জ্বালানি রূপান্তর, নিরাপত্তা ও সরবরাহ শৃঙ্খলার হিসাব
ইলেকট্রিক গাড়ি, বায়ুচালিত টারবাইন থেকে শুরু করে উন্নত অস্ত্রব্যবস্থা—অসংখ্য উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যে ব্যবহৃত বিরল ধাতুর সরবরাহ দীর্ঘদিন ধরেই মূলত চীনের হাতে। এখন সেই নির্ভরতা কমাতে নতুন করে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ, ঋণ–সহায়তা ও গবেষণা তহবিল গড়ে তুলছে যুক্তরাষ্ট্র। লক্ষ্য—নিজ দেশে ও মিত্রদেশগুলোতে খনি, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ম্যাগনেট তৈরির সক্ষমতা বাড়িয়ে বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খলা দাঁড় করানো। নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, কোনো ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা কিংবা রপ্তানি সীমাবদ্ধতা দেখা দিলে তা যেন পুরো শিল্পকে অচল করে না দেয়, সে জন্য এখনই প্রস্তুতি দরকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কয়েক দশকের বিনিয়োগ ও ঢিলেঢালা পরিবেশগত মানদণ্ডের কারণে চীন এ খাতে একক আধিপত্য তৈরি করে ফেলেছে, যা রাতারাতি বদলে দেওয়া কঠিন।
নতুন কর্মসূচির মূল কেন্দ্রে আছে সরকারি ঋণ নিশ্চয়তা, ট্যাক্স–ইনসেনটিভ এবং কম দূষণকারী প্রযুক্তি উন্নয়নে সহায়তা। খনিজ আলাদা করার জন্য কম বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার, পুরোনো খনি বর্জ্য থেকে উপাদান পুনরুদ্ধার কিংবা ই–বর্জ্য থেকে মূল্যবান ধাতু উদ্ধার—এসব কৌশল নিয়ে কাজ চলছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরও নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে ক্রয়–চুক্তি বাড়াচ্ছে, যাতে দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা নিশ্চয়তা পেয়ে বিনিয়োগকারীরা বড় প্রকল্পে অর্থ ঢালতে উৎসাহিত হয়। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও অন্য মিত্রদের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এক ধরনের “বহুকেন্দ্রীক” সরবরাহ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, যেখানে খনি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ একাধিক দেশে ছড়িয়ে থাকবে।

পরিবেশগত ঝুঁকি ও অর্থনৈতিক হিসাব–নিকাশ
এই উদ্যোগের সঙ্গে জুড়ে আছে সংবেদনশীল পরিবেশগত প্রশ্ন। সম্ভাব্য খনি এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন আশঙ্কা করছেন, নতুন প্রকল্প মানে আবারও ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ, রেডিওঅ্যাকটিভ বর্জ্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি। নীতিনির্ধারকেরা আশ্বস্ত করছেন, আধুনিক প্রযুক্তি ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আগের ভুল পুনরাবৃত্তি হবে না; তবু বাস্তবে পর্যবেক্ষণ দুর্বল হলে ঝুঁকি থেকেই যায়। জলবায়ু–বান্ধব প্রযুক্তির জন্য খনিজ আহরণ বাড়াতে গিয়ে স্থানীয় পরিবেশের কতটা ক্ষতি মেনে নেওয়া হবে—এই কঠিন সমীকরণ নিয়মিতই সামনে আসছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খলা দাঁড় করাতে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, আর বাজারদর কমে গেলে অনেক প্রকল্পের লাভজনকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। সাবসিডি থাকলেও উৎপাদন খরচ চীনের তুলনায় বেশি থাকায় কোম্পানিগুলোকে দক্ষতা, পুনর্ব্যবহার এবং উচ্চ মূল্য সংযোজিত পণ্যে জোর দিতে হবে। নীতি–পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র এই খাতকে শুধু “কমোডিটি ব্যবসা” হিসেবে নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে দেখছে; ফলে স্বল্পমেয়াদি লাভ–ক্ষতির চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি কমানোই অগ্রাধিকার। ভবিষ্যতে এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ধরে রাখা, স্থানীয় কমিউনিটির আস্থা অর্জন এবং গবেষণা ল্যাব থেকে বাস্তব কারখানা পর্যন্ত প্রযুক্তি দ্রুত নিয়ে যাওয়ার ওপর।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















