শোক থেকে জন্ম নেওয়া জনরোষের প্রতীক
সার্বিয়ার নোভি সাদ শহরের রেলস্টেশনের নতুন সংস্কার করা ছাদ ধসে নিহতদের মধ্যে ছিলেন ২৭ বছর বয়সী স্টেফান হ্রকা। সেই দুর্ঘটনায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে রাজধানী বেলগ্রেডের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে টানা দুই সপ্তাহ অনশন করেন তার মা দিযানা হ্রকা। তিনি রোদ–বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছোট্ট তাবুতে বসে শুধু একটি দাবি তুলেছিলেন—ছাদ ধসের ঘটনার জন্য দায়ীদের জবাবদিহি ও বিচার। এ দুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে দেয়; সমালোচকেরা বলেন, ঘুষ–দুর্নীতি, অদক্ষ ঠিকাদার আর দুর্বল সরকারি তদারকির ফলই এই বিপর্যয়, অথচ এখনো কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি। দিযানার অনশন তাই শোকের পাশাপাশি ক্রোধেরও প্রতীক হয়ে ওঠে, যেখানে ছাত্র, শিক্ষক, নাগরিক সমাজ ও বিরোধী নেতারা একে একে গিয়ে সংহতি জানান।
রবিবার অনশন ভেঙে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে দিযানা বলেন, “আমি বেঁচে থেকে আরও অনেক কিছু করতে পারব।” কথা বলতে বলতে নিজের হাতে চিকিৎসার দাগ দেখিয়ে জানান, শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছিল কিন্তু সমর্থকদের অনুরোধে এবং আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী করার স্বার্থে তিনি খাবার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অনশন ভাঙলেও সংসদ ভবনের সামনে থেকে সরে যাচ্ছেন না; বরং এখন থেকে তিনি মিছিলে হাঁটবেন, সমাবেশে কথা বলবেন এবং নিহত পরিবারের অন্য সদস্যদের সংগঠিত করতে আরও বেশি সময় দেবেন। আন্দোলনকারীদের ভাষ্যে, এক শোকাহত মায়ের দৃঢ় অবস্থান এই প্রতিবাদকে শুধু রাজনৈতিক দাবির বাইরে নিয়ে গিয়ে নৈতিক প্রশ্নে দাঁড় করিয়েছে—জননিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির অভাবের বিরুদ্ধে বৃহত্তর প্রতিরোধ।

শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন
এই একটি দুর্ঘটনাকে ঘিরে শুরু হওয়া ক্ষোভ এখন সার্বিয়াজুড়ে বড় আকারের সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে বেলগ্রেডসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুচিচের পদত্যাগ, আগাম নির্বাচন এবং নোভি সাদের প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার দাবি তুলছেন। মিছিলে অংশ নেওয়া অনেক তরুণ–তরুণী জানান, দেশ ছাড়ার কথা প্রায়ই তাদের মনে আসে; তারা এমন এক রাষ্ট্র চান, যেখানে জনপরিসেবার নামে অবহেলা বা দুর্নীতি ঘটলে কেউ যেন পার পেয়ে না যায়।
সরকারি পক্ষ থেকে তদন্ত আর প্রশাসনিক পর্যালোচনার কথা বলা হলেও সমালোচকেরা মনে করেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বড় কোনো দুর্ঘটনার পরও উচ্চপর্যায়ের কেউ তেমন শাস্তি পাননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই টানাপোড়েনের ফলই নির্ধারণ করবে—ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পথে থাকা সার্বিয়া সত্যিই কি আইনের শাসন ও স্বচ্ছতা জোরদার করতে পারছে, নাকি পুরোনো স্বার্থগোষ্ঠী আরেকটি সঙ্কটও সামলে ফেলবে। এই প্রেক্ষাপটে দিযানার অনশন ভাঙাকে অনেকে কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন—তিনি এখন মিছিল, কৌশল বৈঠক এবং সম্ভাব্য আলোচনায় আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারবেন। তাঁকে ঘিরে যখন সমর্থকেরা হাততালি দিচ্ছিলেন, তখন বারবার শোনা যাচ্ছিল তার ছেলের নাম, যেন ব্যক্তিগত বাঁচার সিদ্ধান্তও প্রতিবাদের নতুন স্লোগানে মিশে গেল।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















