ওয়াশিংটন–প্রিটোরিয়া কূটনৈতিক টানাপোড়েন
যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে জানিয়েছে, জোহানেসবার্গের জি২০ শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে কোনো নাটকীয় ইউ-টার্ন হয়নি; কার্যত বয়কটের অবস্থানই বহাল থাকছে। দক্ষিণ আফ্রিকা আগে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান বদলে পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় যোগ দেবে এবং এটিকে শেষ মুহূর্তের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু ওয়াশিংটনের ভাষ্য, কোনো উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে অংশ নেবেন না; কেবল পরের বছরের আয়োজক দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত থাকবেন। এতে দুই দেশের বিবরণী একেবারে ভিন্ন রূপ পায় এবং মানবাধিকার, কৃষিনীতি ও ভূরাজনীতিতে জমে থাকা অস্বস্তি আরও স্পষ্ট হয়। সমালোচকদের মতে, বহুপাক্ষিক মঞ্চের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আস্থাহীনতা ও ঘরোয়া রাজনৈতিক চাপ এই স্নায়ুযুদ্ধের পেছনে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্সি এই উপস্থিতিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছিল, যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে মেরামত হচ্ছে। শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু কৃষকের জমি নীতি ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনার পর এমন বার্তা তাদের জন্য প্রতীকমূলক স্বস্তি বয়ে আনত। কিন্তু বাস্তবে, কেবল সীমিত উপস্থিতি এবং শক্ত ভাষার ব্যাখ্যা ভিন্ন চিত্র দেয়। এতে বোঝা যায়, ওয়াশিংটন এখন অনেক বেশি বেছে বেছে অংশ নিচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক সিগন্যাল ও অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী হিসাব অর্থনৈতিক এজেন্ডার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটি ছিল গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর জোরালো করার সুযোগ; সেখানে প্রধান অংশীদারের অনাগ্রহ পুরো আয়োজনের আলো কিছুটা নিভিয়ে দিয়েছে।

গ্লোবাল ফোরামে অংশগ্রহণের নতুন অঙ্ক
জি২০–তে বড় অর্থনীতিগুলোর অনুপস্থিতি বা হ্রাসপ্রাপ্ত উপস্থিতি শুধু কূটনৈতিক সংকেত নয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতিকেও প্রভাবিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ায় ঋণ পুনর্গঠন, উন্নয়ন অর্থায়ন ও বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির মতো এজেন্ডায় ঐকমত্য গড়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এতে অন্যান্য উদীয়মান শক্তির প্রভাব বাড়ে; তারাও নিজেদের মতো করে যৌথ ঘোষণার ভাষা ও অগ্রাধিকার নির্ধারণে শক্ত অবস্থান নিতে পারে। মধ্যম আয়ের ও ছোট দেশগুলোর জন্য এটি বিকল্প সুযোগ হলেও, একইসঙ্গে ঝুঁকিও; তাদের উন্নয়ন এজেন্ডা বড় শক্তির দ্বন্দ্বের আড়ালে চাপা পড়ে যেতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বারবার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব কমিয়ে কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানকে অনুপস্থিত রেখে অসন্তোষ প্রকাশের কৌশল নিয়েছে, বিশেষ করে যেখানে তারা গণতন্ত্রপন্থী মানদণ্ডের অবনতি দেখতে পায়। কিন্তু একই সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি নিরাপত্তা ও সরবরাহ শৃঙ্খলার মতো বিষয়ে আলোচনা করার জন্য জি২০–কে তারা এখনও জরুরি মঞ্চ হিসেবে ধরে রেখেছে। ফলে একদিকে কঠোর ভাষা ও বয়কট, অন্যদিকে টেকনিক্যাল লেভেলে অংশগ্রহণ—এই দ্বৈত বার্তা ফোরামের কার্যকারিতাকে দুর্বল করে। জোহানেসবার্গ সম্মেলন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র–দক্ষিণ আফ্রিকা টানাপোড়েন সেই বৃহত্তর প্রবণতারই আরেকটি অধ্যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















