০৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
গাজীপুরে কয়েল কারখানায় ভয়াবহ আগুনঃ আশে পাশের মানুষ সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনায় এখন শুধু ‘ট্যাকটিক্যাল বিরতি’,সতর্ক করল সিঙ্গাপুর গানপাউডার–পেট্রোল দিয়ে ময়মনসিংহে ট্রেন বগিতে আগুন ধামরাইয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ শীতেও কমছে না দাম: খুলনার কাঁচা বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট—বাংলাদেশের বিশেষ সম্মাননা চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি দখল বাড়ছে: নিয়ন্ত্রণ হারানোর শঙ্কা তীব্র যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য যে ধ্বংসাত্মক কৌশল বানিয়েছিল, এখন তার শিকার নিজেই যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করবে: ট্রাম্প যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর কঠোরতা বাড়ছে

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর কঠোরতা বাড়ছে

যুক্তরাজ্য সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কঠোর নতুন নীতি ঘোষণা করেছে। অবৈধ অভিবাসন নিয়ে জনঅসন্তোষ বাড়ায় ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ব্রিটেনও কঠোর পথে হাঁটছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সরকারের এই উদ্যোগকে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নীতিগত বড় পরিবর্তন
সরকার সোমবার যে নীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়, তার মধ্যে রয়েছে—আইন সংশোধন করে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের দ্রুত দেশ থেকে ফেরত পাঠানো সহজ করা। স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার অপেক্ষার সময় চারগুণ বাড়িয়ে ২০ বছর করা। আশ্রয়প্রার্থীর নিজ দেশের নিরাপত্তা নিয়মিতভাবে পুনর্মূল্যায়ন করে ফিরে যাওয়া সম্ভব কি না তা পর্যালোচনা।

আফ্রিকার কিছু দেশ গ্রহণ না করলে ভিসা সীমিত হবে
সরকার জানিয়েছে, যেসব দেশ অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে থাকা নাগরিক ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ফেরত নিতে রাজি নয়, বিশেষ করে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ—তাদের ওপর ভিসা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে লন্ডন।

সম্পদ জব্দের বিতর্কিত পরিকল্পনা
আরও একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ হলো আশ্রয়প্রার্থীদের গয়না, গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ জব্দ করে তাদের আবাসন ও দাবি প্রক্রিয়াকরণের খরচ মেটানো। এই নীতি ডেনমার্কের মতো কিছু দেশে পূর্বে ব্যবহৃত হলেও ব্রিটেনে তা প্রথমবারের মতো প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সরকারের অবস্থান
গৃহসচিব শাবানা মাহমুদ বলেছেন, যুক্তরাজ্য এতদিন “প্রয়োজনীয় কঠোরতা দেখাতে ব্যর্থ” হয়েছে। তবে এসব পরিবর্তনের কয়েকটি বাস্তবায়নে নতুন আইন প্রয়োজন হবে, যা লেবার পার্টির ভেতরেই বাধার মুখে পড়তে পারে—কারণ দলের বামপন্থী অনেকেই কঠোর অভিবাসন নীতির বিরোধিতা করেন।

ইউরোপে অভিবাসন নীতির পরিবর্তন ও তার প্রভাব
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ—জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও ইতালি—ইতোমধ্যেই কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এর ফলে ইউরোপে অবৈধ প্রবেশ গত বছরের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স।

যুক্তরাজ্যে পরিস্থিতি ভিন্ন
কিন্তু ব্রিটেনে আশ্রয় দাবির সংখ্যা উল্টো রেকর্ড ১,১১,০০০–এ পৌঁছেছে। ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। সরকারি আবাসন না পাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগত ৩০,০০০ আশ্রয়প্রার্থী হোটেলে থাকতে বাধ্য হয়েছে, যা ২০২৪ সালে করদাতাদের প্রায় ২ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রভাব
অভিবাসন ইস্যু যুক্তরাজ্যে বড় রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করেছে। সাবেক ব্রেক্সিট নেতা নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন কঠোর অভিবাসনবিরোধী দল রিফর্ম ইউকে এখন জনমত জরিপে শীর্ষে। সম্প্রতি কিছু অভিযোগিত অপরাধমূলক ঘটনার পর অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভও দেখা গেছে।

লেবার পার্টির অভ্যন্তরীণ সংকট
সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে লেবার পার্টির ভেতরে অসন্তোষ বাড়ছে। দলের এমপি রিচার্ড বারগন বলেছেন, “যারা যুদ্ধ ও অত্যাচার থেকে পালিয়ে এসেছে—তাদের ওপর এই আক্রমণ অনেক লেবার সমর্থককে বিরক্ত করবে।”

আইনি অভিবাসনের ওপর নতুন সীমা
সরকার বছরে কতজনকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে তার ওপর একটি বার্ষিক সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি দক্ষতাসম্পন্ন শরণার্থীদের জন্য নতুন কর্মভিত্তিক অভিবাসন পথও চালু হবে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
অনেক দেশই অভিবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সক্ষমতা হারিয়েছে, ফলে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ দুর্বল বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ সীমান্তে আশ্রয় আবেদনের অধিকার স্থগিত করার পর সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ নাটকীয়ভাবে কমে যায়।

ব্রিটেনের নতুন অভিবাসন নীতি বিতর্ক সৃষ্টি করলেও সরকার বলছে—এগুলোর উদ্দেশ্য দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পুনরুদ্ধার করা। তবে রাজনৈতিক বিরোধ, মানবাধিকার উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক—সব মিলিয়ে এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন কতটা সহজ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুরে কয়েল কারখানায় ভয়াবহ আগুনঃ আশে পাশের মানুষ সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর কঠোরতা বাড়ছে

০১:০৮:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

যুক্তরাজ্য সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কঠোর নতুন নীতি ঘোষণা করেছে। অবৈধ অভিবাসন নিয়ে জনঅসন্তোষ বাড়ায় ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ব্রিটেনও কঠোর পথে হাঁটছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সরকারের এই উদ্যোগকে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নীতিগত বড় পরিবর্তন
সরকার সোমবার যে নীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়, তার মধ্যে রয়েছে—আইন সংশোধন করে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের দ্রুত দেশ থেকে ফেরত পাঠানো সহজ করা। স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার অপেক্ষার সময় চারগুণ বাড়িয়ে ২০ বছর করা। আশ্রয়প্রার্থীর নিজ দেশের নিরাপত্তা নিয়মিতভাবে পুনর্মূল্যায়ন করে ফিরে যাওয়া সম্ভব কি না তা পর্যালোচনা।

আফ্রিকার কিছু দেশ গ্রহণ না করলে ভিসা সীমিত হবে
সরকার জানিয়েছে, যেসব দেশ অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে থাকা নাগরিক ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ফেরত নিতে রাজি নয়, বিশেষ করে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ—তাদের ওপর ভিসা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে লন্ডন।

সম্পদ জব্দের বিতর্কিত পরিকল্পনা
আরও একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ হলো আশ্রয়প্রার্থীদের গয়না, গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ জব্দ করে তাদের আবাসন ও দাবি প্রক্রিয়াকরণের খরচ মেটানো। এই নীতি ডেনমার্কের মতো কিছু দেশে পূর্বে ব্যবহৃত হলেও ব্রিটেনে তা প্রথমবারের মতো প্রস্তাব করা হচ্ছে।

সরকারের অবস্থান
গৃহসচিব শাবানা মাহমুদ বলেছেন, যুক্তরাজ্য এতদিন “প্রয়োজনীয় কঠোরতা দেখাতে ব্যর্থ” হয়েছে। তবে এসব পরিবর্তনের কয়েকটি বাস্তবায়নে নতুন আইন প্রয়োজন হবে, যা লেবার পার্টির ভেতরেই বাধার মুখে পড়তে পারে—কারণ দলের বামপন্থী অনেকেই কঠোর অভিবাসন নীতির বিরোধিতা করেন।

ইউরোপে অভিবাসন নীতির পরিবর্তন ও তার প্রভাব
ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ—জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস ও ইতালি—ইতোমধ্যেই কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এর ফলে ইউরোপে অবৈধ প্রবেশ গত বছরের তুলনায় প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স।

যুক্তরাজ্যে পরিস্থিতি ভিন্ন
কিন্তু ব্রিটেনে আশ্রয় দাবির সংখ্যা উল্টো রেকর্ড ১,১১,০০০–এ পৌঁছেছে। ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। সরকারি আবাসন না পাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগত ৩০,০০০ আশ্রয়প্রার্থী হোটেলে থাকতে বাধ্য হয়েছে, যা ২০২৪ সালে করদাতাদের প্রায় ২ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করিয়েছে।

রাজনৈতিক প্রভাব
অভিবাসন ইস্যু যুক্তরাজ্যে বড় রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করেছে। সাবেক ব্রেক্সিট নেতা নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন কঠোর অভিবাসনবিরোধী দল রিফর্ম ইউকে এখন জনমত জরিপে শীর্ষে। সম্প্রতি কিছু অভিযোগিত অপরাধমূলক ঘটনার পর অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভও দেখা গেছে।

লেবার পার্টির অভ্যন্তরীণ সংকট
সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে লেবার পার্টির ভেতরে অসন্তোষ বাড়ছে। দলের এমপি রিচার্ড বারগন বলেছেন, “যারা যুদ্ধ ও অত্যাচার থেকে পালিয়ে এসেছে—তাদের ওপর এই আক্রমণ অনেক লেবার সমর্থককে বিরক্ত করবে।”

আইনি অভিবাসনের ওপর নতুন সীমা
সরকার বছরে কতজনকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে তার ওপর একটি বার্ষিক সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি দক্ষতাসম্পন্ন শরণার্থীদের জন্য নতুন কর্মভিত্তিক অভিবাসন পথও চালু হবে।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
অনেক দেশই অভিবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সক্ষমতা হারিয়েছে, ফলে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ দুর্বল বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ সীমান্তে আশ্রয় আবেদনের অধিকার স্থগিত করার পর সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ নাটকীয়ভাবে কমে যায়।

ব্রিটেনের নতুন অভিবাসন নীতি বিতর্ক সৃষ্টি করলেও সরকার বলছে—এগুলোর উদ্দেশ্য দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পুনরুদ্ধার করা। তবে রাজনৈতিক বিরোধ, মানবাধিকার উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক—সব মিলিয়ে এই নীতিগুলো বাস্তবায়ন কতটা সহজ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।