০৩:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে শিশু নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি ভারতের স্পষ্ট বার্তা: যেখানেই হোক, সন্ত্রাস দমনে অভিযান চালানোর পূর্ণ অধিকার আছে ইভি আর স্মার্ট গ্যাজেটের জোরে দ্বিগুণের বেশি মুনাফা দেখাল শাওমি ভারতের রেড ফোর্ট হামলার উদ্ধার হওয়া ভিডিও: আত্মঘাতী হামলার সাফাই দিচ্ছিলেন উমর উন-নবী ইন্দোনেশিয়ার শিশুদের ভিডিও গেমে জঙ্গি প্রভাব: পুলিশ গাজীপুরে কয়েল কারখানায় ভয়াবহ আগুনঃ আশে পাশের মানুষ সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনায় এখন শুধু ‘ট্যাকটিক্যাল বিরতি’,সতর্ক করল সিঙ্গাপুর গানপাউডার–পেট্রোল দিয়ে ময়মনসিংহে ট্রেন বগিতে আগুন ধামরাইয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ শীতেও কমছে না দাম: খুলনার কাঁচা বাজারে নতুন করে দাম বেড়েছে

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য যে ধ্বংসাত্মক কৌশল বানিয়েছিল, এখন তার শিকার নিজেই

ওয়াশিংটন এক অস্বস্তিকর সত্য সামনে এনেছে: যে দেশ বিদেশে বিশৃঙ্খলা ছড়ায়, শেষ পর্যন্ত সেই বিশৃঙ্খলাই ফিরে এসে তাকে আঘাত করে। দশকের পর দশক যুক্তরাষ্ট্র সুপরিকল্পিত অস্থিরতার কৌশল নিখুঁতভাবে ব্যবহার করেছে—প্রতিদ্বন্দ্বীদের অস্থিতিশীল করে নিজের দেশে শান্তির ভ্রম বজায় রেখে। সেই ভ্রম এখন ভেঙে পড়ছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে ৩৪ বছর বয়সী বামপন্থী কর্মী ও মুসলিম ঝোহরান মামদানির অপ্রত্যাশিত জয় কেবল স্থানীয় রাজনীতির চমক নয়। এটি আমেরিকার নিজের সম্পর্কে এবং বিশ্বের সঙ্গে তার সম্পর্ক সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায়। এটি দেখায় যে ওয়াশিংটন একসময় যেই রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্য দেশে রপ্তানি করত, তা এখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতিতেই স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে।

মামদানির বিজয়—যা আংশিকভাবে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তাবাদী রাজনীতির প্রতিক্রিয়া—প্রমাণ করে যে আমেরিকান সমাজ এখন বিশৃঙ্খলা ও পরিবর্তনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যে অন্তর্দ্বন্দ্ব একসময় মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে দেখা যেত, তা এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। বেপরোয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ, যা একসময় আমেরিকার বৈদেশিক নীতির চালিকাশক্তি ছিল, এখন দেশের ভেতরেই ফিরে এসেছে।

অনেক বছর ধরে আমেরিকার এলিট শ্রেণি অন্য দেশে অস্থিরতা ছড়িয়ে টিকে ছিল। ব্রিটেন ও ইউরোপও একই কৌশল অনুসরণ করেছে—অন্যদের দুর্বল করা, তারপর শান্তিরক্ষা ও পুনর্গঠনের সেবা বিক্রি করা। তাদের এই পদ্ধতির তিনটি লক্ষ্য ছিল:
প্রথমত, ছোট দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করা থেকে বিরত রাখা।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়া ও চীনের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে অবিরাম সংকটে আটকে রাখা।
তৃতীয়ত, পশ্চিমা ‘স্থিতিশীলতা’কে অপরিহার্য ও লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

কিন্তু সে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া কিংবা বালকানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচারিত কোনও ‘শান্তিরক্ষা’ মিশনই তার রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারেনি। বরং এই পদক্ষেপগুলো তার নৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক প্রভাবশক্তিকে ক্ষয় করেছে।

বিদেশে বিশৃঙ্খলা রপ্তানি করতে করতে আমেরিকা নিজের জনগণকে ঘরের ভেতর স্থিতিশীলতা কামনা করতে শিখিয়েছিল। আজ সেই ভ্রমও উধাও হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক বিভাজন ছড়িয়ে পড়েছে, তা সেই একই অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি, যা তারা একসময় অন্য দেশে সৃষ্টি করত। দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এখন আমেরিকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে—এবং ক্ষমতাসীন শ্রেণি আর তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

এর প্রভাব বৈশ্বিক। আমেরিকার দীর্ঘদিনের মিত্র—বিশেষ করে ইসরায়েল ও তুরস্ক—এখন প্রায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এমনকি সেই স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও। বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র এসব অংশীদারকে মধ্যপ্রাচ্যে ‘নিয়ন্ত্রিত অস্থিরতা’র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে—আরব বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে ইসরায়েল এবং ন্যাটোর দক্ষিণ দিক পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

এখন সেই কাঠামো ভেঙে পড়ছে। এরদোগানের শাসনে তুরস্ক কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদকে কঠোরভাবে দমন করেছে এবং পুরো অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল কার্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। কোনো সুস্পষ্ট কৌশলগত লক্ষ্য বা শক্তিশালী আঞ্চলিক শত্রু না থাকায় এখন দুই দেশই নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাইরের দিকে—এমনকি একে অপরের বিরুদ্ধেও—মুখো করেছে।

একসময় অকল্পনীয় বলে বিবেচিত তুরস্ক–ইসরায়েল সংঘাত এখন পুরোপুরি সম্ভাবনাময়। ব্যঙ্গাত্মকভাবে, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দুই মিত্রই হয়তো পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে পারে—কারণ যুক্তরাষ্ট্র আর নিজেদের জোট কাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারছে না।

এই নিয়ন্ত্রণহীনতা আরও গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এখন আর সুসংহত কোনো বৈদেশিক নীতি নেই—শুধু একের পর এক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত, যা মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে ওয়াশিংটনের হঠাৎ যোগাযোগ পুনঃস্থাপন কোনও সুপরিকল্পিত কৌশল নয়; বরং তা বিভ্রান্তি ও দিকভ্রান্ত নীতিনির্ধারণের লক্ষণ।

লেখকঃ তিমোফেই বোর্দাচেভ, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, ভালদাই ক্লাব

 

জনপ্রিয় সংবাদ

আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে শিশু নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য যে ধ্বংসাত্মক কৌশল বানিয়েছিল, এখন তার শিকার নিজেই

০১:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

ওয়াশিংটন এক অস্বস্তিকর সত্য সামনে এনেছে: যে দেশ বিদেশে বিশৃঙ্খলা ছড়ায়, শেষ পর্যন্ত সেই বিশৃঙ্খলাই ফিরে এসে তাকে আঘাত করে। দশকের পর দশক যুক্তরাষ্ট্র সুপরিকল্পিত অস্থিরতার কৌশল নিখুঁতভাবে ব্যবহার করেছে—প্রতিদ্বন্দ্বীদের অস্থিতিশীল করে নিজের দেশে শান্তির ভ্রম বজায় রেখে। সেই ভ্রম এখন ভেঙে পড়ছে।

সম্প্রতি নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে ৩৪ বছর বয়সী বামপন্থী কর্মী ও মুসলিম ঝোহরান মামদানির অপ্রত্যাশিত জয় কেবল স্থানীয় রাজনীতির চমক নয়। এটি আমেরিকার নিজের সম্পর্কে এবং বিশ্বের সঙ্গে তার সম্পর্ক সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায়। এটি দেখায় যে ওয়াশিংটন একসময় যেই রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্য দেশে রপ্তানি করত, তা এখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া রাজনীতিতেই স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে।

মামদানির বিজয়—যা আংশিকভাবে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তাবাদী রাজনীতির প্রতিক্রিয়া—প্রমাণ করে যে আমেরিকান সমাজ এখন বিশৃঙ্খলা ও পরিবর্তনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যে অন্তর্দ্বন্দ্ব একসময় মধ্যপ্রাচ্য থেকে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে দেখা যেত, তা এখন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। বেপরোয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ, যা একসময় আমেরিকার বৈদেশিক নীতির চালিকাশক্তি ছিল, এখন দেশের ভেতরেই ফিরে এসেছে।

অনেক বছর ধরে আমেরিকার এলিট শ্রেণি অন্য দেশে অস্থিরতা ছড়িয়ে টিকে ছিল। ব্রিটেন ও ইউরোপও একই কৌশল অনুসরণ করেছে—অন্যদের দুর্বল করা, তারপর শান্তিরক্ষা ও পুনর্গঠনের সেবা বিক্রি করা। তাদের এই পদ্ধতির তিনটি লক্ষ্য ছিল:
প্রথমত, ছোট দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করা থেকে বিরত রাখা।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়া ও চীনের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে অবিরাম সংকটে আটকে রাখা।
তৃতীয়ত, পশ্চিমা ‘স্থিতিশীলতা’কে অপরিহার্য ও লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

কিন্তু সে সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া কিংবা বালকানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচারিত কোনও ‘শান্তিরক্ষা’ মিশনই তার রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে পারেনি। বরং এই পদক্ষেপগুলো তার নৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক প্রভাবশক্তিকে ক্ষয় করেছে।

বিদেশে বিশৃঙ্খলা রপ্তানি করতে করতে আমেরিকা নিজের জনগণকে ঘরের ভেতর স্থিতিশীলতা কামনা করতে শিখিয়েছিল। আজ সেই ভ্রমও উধাও হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক বিভাজন ছড়িয়ে পড়েছে, তা সেই একই অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি, যা তারা একসময় অন্য দেশে সৃষ্টি করত। দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এখন আমেরিকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে—এবং ক্ষমতাসীন শ্রেণি আর তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

এর প্রভাব বৈশ্বিক। আমেরিকার দীর্ঘদিনের মিত্র—বিশেষ করে ইসরায়েল ও তুরস্ক—এখন প্রায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজেদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এমনকি সেই স্বার্থ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও। বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র এসব অংশীদারকে মধ্যপ্রাচ্যে ‘নিয়ন্ত্রিত অস্থিরতা’র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে—আরব বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে ইসরায়েল এবং ন্যাটোর দক্ষিণ দিক পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

এখন সেই কাঠামো ভেঙে পড়ছে। এরদোগানের শাসনে তুরস্ক কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদকে কঠোরভাবে দমন করেছে এবং পুরো অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল কার্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। কোনো সুস্পষ্ট কৌশলগত লক্ষ্য বা শক্তিশালী আঞ্চলিক শত্রু না থাকায় এখন দুই দেশই নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাইরের দিকে—এমনকি একে অপরের বিরুদ্ধেও—মুখো করেছে।

একসময় অকল্পনীয় বলে বিবেচিত তুরস্ক–ইসরায়েল সংঘাত এখন পুরোপুরি সম্ভাবনাময়। ব্যঙ্গাত্মকভাবে, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দুই মিত্রই হয়তো পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে পারে—কারণ যুক্তরাষ্ট্র আর নিজেদের জোট কাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারছে না।

এই নিয়ন্ত্রণহীনতা আরও গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এখন আর সুসংহত কোনো বৈদেশিক নীতি নেই—শুধু একের পর এক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত, যা মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে ওয়াশিংটনের হঠাৎ যোগাযোগ পুনঃস্থাপন কোনও সুপরিকল্পিত কৌশল নয়; বরং তা বিভ্রান্তি ও দিকভ্রান্ত নীতিনির্ধারণের লক্ষণ।

লেখকঃ তিমোফেই বোর্দাচেভ, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, ভালদাই ক্লাব