একজন নিষিদ্ধ ইনফ্লুয়েন্সার কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট দিয়ে প্রশাসনের ভেতর-বাইরে চাকরি, নীতি ও ক্ষমতার সমীকরণ বদলে দিচ্ছেন—লরা লুমারের উত্থান, বিতর্ক ও অদৃশ্য প্রভাবের সম্পূর্ণ চিত্র।
লরা লুমার—একসময় কেবলমাত্র কট্টর কনস্পিরেসি তত্ত্ব ছড়ানো এক অনলাইন কর্মী—আজ শ্বেতগৃহের সিদ্ধান্ত ও নেপথ্যের ক্ষমতার বলয়ে আলোড়ন তোলা এক বিতর্কিত প্রভাবক। কোনো সরকারি পদ না থাকলেও, তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট অনেক সময় প্রশাসনের লোকছাঁটাই, নীতি বদল, কিংবা কূটনৈতিক সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ উঠেছে।
লুমারের আত্মবর্ণনা ও শুরুর দিন
তিনি নিজেকে মনে করেন ‘ক্যাসান্দ্রা’—ভবিষ্যদ্বাণী করেন, কিন্তু কেউ শোনে না। কংগ্রেসে বিঘ্ন ঘটানোর পর পোশাক ছিঁড়ে ক্যাপিটলের বাথরুমে তার কান্নার ছবি অনেকের মনে আছে। বেশিরভাগ সামাজিক মাধ্যম থেকে তাকে নিষিদ্ধ করা হলেও তিনি বুলহর্ন হাতে, ষড়যন্ত্রের অভিযোগে, রাস্তায় রাস্তায় নিজের বার্তা ছড়াতে ব্যস্ত ছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুদ্ধক্ষেত্র
দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা অনলাইনে থাকেন। অভিযোগ, অপবাদ, হুমকি—সব মিলিয়ে তার পোস্ট প্রায়ই বহু মানুষের নজরে আসে। “স্ক্যাল্প” শব্দটি দিয়ে তিনি বোঝান—কারো বরখাস্ত, কারো পদচ্যুতি বা কোনো নীতি বাতিল করতে তার ভূমিকা ছিল।
হোয়াইট হাউসে প্রবেশ—অঘোষিত সম্পর্ক
অফিশিয়ালি কোনো পদ নেই, কিন্তু তাকে শ্বেতগৃহে “যাওয়া-আসা করতে দেওয়া হয়”। রিপোর্টে বলা হয়, তার টুইটের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ সেনেট ব্রিফিং বাতিল হয়। ট্রাম্পও নাকি বলেন—“তুমি শক্তিশালী, কিন্তু কঠিন।”

ক্ষমতার উপর সরাসরি প্রভাব
রিপোর্টে বলা হয়—লুমারের অভিযোগের পর সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। একজন সহকারী অ্যাটর্নি তার বিরুদ্ধে পোস্টের এক ঘণ্টা পর পদচ্যুত হন। একজন এফডিএ বিজ্ঞানীও সামাজিক চাপ ও আক্রমণের মুখে পদত্যাগ করেন।
অর্থায়ন, লবিং ও নৈতিক প্রশ্ন
লুমারের কাজ কতটা স্বতঃস্ফূর্ত? নাকি বড় কর্পোরেট, লবি গ্রুপ বা রাজনৈতিক পক্ষ তার পোস্টকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে? কিছু সূত্র বলছে—তার পোস্টগুলো অনেক সময় নির্দিষ্ট স্বার্থগোষ্ঠীর সুবিধা করে দেয়।
‘পোস্টারস ইন কন্ট্রোল’—নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা
আজকাল অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের পোস্টই অনেক সময় নীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। ডিজিটাল প্রেসার গ্রুপগুলো প্রশাসনের সিদ্ধান্তে দ্রুত প্রভাব ফেলে। লুমার এই নতুন বাস্তবতার এক চরম উদাহরণ।
ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড, আয় ও বিতর্ক
‘Loomered Strategies’, রাম্বলে শো, দাতা অনুদান—সব মিলিয়ে তার নিজস্ব অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যও গড়ে উঠেছে। ষড়যন্ত্রমুখী ভিডিও, স্টান্ট এবং রাজনৈতিক আক্রমণ তার পরিচয়ের অংশ।
সমালোচনা, আশঙ্কা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
ডিসির অনেকেই তাকে “ব্যবহারযোগ্য কিন্তু সহজেই ত্যাগ্য” মনে করেন। ক্ষমতার সমীকরণ বদলে গেলে তিনিও সহজেই ছিটকে যেতে পারেন। আবার তার আক্রমণাত্মক স্টাইল কখনো “ফ্রেন্ডলি ফায়ার”—নিজের দলের লোকের ক্ষতিও করছে।
লরা লুমার শুধু একজন অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সার নন—তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড, স্টান্ট, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট এবং রাজনৈতিক তীব্রতা একত্রে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তকেও ছুঁয়ে যেতে পারে। স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে এই ধরণের শক্তি গণতন্ত্রের জন্য কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















