টিকটক–লাটে থেকে কাঁচা পাতার সংকট
হঠাৎ করেই সব জায়গায় সবুজ—ক্যাফের লাটে, বেকারি পেস্ট্রি, এমনকি সিরিয়াল আর প্রোটিন বারে এখন ম্যাচার নাম ঝকঝকে অক্ষরে লেখা। অথচ এই ট্রেন্ডি পানীয়ের পেছনে যে সূক্ষ্মভাবে প্রক্রিয়াজাত চা–পাতা, সেই আসল ম্যাচাই আজ চাপে। জাপানের কিয়োতোসহ ঐতিহ্যবাহী উৎপাদন অঞ্চলের কৃষকেরা বলছেন, উচ্চমানের টেনচা পাতার দাম গত এক বছরে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। টেনচা মূলত ছায়ায় বড় করা কোমল পাতা, যেগুলো ধীরে ধীরে পাথরের চাতালে গুঁড়া হয়ে তৈরি হয় আসল ম্যাচা। চাহিদা এত দ্রুত বেড়েছে যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য দেশে অনেক নতুন কৃষক বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন; অনেককে দেখা যাচ্ছে শুধু সাধারণ সবুজ গুঁড়া উৎপাদন করেও সেটিকে ম্যাচা হিসেবে বিক্রি করতে।
ফলাফল, মানের দিক থেকে বড় ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। চা–বিশেষজ্ঞদের অনেকে সতর্ক করছেন, এখন বিদেশি বাজারে যে ম্যাচা নামে বিক্রি হচ্ছে, তার বড় অংশই আসলে সাধারণ গ্রিন টি গুঁড়া, যেখানে কখনো কখনো চিনি, দুধের গুঁড়া বা কৃত্রিম স্বাদ মেশানো থাকে। আবার “সেরেমনিয়াল” বা “প্রিমিয়াম”–এর মতো শব্দও প্রায়ই কোনো মানদণ্ড ছাড়াই ব্যবহার করা হয়। যারা প্রজন্ম ধরে ছায়ানেট টাঙিয়ে, হাতে পাতা তোলার মতো শ্রমসাধ্য পদ্ধতিতে আসল ম্যাচা তৈরি করেন, তাদের পক্ষে এসব ভেজাল মিশ্রণের সঙ্গে দামে প্রতিযোগিতা করা কঠিন। এই চাষিরা এখন সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি, অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বা নির্দিষ্ট বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারির দিকে ঝুঁকছেন, যাতে তাদের পণ্যের উৎসের গল্পও কাপে পৌঁছায়।

জলবায়ু বদল, শ্রম সংকট আর স্বাস্থ্য–বাজির ফাঁদ
গল্পের আরেক প্রান্তে আছে জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্রামাঞ্চলের শ্রমঘাটতি। চা–গাছ তাপমাত্রার ওঠানামা ও অনিয়মিত বৃষ্টিতে দ্রুত প্রভাবিত হয়। জাপানি চাষিরা বলছেন, উষ্ণ শীত আর অনিশ্চিত বর্ষা মিলিয়ে শেড–গ্রোন টেনচা উৎপাদন আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় ছায়ানেট, সার ও পোকামাকড় দমন—সব কিছুর খরচই দ্রুত বাড়ছে; একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাওয়ায় দক্ষ শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেক সমবায় এখন যন্ত্রের সাহায্যে পাতা তোলা ও অপেক্ষাকৃত সহজ প্রক্রিয়াকরণে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছে; কিন্তু চা–রসিকদের মতে, সেই পার্থক্য স্বাদে স্পষ্টই ধরা পড়ে।
এদিকে বিশ্বজুড়ে বড় ব্র্যান্ডগুলো ম্যাচাকে ক্রমশ “ফ্লেভার” হিসেবে ব্যবহার করছে—এমন সব পণ্যে যেখানে আসল চায়ের অংশ খুব কম, তবু প্যাকেটের সামনের দিকে বড় অক্ষরে লেখা থাকে MATCHA। বিভিন্ন গবেষণার সীমিত ফলাফলকে অনেক সময় অতিরঞ্জিত করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও “ক্লিন ক্যাফেইন”–এর দাবি তুলে ধরা হয়। ভোক্তা অধিকারকর্মীরা চাইছেন, লেবেলে যেন পরিষ্কারভাবে উল্লেখ থাকে—চা কোন দেশ ও অঞ্চলের, পাতাগুলো আসল শেড–গ্রোন টেনচা নাকি সাধারণ গ্রিন টি গুঁড়া, আর মিশ্রণে কী কী উপাদান আছে। আপাতত সামনের সারিতে দাঁড়াতে হচ্ছে ক্রেতাকেই: খুব সস্তা দামে পাওয়া ম্যাচা–জাত পণ্যের বিষয়ে সন্দেহ করা, উৎপাদককে প্রশ্ন করা, এবং বুঝে শুনে কেনাকাটা করা ছাড়া উপায় নেই। সোশ্যাল মিডিয়ার ছবিতে সব কাপই একই রকম সবুজ দেখালেও, প্রতিটি চুমুকের পেছনের গল্প একেবারেই এক নয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















