ঘনিষ্ঠ মানুষদের সহায়তা ও থেরাপি উদ্বেগ ও লজ্জা কমাতে সাহায্য করতে পারে
চাকরি হারানো শুধু আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও গভীর প্রভাব ফেলে। হতাশা, উদ্বেগ, সম্পর্কের টানাপোড়েন—সব মিলিয়ে এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব বাড়তে থাকায় অনেকেই এই মানসিক চাপে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
চাকরি হারানোর পর মানসিক বিপর্যয়
৫৮ বছর বয়সী বেলিন্ডা বহু বছর প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার পর ২০২২ সালে চাকরি হারান। বাবার অসুস্থতার কারণে কিছুদিন কাজের বাইরে থাকার পর যখন তিনি আবার চাকরি খুঁজতে গেলেন, তিনি কোনো সুযোগই পেলেন না। প্রায় ছয় মাস ধরে চেষ্টা করেও তিনি একটি চাকরিও পাননি—এমনকি যেসব চাকরির জন্য ডিগ্রি প্রয়োজন ছিল না, সেখানেও না।
তিনি পরিবার ও সঞ্চয়ের সাহায্যে টিকে আছেন। কিন্তু এই পুরো প্রক্রিয়া তার আত্মসম্মানকে ভেঙেচোরা করে দিয়েছে। এখন তিনি প্রশ্ন করতে ভয় পান—“চাকরি খোঁজা কেমন চলছে?” কারণ তার চারপাশের সবাই কাজ করছে, কিন্তু তিনি নন।
গবেষণায় দেখা গেছে, বেকারত্ব অবসাদ, উদ্বেগ, দাম্পত্য সমস্যা এমনকি মাদকাসক্তির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বেকার থাকা মানুষের সংখ্যা এখন তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর বড় বড় কোম্পানি যেমন UPS, Amazon ও GM-এর ছাঁটাইয়ের খবর পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস অ্যামহার্স্টের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ওফের শ্যারোন বলেন, চাকরি হারানোর মানসিক ক্ষতি একটি বড় সংকট, যা খুব কম গুরুত্ব পাচ্ছে।

নিজের অনুভূতি স্বীকার করা
অনেকেই চাকরি হারানোর কষ্টকে পাশ কাটিয়ে রেজুমে তৈরি ও আবেদন করার দিকে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই অনুভূতিগুলোকে গুরুত্বসহকারে স্বীকার করা জরুরি।
বেলিন্ডার ক্ষেত্রে, মানসিক চাপ তাকে মানুষের সাথে কথা বলা বা নেটওয়ার্কিং করতেও আগ্রহহীন করে তুলেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের অনুভূতি মুখে বলা অনেক সময়েই মনকে হালকা করতে পারে।
নিউ জার্সির কেলি ফস্টার প্রায় এক বছর ধরে বেকার। তিনি থেরাপি নিচ্ছেন মানসিক চাপ কমাতে। একদিন তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত দশটি প্রত্যাখ্যান ইমেল পেয়েছিলেন। এমনকি একটি বইয়ের দোকানেও তার আবেদন মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে বাতিল করা হয়।
থেরাপি ব্যয়বহুল হতে পারে, তবে কম আয়ের মানুষের জন্য অনেক থেরাপিস্ট স্লাইডিং স্কেল ফি ব্যবহার করেন। কমিউনিটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবাও বিকল্প হতে পারে।
পরিস্থিতিকে নতুনভাবে দেখা
বিশেষজ্ঞ ডেভিড ব্লুস্টেইন বলেন, চাকরি না পাওয়া মানেই আপনি অযোগ্য নন। অর্থনৈতিক মন্দা, বয়সজনিত বৈষম্য—এগুলো অনেক সময় মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। এগুলো মনে রাখা লজ্জা ও আত্মদোষ কমাতে সাহায্য করে।
ফ্লোরিডার মায়ামি বিচে বসবাসকারী ৫৬ বছর বয়সী ভিক্টোরিয়া হেউয়ার প্রায় এক বছর ধরে বেকার। তার সঞ্চয়ও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি বলেন, অনেক সময় মনে হয়, “কেউ আমার কথা শুনতে চায় না। কেউ আমাকে চায় না।”
নিজেকে স্থির রাখতে তিনি প্রতিদিন জীবনের ভালো দিকগুলোকে কৃতজ্ঞতার সাথে ভাবেন—তার বাগান, সন্তান, এবং আর্থিকভাবে সহায়তাকারী তার সঙ্গী। কৃতজ্ঞতা চর্চা তাকে আবার চেষ্টা করার শক্তি জোগায়।
সহায়তার বৃত্ত তৈরি করা
চাকরি হারানোর পর মানসিক সহায়তা নেটওয়ার্কিংয়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যারিয়ার কাউন্সেলর অ্যামি মাজুর বলেন, নিজের চারপাশের মানুষদের নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকুন—যারা আপনাকে সবচেয়ে বেশি মানসিক সমর্থন দেন, তাদের রাখুন ‘ইনার সার্কেলে’। যারা সমর্থন দেন না, তাদের সাথে সময় কমাতে হবে।
ইলিনয়ের ওক পার্কে বসবাসকারী ৪১ বছর বয়সী জেফ লারোও এক বছর আগে ১০০ সহকর্মীর সাথে ছাঁটাই হন। তারা মিলে ডিসকোর্ডে একটি সহায়তা গ্রুপ তৈরি করেছেন। জেফ বলেন, তার ক্ষতিপূরণ জানুয়ারিতে শেষ হবে, আর প্রতিদিনই তার মনে উদ্বেগ জমে থাকে।
অক্টোবরে তিনি গ্রুপে লিখেছিলেন—“আমি যেসব চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছিলাম, কোনোটাই সম্ভবত হবে না। খুব খারাপ লাগছে। পজিটিভ ভাইবস দরকার।”
এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি ডজনখানেক সাপোর্টিভ মেসেজ, হার্ট ইমোজি ও ‘হাগ’ পান। জেফের ভাষায়—“ছোট একটা বিষয় মনে হলেও, এটি আমার জন্য অনেক বড় সহায়তা।”
#চাকরি #হারানো #মানসিক #চাপ #বেকারত্ব #উদ্বেগ #হতাশা #সহায়তা #থেরাপি #চাকরি_খোঁজা #দীর্ঘমেয়াদি_বেকার #যুক্তরাষ্ট্র #অর্থনীতি #মনোবিজ্ঞান #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















