কেলগের বিদায় ও নতুন শান্তি রূপরেখা
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগ আগামী জানুয়ারিতে পদ ছাড়তে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে যে নতুন শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হচ্ছে, তার প্রস্তুতির মধ্যেই এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত সামনে এল। খসড়া পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেনকে কিছু দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট ধরনের অস্ত্র ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে হবে। পরিকল্পনাটি মূলত ব্যবসায়ী থেকে কূটনীতিক বনে যাওয়া স্টিভ হুইটকফ এবং ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা কিরিল দিমিত্রিয়েভের তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে।
এই প্রস্তাব বর্তমান পশ্চিমা অবস্থানের সঙ্গে স্পষ্টভাবে সাংঘর্ষিক, যেখানে ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার কথা বলা হয়। কিয়েভ ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে, নতুন কোনো চুক্তি যদি ২০১৪ সাল থেকে দখলকৃত এলাকা স্থায়ীভাবে ছেড়ে দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করে, তারা তা কঠিনভাবে বিবেচনা করবে। ইউরোপীয় মিত্রদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, তাড়াহুড়া করে করা সমঝোতা যুদ্ধক্ষেত্রে সামান্য চাপ বাড়লেই ভেঙে পড়তে পারে। অন্যদিকে ট্রাম্প শিবিরের যুক্তি, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ অর্থনীতি ও জনমত দুদিক থেকেই ক্লান্তি তৈরি করছে, ঠিক এই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নতুন কূটনৈতিক পথ খোলার সুযোগ আছে।

কেলগের অতীত ভূমিকা ও ইঙ্গিতবাহী প্রস্থান
দলীয় অভ্যন্তরে কেলগের প্রভাব কমে আসছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। ইউক্রেন ও রাশিয়া ইস্যুতে হুইটকফ–দিমিত্রিয়েভ গোপন যোগাযোগকে গুরুত্ব দেওয়ায় প্রচলিত কূটনৈতিক চ্যানেল ও নিরাপত্তা নীতিনির্ধারকরা একধরনের সাইডলাইনে চলে গেছেন। দীর্ঘদিনের ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ কেলগ নিরাপত্তা সহায়তা ও নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ধরে রাখার পক্ষে ছিলেন বলে সহকর্মীরা জানান। তাঁর বিদায় মানে ঐতিহ্যগত নিরাপত্তা কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত আরেকটি কণ্ঠস্বর হারানো।
কেলগের নাম যুক্ত আছে ট্রাম্প যুগের বেশ কিছু আলোচিত ঘটনার সঙ্গে। ২০১৯ সালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের সেই টেলিফোন আলাপ, যেখানে বাইডেন পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুরোধ উঠে আসে, সেই কল শুনেছিলেন কেলগও। এই আলাপ থেকেই শুরু হয় ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসন প্রক্রিয়া, যদিও তিনি পরে বলেন, তখন তাঁর কাছে কথোপকথনে তেমন কোনো সমস্যা মনে হয়নি। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসে নির্বাচন ফলের অনুমোদন ঠেকাতে ট্রাম্পের চাপ সৃষ্টি করার ঘটনাতেও তিনি সাক্ষ্য দেন, যেখানে পেন্সকে “যথেষ্ট কঠোর নও” বলে ধমক দিতে শোনা যায় ট্রাম্পকে।

নতুন শান্তি উদ্যোগ নিয়ে এখন ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে সতর্ক হিসাব–নিকাশ চলছে। কিয়েভের জন্য মূল প্রশ্ন, সীমান্ত ও নিরাপত্তা নিয়ে কতটা ছাড় দেওয়া সম্ভব, আর তাতে জনগণ কতটা সন্তুষ্ট থাকবে। ইউরোপের দেশগুলো বোঝার চেষ্টা করছে, এক দেশে দখল মেনে নেওয়া হলে আগামী দিনে অন্য কোথাও একই নজির তৈরি হবে কি না। একই সঙ্গে, রাশিয়া আসলেই কোনো স্থায়ী সমঝোতা মানবে, নাকি স্বল্প বিরতির পর আবার চাপ বাড়াবে, সেই অনিশ্চয়তাও রয়ে গেছে। ওয়াশিংটনে এদিকে কংগ্রেসের কঠোর অংশ ইউক্রেনকে ভূমি ছেড়ে দেওয়ার শর্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে প্রস্তুত, অন্যদিকে ছোট একটি গোষ্ঠী মনে করে, তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কতকটা মূল্য দিয়েও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ার ফলই ঠিক করবে, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের বিসর্জনগুলো কি টেকসই ন্যায্য শান্তিতে রূপ নেবে, নাকি শুধু সাময়িক বিরতি দিয়ে দখলকৃত এলাকা স্থায়ী করে দেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















