তীর্থযাত্রীর রয়েছেন- এমন একটি দলের অংশ ছিলেন।

ভারত থেকে আসা ওই দলের সব তীর্থযাত্রী ১০ দিনের যাত্রা শেষ করে গত ১৩ই নভেম্বর ভারতে ফিরে এলেও সরবজিৎ কৌর কিন্তু তাদের সঙ্গে ছিলেন না। তিনি ভারতে ফেরেননি।

কাপুরথালা পুলিশের এএসপি (অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ সুপার) ধীরেন্দ্র ভার্মা জানিয়েছেন, সরবজিৎ কৌরের ধর্মান্তরের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি জানিয়েছেন গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে একটি পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছিল।

সবরজিৎ কৌরের বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেসব প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরবজিৎ কৌরের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। যে ব্যক্তির সঙ্গে তার এর আগে বিয়ে হয়েছিল, তিনি গত তিন দশক ধরে তিন দশক ধরে ইংল্যান্ডে বাস করেন। তাদের দু’জন ছেলে সন্তানও রয়েছে।

ভারতের পাঞ্জাবে কাপুরথালা জেলার তালওয়ান্দি চৌধুরীয়ান গ্রামের এসএইচও (স্টেশান হাউজ অফিসার) নির্মল সিং জানিয়েছেন, গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের কাছ থেকে এই বিষয়ে খবর পেয়েছেন তারা। তবে মি. সিং উল্লেখ করেছেন পুলিশ এখনো সরবজিৎ কৌরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি।

এদিকে, আইনজীবী আহমেদ হাসান পাশা বিবিসিকে একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন। সেখানে যেখানে সরবজিৎ কৌরকে বলতে শোনা যায় যে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। নিজের ইচ্ছায় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং নাসির হুসেনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। গত নয় বছর ধরে তিনি নাসির হুসেনকে চেনেন।

আইনজীবী আহমেদ হাসান পাশা জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ইনস্টাগ্রাম’ মারফত তারা কথা বলতেন। ছয় মাস আগে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন সবরজিৎ কৌর এবং নাসির হুসেন।

পাকিস্তানের একটি পতাকা একটি খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ঝুলে আছে- প্রতীকী ছবি

পাকিস্তানের পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন সবরজিৎ কৌর- প্রতীকী ছবি

পাকিস্তানি পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ

হুমকি দেওয়া ও মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগে পাকিস্তান পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শেখপুরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দায়ের করা মামলায় সরবজিৎ কৌর জানিয়েছেন, নিজের ইচ্ছায় নাসির হুসেনকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, “কেউ আমাকে অপহরণ করেনি, আমি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমি আমার বাবা-মায়ের বাড়ি থেকে মাত্র তিনটি জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলাম। আমার কাছে অন্য কিছুই ছিল না”।

“আমার বিয়ে নিয়ে পুলিশ খুবই ক্ষুব্ধ। পাঁচই নভেম্বর রাত নয়টা নাগাদ পুলিশ অফিসাররা জোর করে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তারা আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলেন, কিন্তু আমি অস্বীকার করায় তারা রেগে যান”।

এই ভারতীয় নারী তাকে এবং তার স্বামীকে পুলিশি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে অনুরোধ করেছিলেন।

অন্যদিকে শেখপুরা পুলিশের মুখপাত্র রাণা ইউনুস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মি. ইউনুস বিবিসি উর্দুকে জানিয়েছেন, পুলিশ কোনো ভারতীয় নারী বা তার পাকিস্তানি স্বামীকে হয়রানি করেনি।

তিনি বলেন, “এই বিষয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই এবং পুলিশের সঙ্গে এই ঘটনার কোনো সম্পর্কও নেই”।

পাহাপাশি তিনি বিষয়টিকে সংবেদনশীল বলে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, এই নিয়ে একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে।

রাণা ইউনুসের কথায়, “যেহেতু বিষয়টি সংবেদনশীল, তাই একাধিক সংস্থা এটি খতিয়ে দেখছে। পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

বিবিসি উর্দু, ইসলামাবাদ