গাজা যুদ্ধবিরতি দৃঢ় করতে এবং মানবিক সহায়তা দ্রুত বাড়াতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত প্রস্তাব গৃহীত হওয়াকে আন্তর্জাতিক মহল গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি এবং ইন্দোনেশিয়া—সবাই এই প্রস্তাবকে গাজায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, প্রস্তাবটি গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি। তিনি জানান, এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো কূটনৈতিক গতি কাজে লাগিয়ে বাস্তবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া এবং মানবিক সহায়তা দ্রুত বাড়ানো।
গুতেরেস আরও বলেন, দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানবিক সহায়তার ঘাটতি
যুদ্ধবিরতির এক মাস পরও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা জানায় যে গাজায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
জাতিসংঘ শিশু সংস্থার মুখপাত্র রিকার্ডো পাইরেস বলেন, সহায়তা কিছুটা বাড়লেও তা এখনো যথেষ্ট নয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া
ইইউ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটকে “গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দেয়।
ইইউর বিদেশবিষয়ক মুখপাত্র আনোয়ার এল আনৌনি বলেন, প্রস্তাবটি গাজা সংঘাতের সমাপ্তি, যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করা, বৃহৎ মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং পুনর্গঠন ও প্রতিষ্ঠান সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করবে।

জার্মানির অবস্থান
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল বলেন, প্রস্তাব গ্রহণ “সুসংবাদ।” তিনি জানান, জার্মানি গাজা পুনর্গঠনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
ইন্দোনেশিয়ার প্রতিক্রিয়া
ইন্দোনেশিয়া প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে জানায় যে তারা ট্রাম্প-সমর্থিত এই পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধ সমাপ্তির প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণভাবে যুক্ত থাকবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়ভোন মিউয়েংক্যাং বলেন, সব পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিশেষ করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির ভিত্তি গড়ে তুলবে।
ইন্দোনেশিয়া ঘোষণা দেয় যে তারা সর্বোচ্চ ২০ হাজার শান্তিরক্ষী সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত, যারা স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে কাজ করবে।
আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা
প্রস্তাবটিতে জাতিসংঘ-ম্যান্ডেটযুক্ত আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়েছে, যাতে দেশগুলোর সেনা পাঠানো বৈধতা পায়।
ইসরায়েল ও হামাস ইতোমধ্যে ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার প্রথম ধাপ—দুই বছরের যুদ্ধের পর যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়—মেনে নিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়োর কূটনৈতিক অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি পুনর্ব্যক্ত করলেও একইসঙ্গে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।
ইন্দোনেশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে, গাজায় সহিংসতার কড়া নিন্দা জানিয়েছে এবং নিয়মিত মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে। দেশটির ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















