যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–গবেষণার বড় অংশই এগিয়ে নিচ্ছেন চীনে জন্ম নেওয়া বিজ্ঞানীরা। অভিবাসন কঠোরতা, নিরাপত্তা শঙ্কা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও এআই খাতে চীনা গবেষকদের অবদান যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি অগ্রগতির অন্যতম প্রধান শক্তি হয়ে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় চীনে জন্ম নেওয়া বিজ্ঞানীদের উপস্থিতি দীর্ঘদিনের। অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ায় ভবিষ্যতে এই মেধাপ্রবাহ ব্যাহত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
মার্ক জাকারবার্গের নতুন উদ্যোগে চীনা গবেষকদের ভূমিকা
২০২৫ সালের জুনে মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ‘সুপার–বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগার’ ঘোষণা করেন। সেখানে প্রকাশিত ১১ জন নতুন গবেষকের মধ্যে ৭ জনই চীনে জন্ম নেওয়া।
মেটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ল্যাব বহু বছর ধরেই চীনা গবেষকদের ওপর নির্ভরশীল—নতুন নিয়োগ সেই বাস্তবতাকে আরও স্পষ্ট করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনা মেধার ধারাবাহিক অবদান
যুক্তরাষ্ট্র–চীন উত্তেজনা, অভিবাসন–নিয়ন্ত্রণ এবং প্রযুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যেও সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দেখাচ্ছে—
চীনে জন্ম ও শিক্ষাপ্রাপ্ত গবেষকেরাই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারে বহু বছর নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

গবেষণার প্রধান তথ্য
১. শীর্ষ এআই গবেষকদের বড় অংশ চীনা
২০২০ সালে পলসন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা যায়—
বিশ্বের শীর্ষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষকদের এক–তৃতীয়াংশই চীনা, এবং তাদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছেন।
২. তারা যুক্তরাষ্ট্রেই থাকছেন
কার্নেগি এনডাউমেন্টের নতুন গবেষণা বলছে—
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত শীর্ষ ১০০ চীনা গবেষকের মধ্যে ৮৭ জন এখনো যুক্তরাষ্ট্রেই গবেষণায় নিয়োজিত।
বিশ্লেষক ম্যাট শিহান বলেন—
“যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্প চীনা মেধার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। বাধা–বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও তারা এখানে টিকে আছেন।”
যুক্তরাষ্ট্র–চীন যৌথ গবেষণা এখনো সক্রিয়
alphaXiv–এর আরেক গবেষণায় দেখা গেছে—
২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যৌথ গবেষণা যে কোনো দুই দেশের তুলনায় বেশি।
অ্যাপল, গুগল, ইন্টেল, সেলসফোর্সসহ অনেক কোম্পানি চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য গবেষণা প্রকাশ করেছে।
মাইক্রোসফট একাই—৯২টি গবেষণায় চীনকে সহ–গবেষক হিসেবে পেয়েছে।
(alphaXiv, Apple, Google, Intel, Salesforce, Microsoft → মূল নাম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়ায় অনূদিত হয়নি।)
নিরাপত্তা শঙ্কা ও বাস্তবতা
সিলিকন ভ্যালির একটি অংশে এখনো ধারণা—চীনা গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত গোপন তথ্য নিজেদের সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন।
২০২৩ সালে ওপেনএআই–এর অভ্যন্তরীণ বার্তা ব্যবস্থা হ্যাক হয়ে তথ্য চুরির ঘটনাও এ ধারণাকে শক্তি দিয়েছে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে—
ঝুঁকি থাকলেও চীনা গবেষকদের অবদান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গবেষণাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হেলেন টোনার বলেন—
“চীনা মেধাপ্রবাহ বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র এআই দৌড়ে পিছিয়ে পড়বে—বিশেষত চীনের তুলনায়।”

মেটার এআই টিমে চীনা গবেষকদের প্রভাব
মেটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টিমে চীনা গবেষকদের স্পষ্ট প্রভাব আছে।
অনেক কর্মী মজা করে বলেন—মেটায় দুই ভাষা জানা জরুরি:
১. হ্যাক (মেটার নিজস্ব প্রোগ্রামিং ভাষা)
২. মান্দারিন
২০২৫ সালে মেটা ৬,৩০০টি এইচ–১বি ভিসা অনুমোদন পেয়েছে—অ্যামাজনের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক।
অভিবাসন কঠোরতার কারণে গবেষকদের দুশ্চিন্তা
চীনা গবেষকদের অনেকে জানান—
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা ও কাজ করা এখন অনেক কঠিন হয়ে গেছে।
ভিসা পাওয়া কঠিন, আর বাইরে গেলে ফিরতে পারবেন কি না—নিয়েও উদ্বেগ আছে।
অনেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অভিজ্ঞতার পর চীনে ফিরে যাচ্ছেন।
কোম্পানির ভেতরেও বাড়ছে উত্তেজনা
২০২৫ সালের অক্টোবরে অ্যানথ্রপিকের গবেষক ইয়াও শুয়ানইউ লিখে জানান—
তিনি কোম্পানি ছাড়ছেন, কারণ নেতৃত্ব চীনকে “বড় নিরাপত্তা হুমকি” বলেছিল।
তার ভাষায়—
“আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই। আমার মনে হয়, কোম্পানির বেশিরভাগ কর্মীই একমত নন।”
চীনা গবেষকদের ওপর কঠোর নীতি প্রয়োগ করলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাত বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
সরকারি উত্তেজনা থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে—
আমেরিকার এআই বিপ্লবের পিছনে সবচেয়ে বড় শক্তি এখনো চীনা মেধা।
#ট্যাগ
#যুক্তরাষ্ট্র #চীন #এআইগবেষণা #প্রযুক্তি #মেধাপ্রবাহ #অভিবাসন #মেটা #কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















