০৪:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের নতুন শান্তি পরিকল্পনার মাঝেই পদ ছাড়ছেন কিথ কেলগ যুক্তরাষ্ট্রের এআই গবেষণায় এখনো চীনা মেধার প্রাধান্য এক বিলিয়ন চোখ আর এক ইংলিশম্যান: টেন্ডুলকারের রেকর্ডের পেছনে রুট জেনারেশন জেডের প্রতি শীর্ষ নির্মাতাদের দৃষ্টিভঙ্গি অবিশ্বাস্য বিপদ: গলিত হিমবাহ এবং হিমালয়ের জলপ্রবাহ দেউলিয়া শহরের নতুন সুযোগ: ক্যালিফোর্নিয়ার একটি শহর পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা হিলসের মধ্যে রাষ্ট্র গঠন: ইউটারাখন্ডের চ্যালেঞ্জ ও অর্জন কোহ লানের এক শান্তিপূর্ণ কোণা সিঙ্গাপুরের নতুন উদ্যোগ: আগামী তিন বছরে ৫০০ প্রতিষ্ঠানে স্বয়ংক্রিয় রোবট চালু কেন কিছু মানুষ ভূমিকম্প টের পান না?

ভূমিকম্প: ঢাকার জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি

ঢাকা যে কোনো সময় মাঝারি বা বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে—অসংগঠিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড না মানা এবং অতিরিক্ত জনঘনত্ব শহরটিকে বিশ্বের অন্যতম বিপন্ন নগরীতে পরিণত করেছে।


বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া শহরগুলোর অন্যতম। স্বাধীনতার পর অতি দ্রুত নগরায়ণ ঢাকাকে বিশ্বের প্রধান মেগাসিটিগুলোর একটিতে রূপ দিয়েছে। ২০০০ সালে এটি ছিল বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম শহর; ২০১০ সালে জনঘনত্ব ও বসবাসের অযোগ্যতার দিক থেকে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় নিম্নমানের শহরে পরিণত হয়।
অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, এলোমেলো নির্মাণ এবং খালি জায়গার অদক্ষ ব্যবহার শহরটিকে ভয়াবহ ভূমিকম্প-ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভবন ধসের ঘটনাগুলো নির্মিত পরিবেশের দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করেছে।


ঢাকা কেন উচ্চঝুঁকিতে

● বাংলাদেশ ভূমিকম্প সক্রিয় অঞ্চলে অবস্থিত
● ঢাকায় মাঝারি ঝুঁকি থাকলেও জনঘনত্ব, খোলা জায়গার অভাব ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ একে দেশের সবচেয়ে বিপন্ন শহরে পরিণত করেছে
● দেশটি ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেটের সীমানার কাছে; হিমালয়, শিলং মালভূমি, দাউকি ফল্ট ও বার্মিজ আর্কের প্রভাব রয়েছে
● হালুয়াঘাট এলাকায় নতুন সক্রিয় ফল্টের সন্ধান ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে


বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস

জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১–২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ৪৬৫টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। যন্ত্রপাতির ঘাটতির কারণে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, বারবার মাঝারি কম্পন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে।


নির্মাণ ব্যর্থতা: মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা

● ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটতে পারে
● নিম্নমানের উপকরণ এবং বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন প্রধান ঝুঁকি
● বিল্ডিং কোড থাকলেও বাস্তবে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় না—ফলে অধিকাংশ ভবনই ভূমিকম্প-সহনশীল নয়


ঢাকার ঝুঁকির প্রধান কারণ

● অতিরিক্ত জনঘনত্ব
● ভূমিকম্প-পরবর্তী গ্যাসলাইন ও বিদ্যুৎলাইনের আগুনের ঝুঁকি
● উচ্চ ভবন ও শিল্পকারখানায় কোড না মানা
● খোলা জায়গার মারাত্মক অভাব
● সড়ক দখল ও সংকীর্ণ রাস্তা—উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা


সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পূর্বাভাস

বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটির উপ-সভাপতি মেহেদী আহমেদ আনসারীর মতে—
● ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার প্রায় ৩৫% ভবন ধসে যেতে পারে
● মৃত্যু হতে পারে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের
● সময়ভেদে মৃত্যু ২২,০০০–২৮,০০০ জন পর্যন্ত হতে পারে
● আহত হতে পারে ৮৬,০০০–১,০৭,০০০ ব্যক্তি
● ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ১.৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

অন্য বিশেষজ্ঞদের মতে—
● ৪–৫ তলা ইট-নির্ভর ভবন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
● ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ১ লাখ ৩১ হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে


ঢাকায় ভূমিকম্প উৎপত্তির সম্ভাব্য উৎস

● ২০০১ সালের ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্প শহরের নিকটেই উৎপত্তি হয়েছিল
● মাইক্রোসিসমিক ডেটা অন্তত চারটি উৎস নির্দেশ করে
● ঢাকাকে বিশ্বের শীর্ষ ২০ ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় রাখা হয়েছে


ভূতাত্ত্বিক অবস্থা

● ঢাকা বছরে ৩০.৬ মিমি হারে উত্তর-পূর্বে সরে যাচ্ছে
● এতে বিকৃতি বাড়ছে, যা ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটাতে পারে
● মাটি ও তলের ফল্ট লাইন উচ্চ গতির কণার অঞ্চলগুলোর সঙ্গে মিলে যাওয়ায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে


ঢাকার উচ্চঝুঁকির অঞ্চল

● পশ্চিম ঢাকা: মিরপুর–কল্যাণপুর থেকে পাগলা (বুড়িগঙ্গা বরাবর)
● পূর্ব ঢাকা: উত্তরখান–বাড্ডা থেকে ডেমরা (বালু নদী বরাবর)
● ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে গ্রাউন্ড অ্যাক্সিলারেশন ০.৩–০.৩৫ পর্যন্ত হতে পারে
● পাঁচতলার বেশি ভবনে বিশেষ সিসমিক নিরাপত্তা প্রয়োজন

ঢাকাকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে—অতি উচ্চ, উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন ঝুঁকি।


ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও প্রস্তুতি

ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু ক্ষতি কমানো সম্ভব। এজন্য দরকার—
● দুর্যোগ-পূর্ব প্রস্তুতি
● ঝুঁকি হ্রাস
● দুর্যোগ-পরবর্তী দ্রুত উদ্ধার ও পুনর্বাসন


দীর্ঘমেয়াদি করণীয়

● সঠিক সিসমিক জোনিং ও মাইক্রো-জোনিং ম্যাপ
● কঠোরভাবে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন
● সব ভবনে ভূমিকম্প-সহনশীল নকশা বাধ্যতামূলক
● পানি–বিদ্যুৎ–যোগাযোগসহ সব অবকাঠামো ভূমিকম্প-নিরাপদ
● স্কুল ও হাসপাতালের মতো গণস্থাপনা ভূমিকম্প-সহনশীল করে নির্মাণ
● দুর্যোগ-শিক্ষা শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা


মধ্যমেয়াদি করণীয়

● ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের রেট্রোফিটিং বা পুনর্গঠন
● কমিউনিটি-ভিত্তিক সচেতনতা ও মহড়া
● স্থানীয় এনজিওকে প্রশিক্ষণ প্রদান


স্বল্পমেয়াদি করণীয়

● ভারী বস্তু নিচে রাখা
● ভঙ্গুর জিনিস নিরাপদে সংরক্ষণ
● গ্যাস/বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি সুরক্ষিতভাবে স্থাপন
● দাহ্য পদার্থ নিরাপদে রাখা
● বিছানা জানালা থেকে দূরে রাখা
● পরিবারের সবাইকে গ্যাস–বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করার নিয়ম শেখানো
● বাড়িতে ফার্স্ট-এইড বক্স রাখা


ভূমিকম্পের সময় করণীয়

● আতঙ্কিত না হওয়া
● বাইরে দৌড় না দেওয়া
● টেবিল, বেড বা দরজার নিচে আশ্রয় নেওয়া
● বাইরে থাকলে উঁচু ভবন, দেয়াল ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে থাকা
● লিফট ব্যবহার না করা


ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয়

● আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা
● আহতদের উদ্ধার ও চিকিৎসা
● মৃতদেহ উদ্ধার ও দাফন
● খাদ্য–পানি সরবরাহ
● অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ
● অস্থায়ী আশ্রয়
● যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার
● আফটারশক মোকাবিলা
● সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত তৎপরতা


দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্গঠন

● ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের জরিপ
● প্রয়োজনে নতুন স্থানে বসতি স্থাপন
● পুনর্নির্মাণ
● সিসমিক জোনিং পুনর্বিবেচনা
● ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি ও রাজমিস্ত্রি প্রশিক্ষণ
● জনগণকে পুনর্বাসনে সম্পৃক্ত করা


ঢাকায় যে কোনো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পই বিপুল প্রাণহানি ও অমূল্য সম্পদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। মৃত্যু পুরোপুরি ঠেকানো না গেলেও প্রস্তুতির অভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখনই ব্যক্তি, পরিবার, কমিউনিটি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি নেওয়াই একমাত্র পথ।


#ভূমিকম্প #ঢাকা #নগরায়ণ #দুর্যোগ_ঝুঁকি #বাংলাদেশ #সিসমিক_ঝুঁকি #বিল্ডিং_কোড

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের নতুন শান্তি পরিকল্পনার মাঝেই পদ ছাড়ছেন কিথ কেলগ

ভূমিকম্প: ঢাকার জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি

০৩:২৩:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকা যে কোনো সময় মাঝারি বা বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে—অসংগঠিত নগরায়ণ, বিল্ডিং কোড না মানা এবং অতিরিক্ত জনঘনত্ব শহরটিকে বিশ্বের অন্যতম বিপন্ন নগরীতে পরিণত করেছে।


বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া শহরগুলোর অন্যতম। স্বাধীনতার পর অতি দ্রুত নগরায়ণ ঢাকাকে বিশ্বের প্রধান মেগাসিটিগুলোর একটিতে রূপ দিয়েছে। ২০০০ সালে এটি ছিল বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম শহর; ২০১০ সালে জনঘনত্ব ও বসবাসের অযোগ্যতার দিক থেকে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় নিম্নমানের শহরে পরিণত হয়।
অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, এলোমেলো নির্মাণ এবং খালি জায়গার অদক্ষ ব্যবহার শহরটিকে ভয়াবহ ভূমিকম্প-ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভবন ধসের ঘটনাগুলো নির্মিত পরিবেশের দুর্বলতাকে আরও স্পষ্ট করেছে।


ঢাকা কেন উচ্চঝুঁকিতে

● বাংলাদেশ ভূমিকম্প সক্রিয় অঞ্চলে অবস্থিত
● ঢাকায় মাঝারি ঝুঁকি থাকলেও জনঘনত্ব, খোলা জায়গার অভাব ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ একে দেশের সবচেয়ে বিপন্ন শহরে পরিণত করেছে
● দেশটি ভারতীয় ও ইউরেশীয় প্লেটের সীমানার কাছে; হিমালয়, শিলং মালভূমি, দাউকি ফল্ট ও বার্মিজ আর্কের প্রভাব রয়েছে
● হালুয়াঘাট এলাকায় নতুন সক্রিয় ফল্টের সন্ধান ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে


বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ইতিহাস

জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১–২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত ৪৬৫টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। যন্ত্রপাতির ঘাটতির কারণে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়া সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, বারবার মাঝারি কম্পন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে।


নির্মাণ ব্যর্থতা: মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা

● ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটতে পারে
● নিম্নমানের উপকরণ এবং বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন প্রধান ঝুঁকি
● বিল্ডিং কোড থাকলেও বাস্তবে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় না—ফলে অধিকাংশ ভবনই ভূমিকম্প-সহনশীল নয়


ঢাকার ঝুঁকির প্রধান কারণ

● অতিরিক্ত জনঘনত্ব
● ভূমিকম্প-পরবর্তী গ্যাসলাইন ও বিদ্যুৎলাইনের আগুনের ঝুঁকি
● উচ্চ ভবন ও শিল্পকারখানায় কোড না মানা
● খোলা জায়গার মারাত্মক অভাব
● সড়ক দখল ও সংকীর্ণ রাস্তা—উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা


সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পূর্বাভাস

বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটির উপ-সভাপতি মেহেদী আহমেদ আনসারীর মতে—
● ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার প্রায় ৩৫% ভবন ধসে যেতে পারে
● মৃত্যু হতে পারে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের
● সময়ভেদে মৃত্যু ২২,০০০–২৮,০০০ জন পর্যন্ত হতে পারে
● আহত হতে পারে ৮৬,০০০–১,০৭,০০০ ব্যক্তি
● ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ১.৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার

অন্য বিশেষজ্ঞদের মতে—
● ৪–৫ তলা ইট-নির্ভর ভবন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
● ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ১ লাখ ৩১ হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে


ঢাকায় ভূমিকম্প উৎপত্তির সম্ভাব্য উৎস

● ২০০১ সালের ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্প শহরের নিকটেই উৎপত্তি হয়েছিল
● মাইক্রোসিসমিক ডেটা অন্তত চারটি উৎস নির্দেশ করে
● ঢাকাকে বিশ্বের শীর্ষ ২০ ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় রাখা হয়েছে


ভূতাত্ত্বিক অবস্থা

● ঢাকা বছরে ৩০.৬ মিমি হারে উত্তর-পূর্বে সরে যাচ্ছে
● এতে বিকৃতি বাড়ছে, যা ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটাতে পারে
● মাটি ও তলের ফল্ট লাইন উচ্চ গতির কণার অঞ্চলগুলোর সঙ্গে মিলে যাওয়ায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে


ঢাকার উচ্চঝুঁকির অঞ্চল

● পশ্চিম ঢাকা: মিরপুর–কল্যাণপুর থেকে পাগলা (বুড়িগঙ্গা বরাবর)
● পূর্ব ঢাকা: উত্তরখান–বাড্ডা থেকে ডেমরা (বালু নদী বরাবর)
● ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে গ্রাউন্ড অ্যাক্সিলারেশন ০.৩–০.৩৫ পর্যন্ত হতে পারে
● পাঁচতলার বেশি ভবনে বিশেষ সিসমিক নিরাপত্তা প্রয়োজন

ঢাকাকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে—অতি উচ্চ, উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন ঝুঁকি।


ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও প্রস্তুতি

ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, কিন্তু ক্ষতি কমানো সম্ভব। এজন্য দরকার—
● দুর্যোগ-পূর্ব প্রস্তুতি
● ঝুঁকি হ্রাস
● দুর্যোগ-পরবর্তী দ্রুত উদ্ধার ও পুনর্বাসন


দীর্ঘমেয়াদি করণীয়

● সঠিক সিসমিক জোনিং ও মাইক্রো-জোনিং ম্যাপ
● কঠোরভাবে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন
● সব ভবনে ভূমিকম্প-সহনশীল নকশা বাধ্যতামূলক
● পানি–বিদ্যুৎ–যোগাযোগসহ সব অবকাঠামো ভূমিকম্প-নিরাপদ
● স্কুল ও হাসপাতালের মতো গণস্থাপনা ভূমিকম্প-সহনশীল করে নির্মাণ
● দুর্যোগ-শিক্ষা শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা


মধ্যমেয়াদি করণীয়

● ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের রেট্রোফিটিং বা পুনর্গঠন
● কমিউনিটি-ভিত্তিক সচেতনতা ও মহড়া
● স্থানীয় এনজিওকে প্রশিক্ষণ প্রদান


স্বল্পমেয়াদি করণীয়

● ভারী বস্তু নিচে রাখা
● ভঙ্গুর জিনিস নিরাপদে সংরক্ষণ
● গ্যাস/বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি সুরক্ষিতভাবে স্থাপন
● দাহ্য পদার্থ নিরাপদে রাখা
● বিছানা জানালা থেকে দূরে রাখা
● পরিবারের সবাইকে গ্যাস–বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করার নিয়ম শেখানো
● বাড়িতে ফার্স্ট-এইড বক্স রাখা


ভূমিকম্পের সময় করণীয়

● আতঙ্কিত না হওয়া
● বাইরে দৌড় না দেওয়া
● টেবিল, বেড বা দরজার নিচে আশ্রয় নেওয়া
● বাইরে থাকলে উঁচু ভবন, দেয়াল ও বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে থাকা
● লিফট ব্যবহার না করা


ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয়

● আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা
● আহতদের উদ্ধার ও চিকিৎসা
● মৃতদেহ উদ্ধার ও দাফন
● খাদ্য–পানি সরবরাহ
● অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ
● অস্থায়ী আশ্রয়
● যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার
● আফটারশক মোকাবিলা
● সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত তৎপরতা


দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্গঠন

● ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের জরিপ
● প্রয়োজনে নতুন স্থানে বসতি স্থাপন
● পুনর্নির্মাণ
● সিসমিক জোনিং পুনর্বিবেচনা
● ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি ও রাজমিস্ত্রি প্রশিক্ষণ
● জনগণকে পুনর্বাসনে সম্পৃক্ত করা


ঢাকায় যে কোনো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পই বিপুল প্রাণহানি ও অমূল্য সম্পদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। মৃত্যু পুরোপুরি ঠেকানো না গেলেও প্রস্তুতির অভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখনই ব্যক্তি, পরিবার, কমিউনিটি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি নেওয়াই একমাত্র পথ।


#ভূমিকম্প #ঢাকা #নগরায়ণ #দুর্যোগ_ঝুঁকি #বাংলাদেশ #সিসমিক_ঝুঁকি #বিল্ডিং_কোড