কেন্টাকির লুইভিলে ইউপিএস-এর এমডি-১১ কার্গো বিমান দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্তকারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পেয়েছেন—বিমানের পাইলন অংশে ক্লান্তি-জনিত ফাটল। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) জানিয়েছে, এসব ফাটলই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বড় ভূমিকা রাখছে।
তদন্তে কী পাওয়া গেছে: এনটিএসবি
এনটিএসবি তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানায়, বাম দিকের পাইলনের আফ্ট মাউন্ট লাগে ক্লান্তি-জনিত ফাটলের পাশাপাশি অতিরিক্ত চাপের কারণে ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
এই পাইলন অংশটি ডানার সঙ্গে ইঞ্জিনকে যুক্ত করে রাখে। তদন্তকারীরা বলছেন, এক পাশের সাপোর্ট ফাটলের কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভেঙে যাওয়ার পর অন্য পাশ অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে ভেঙে পড়ে।
এনটিএসবি বলছে, এসব ফাটল দুর্ঘটনার আগেই তৈরি হয়েছিল এবং সময়ের সঙ্গে তা আরও বিস্তৃত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা: ফাটল কেন ভয়ংকর
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ব্রিকহাউস বলেন, “এটা বড় সূত্র। এ ধরনের ফাটল একাধিক ফ্লাইটে জমে ওঠে।”

আরেক বিশেষজ্ঞ জন কক্স জানান, ক্লান্তি-জনিত ফাটল ধীরে ধীরে যন্ত্রাংশকে দুর্বল করে দেয়।
তার ভাষায়, “একসময় এমন অবস্থা হয় যখন কাঠামো আর চাপ সহ্য করতে পারে না, আর তখন ভেঙে পড়ে।”
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, তদন্তকারীদের এখন জানতে হবে—রক্ষণাবেক্ষণের সময় এসব ফাটল কেন ধরা পড়েনি।
রক্ষণাবেক্ষণ ইতিহাসের দিকে নজর
যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তকারীরা ইতোমধ্যে ৩৪ বছর বয়সী এই ইউপিএস কার্গো বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ইতিহাস খতিয়ে দেখছেন।
দুর্ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে বিমানটি টেক্সাসে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক এসটি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সুবিধায় মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই যন্ত্রাংশ বিশেষ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী যথেষ্ট ‘সাইকেল’ সম্পন্ন করেনি।
পুরনো এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার মিল
প্রাথমিক প্রতিবেদনে ১৯৭৯ সালে শিকাগোতে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ডিসি-১০ দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে।

তখন উড্ডয়নের সময় বিমানের বাম দিকের ইঞ্জিন-পাইলন অংশ ডানা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সেই দুর্ঘটনাতেও এনটিএসবি ক্লান্তি-জনিত ফাটল খুঁজে পেয়েছিল।
বোয়িং, ইউপিএস ও ফেডএক্সের প্রতিক্রিয়া
দুর্ঘটনার পর ইউপিএস ও ফেডএক্স তাদের সমগ্র এমডি-১১ বহর সতর্কতামূলকভাবে গ্রাউন্ড করে।
বোয়িং-এর সুপারিশ অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এফএএও একই ধরনের নকশার কারণে এমডি-১১ ও ডিসি-১০ উড়োজাহাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করে।
এনটিএসবি চেয়ার জেনিফার হোমেন্ডি জানান, তদন্তের অংশ হিসেবে বোয়িং অতিরিক্ত পরীক্ষা ও মডেলিং করছে।
১৯৯৭ সালে ম্যাকডনেল ডগলাসের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর থেকেই বোয়িং এমডি-১১ প্রোগ্রামের দায়িত্বে রয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রায় এক মাস পর সাধারণত প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ পেতে প্রায় এক বছর সময় লাগে।
#বিমানদুর্ঘটনা #তদন্ত #যুক্তরাষ্ট্র #ইউপিএস #এনটিএসবি #বোয়িং #এমডি১১ #রক্ষণাবেক্ষণ #নিরাপত্তা #লুইভিল
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















