বৈষম্যহীন কর্মসংস্থান ও ন্যায্য সুযোগের মানবিক দাবি সামনে রেখে প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েটরা টানা ২৫ দিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়েছেন। স্মারকলিপি থেকে অনশন, পদযাত্রা থেকে রাতভর অবস্থান—প্রতিটি কর্মসূচিই ছিল জীবিকার অধিকারের জন্য এক হৃদয়ের আহ্বান। আলোচনায় আংশিক অগ্রগতি হলেও তারা বলছেন, বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলন পুনরায় তীব্র হবে।
প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েটদের বৈষম্যহীন কর্মসংস্থান ও ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করতে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে একটি ধারাবাহিক আন্দোলন পরিচালনা করেছে চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েট পরিষদ। বারবার স্মারকলিপি ও আলোচনার পরও প্রয়োজনীয় সাড়া না পাওয়ায় আন্দোলন ধাপে ধাপে বিস্তৃত হয়। নিচে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, কর্মসূচি, আলোচনা-অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ কৌশল সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
১৯ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২৫ দিন রাজধানীতে প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানে বৈষম্য, দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত অবহেলা ও ন্যায্য সুযোগের অভাবের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালায় পরিষদ। বহুবার স্মারকলিপি ও আলোচনার উদ্যোগ নেওা হলেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় আন্দোলনের মাত্রা বাড়তে থাকে।
২৫ দিনের আন্দোলনের প্রধান কর্মসূচি
- • ২৪ ঘণ্টা পর্যায়ক্রমিক অবস্থান ধর্মঘট
- • আমরণ অনশন (৫ জন সদস্য টানা ৮ দিন অনশন করেন)
- • প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে একাধিক পদযাত্রা, যেখানে প্রতিবারই পুলিশের কঠোর ব্যারিকেডের মুখোমুখি হতে হয়
- • ভূখা মিছিল
- • জাতিসংঘ মিশন অভিমুখে প্রতীকী পদযাত্রা
- • সমাজসেবা অধিদপ্তর ঘেরাও ও ব্লকেড
- • সার্টিফিকেট পোড়ানো
- • সুবর্ণ আইডি কার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতীকী প্রতিবাদ
- • বৈষম্যমূলক কর্মসংস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
- • রাতব্যাপী অবস্থান ও ধারাবাহিক মাঠ-পর্যবেক্ষণ
সব কর্মসূচিই ছিল শান্তিপূর্ণ, মানবিক, এবং ন্যায্য সুযোগের দাবিকে সামনে রেখে সংগঠিত।
১২ ও ১৬ নভেম্বর বৈঠকের অগ্রগতি
১২ নভেম্বর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করা হলে দুটি দাবিতে ইতিবাচক আশ্বাস দেওয়া হয়। বাকি দাবিগুলো নীতিমালা সংশোধন ও আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন সাময়িক স্থগিত রাখা হয় এবং অনশন ভাঙানো হয়।
১৬ নভেম্বর সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে ফলো-আপ মিটিংয়ে কর্মসংস্থান সংকট, কাঠামোগত সমস্যা ও নিয়োগ-অব্যবস্থাপনা সমাধানের লক্ষ্যে ৭ সদস্যের একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। পরিষদ আশা করে কমিটি দ্রুত কার্যকর সুপারিশ দেবে এবং প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের জন্য তাৎক্ষণিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কৌশল
আন্দোলন সাময়িক স্থগিত থাকলেও পরিষদ এখন দাবি বাস্তবায়নে টেবিল আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। ৭ সদস্যের কমিটির অগ্রগতি নিয়মিতভাবে নজরদারিতে রাখা হবে। প্রয়োজন অনুসারে সচেতনতামূলক ও নীতিগত কর্মসূচি চলমান থাকবে।
যদি কমিটি ফলপ্রসূ সুপারিশ বা বাস্তবায়ন দিতে ব্যর্থ হয়, পরিষদ যেকোনো সময় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
পরিষদের পাঁচ দফা দাবি
১. প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্থায়ী বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা প্রণয়ন করা, যেখানে প্রতি দুই বছর অন্তর উপযোগী পদ চিহ্নিত করে বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৩. বিদ্যমান অভিন্ন জাতীয় শ্রুতিলেখক নীতিমালা সংশোধন করা।
৪. সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠদান সম্পর্কিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা কার্যক্রম ও পিএইচটি সেন্টারের শূন্য পদ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য সংরক্ষণ করে নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
৫. সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবেদনযোগ্য বয়সসীমা ৩৫ বছর করা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

























