প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২৯ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সাইনাস ইনফেকশনে আক্রান্ত হন, যা সাইনোসাইটিস নামেও পরিচিত। এটি প্রায় প্রতি ৮ জনে ১ জনকে প্রভাবিত করে। অনুমান করা হয়, সমস্ত প্রিসক্রাইবড অ্যান্টিবায়োটিকের এক-পঞ্চমাংশ ব্যবহৃত হয় সাইনোসাইটিস চিকিৎসায়। আপনার সাইনাস চার জোড়া বাতাসে ভরা সংযুক্ত গহ্বর, যা চোখ ও নাকের মধ্যে থাকে। এখানে ঘটে মাইক্রোস্কোপিক এক যুদ্ধ—ইনফেকশন ও প্রদাহ সৃষ্টিকারী অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার লড়াই, যা স্বাস্থ্য ও আরাম দুটোকেই প্রভাবিত করে।
সাইনাস গ্যাঁটনের কারণ
সাইনাস মিউকাস তৈরি করে, যা নাসাল প্যাসেজ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গহ্বরগুলোকে পরিষ্কার ও আর্দ্র রাখে। ভেতরের ক্ষুদ্র চুলের মতো সিলিয়া ক্রমাগত মিউকাসকে ছোট ছিদ্র (অস্টিয়া) দিয়ে বের করে দেয়, যা পরে নাক ও গলায় গিয়ে নিষ্কাশিত হয়। যখন সাইনাস স্ফীত এবং প্রদাহিত হয়ে সেই ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তখন মিউকাস জমে চাপ সৃষ্টি করে—ফলে হয় ব্যথা, গ্যাঁটন ও অবরোধের অনুভূতি। সাধারণত সমস্যার শুরু হয় একদিকে, পরে অন্যদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
সর্দি কিভাবে সাইনাস ইনফেকশন সৃষ্টি করে
সাইনোসাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ কারণ সাধারণ সর্দি, যা ভাইরাসঘটিত। বেশিরভাগ মানুষ ৭–১০ দিনের মধ্যে সেরে ওঠেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাল সর্দি ব্যাকটেরিয়াল সাইনাস ইনফেকশনে রূপ নেয়, কারণ অবরুদ্ধ সাইনাস গহ্বর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে।

সাইনোসাইটিসের অন্যান্য কারণ
নাসাল এলার্জি (এলার্জিক রাইনাইটিস), ছত্রাকজনিত সংক্রমণ, বায়ু দূষণ এবং সিগারেটের ধোঁয়ার সংবেদনশীলতা সাইনোসাইটিসের অতিরিক্ত কারণ হতে পারে। অধিকাংশ সাইনাস ইনফেকশন বিশ্রাম, সময় এবং নাসাল স্প্রে, ডিকঞ্জেস্টেন্ট বা ব্যথানাশকের মতো হোম রেমেডিতে উন্নতি হয়। যেহেতু বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত, অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না—শুধু ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে ব্যবহার করা হয়, সাধারণত উপসর্গ শুরুর ৫–১০ দিনের মধ্যে তা বোঝা যায়।
ব্যাকটেরিয়াল সাইনাস ইনফেকশনের লক্ষণ
হলুদ বা সবুজ রঙের ঘন মিউকাস, মুখ বা একপাশের সাইনাসে ব্যথা, উপরের দাঁতে চাপের ব্যথা—বিশেষ করে একপাশে বেশি—এবং সাত দিনের বেশি স্থায়ী উপসর্গ ব্যাকটেরিয়াল সাইনোসাইটিসের লক্ষণ। ১২ সপ্তাহের বেশি থাকলে সেটিকে ক্রনিক সাইনোসাইটিস বলা হয়।
সাইনাস মাথাব্যথা বনাম মাইগ্রেন
সাইনোসাইটিসের মাথাব্যথা অনেক সময় মাইগ্রেনের সঙ্গে গুলিয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সাইনাস মাথাব্যথার চিকিৎসা নেন, তাদের বড় অংশের ক্ষেত্রে পরে মাইগ্রেন চিহ্নিত হয়। দুই ক্ষেত্রেই সামনে ঝুঁকলেই ব্যথা বাড়তে পারে। তবে মাইগ্রেনে সাধারণত বমি, বমি বমি ভাব বা আলো–শব্দে বাড়তি যন্ত্রণা থাকে—যা সাইনাস ইনফেকশনে সচরাচর দেখা যায় না।
সাইনাস ইনফেকশনের উপসর্গ কমানোর হোম রেমেডি
উষ্ণ কম্প্রেস বা গরম পানির বাষ্প শ্বাসে নেওয়া উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। প্রচুর পানি পান মিউকাস পাতলা করে বের হতে সহায়তা করে। তামাক ও মদ্যপান এড়িয়ে চললে সাইনাসে চাপ কমে। নাসাল কর্টিকোস্টেরয়েড স্প্রেও কার্যকর হতে পারে।

সাইনাস সমস্যা এবং চোখ–কান প্রভাব
সাইনাস বন্ধ থাকলে সাধারণত চোখ ফুলে উঠা বা জল আসা হয় না—এসব সাধারণত অ্যালার্জির লক্ষণ। সাইনোসাইটিসে কান ইনফেকশন খুব সাধারণ নয়; বরং ভাইরাল সর্দি একসাথে কান ও সাইনাসে উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।
ক্রনিক সাইনোসাইটিসের চিকিৎসা
ক্রনিক সাইনোসাইটিস পুরোপুরি নিরাময় নাও হতে পারে, তবে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নাসাল সলিউশন, নাসাল কর্টিকোস্টেরয়েড স্প্রে, ইনজেকটেবল ওষুধ এবং অ্যালার্জি চিকিৎসা এর অন্তর্ভুক্ত।
#health #sinus #medicalnews #sarakhon #translation
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















