নতুন সিসমিক জোনিং মানচিত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বাঁশখালী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রাজশাহী, সন্দ্বীপ, বগুড়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, রাঙামাটি এবং রংপুরের বড় অংশকে উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগের মানচিত্রে কম ঝুঁকিপূর্ণ দেখানো অনেক এলাকাই বাস্তবে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্ত ও মূল্যায়ন দুর্যোগ মোকাবিলার গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেশের ভূতাত্ত্বিক গঠন, সিসমোটেকটনিক বৈশিষ্ট্য, ভূমিকম্প উৎস এবং বিদ্যমান মানচিত্র বিশ্লেষণ করে নতুন ঝুঁকি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সিসমোটেকটনিক তথ্যের সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশ ও আশপাশ অঞ্চলের জন্য পূর্ণাঙ্গ সিসমোটেকটনিক মানচিত্র নেই। তথ্যের ঘাটতি ও উৎস–পরামিতির অনিশ্চয়তার কারণে নতুনভাবে প্রস্তুত করা ভূমিকম্প–ক্যাটালগের ওপর ভিত্তি করে একটি সরল মডেল ব্যবহার করা হয়েছে।
ভূমিকম্প ক্যাটালগ প্রস্তুতি
গবেষণায় প্রথমে একটি বিশদ ভূমিকম্প ক্যাটালগ তৈরি করা হয়, যাতে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের প্রকৃতি ও বিস্তার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। ISC, ISS, USGS, RRL এবং স্বাধীন গবেষকদের সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
তথ্যগুলোকে সমমানের স্কেলে রূপান্তর, ডেটার পূর্ণতা যাচাই এবং নির্ভরযোগ্য সময়সীমা নির্ধারণ—সবকিছুই এই ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। বড় মাত্রার দীর্ঘমেয়াদি তথ্য এবং ক্ষুদ্র মাত্রার সাম্প্রতিক তথ্য—উভয়ই ব্যবহৃত হয়েছে।
ভূমিকম্প ঝুঁকি মানচিত্র
সরল ক্যাটালগ–ভিত্তিক মডেল দিয়ে বাংলাদেশের ৪২টি স্থানের ভূমিকম্প ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়েছে। মানচিত্রে ৫০, ১০০ এবং ২০০ বছরের পুনরাবৃত্তি সময়ের ভিত্তিতে অনুভূমিক পিক গ্রাউন্ড অ্যাকসেলারেশন (PGA) প্রদর্শন করা হয়েছে।

৫০ বছরের নকশাজীবনে ১০% সম্ভাব্য অতিক্রমের ভিত্তিতেও একটি ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। যেখানে PGA ≥ ১৫০ সেমি/সেকেন্ড² হতে পারে, সেই এলাকাগুলোর জন্যও পৃথক মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
দেশের ৩৪টি স্থানের জন্য ৫০, ১০০ এবং ২০০ বছরের পুনরাবৃত্তি সময়ে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের মাত্রা (Ms) নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন সিসমিক জোনিং মানচিত্র
গবেষণার তথ্য বলছে, BNBC 1993–এর মানচিত্রে কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত অনেক এলাকাই বাস্তবে উল্লেখযোগ্যভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। ২০০ বছরের PGA–র ভিত্তিতে নতুন সিসমিক জোনিং মানচিত্র প্রস্তাব করা হয়েছে।
উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে চিহ্নিত এলাকাগুলো হলো:
বাঁশখালী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রাজশাহী, সন্দ্বীপ, বগুড়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, রাঙামাটি এবং রংপুরের বড় অংশ।
জনসংখ্যার উপর সম্ভাব্য প্রভাব
১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নতুন ঝুঁকি মানচিত্রের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়—
জোন ৩ (উচ্চ ঝুঁকি): ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ
জোন ২ (মধ্যম ঝুঁকি): ৫ কোটি ২০ লাখ মানুষ
জোন ১ (নিম্ন ঝুঁকি): ১ কোটি ৯ লাখ মানুষ
এতে স্পষ্ট, দেশের বড় একটি অংশ উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকি অঞ্চলে বাস করছে।
গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের বহু এলাকায় ভূমিকম্প ঝুঁকি পূর্বের ধারণার তুলনায় অনেক বেশি। ঝুঁকি মানচিত্র, জনসংখ্যা ঘনত্ব ও বসতির অবস্থান মিলিয়ে দেখা গেলে দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা এবং নীতিনির্ধারণে দ্রুত পরিবর্তন আনা জরুরি।
দেশের প্রকৌশল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা–সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এই গবেষণার ফলাফল ব্যবহার করে ঝুঁকি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















