০৩:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
খুলনার লবণচরা এলাকায় যুবককে গুলি, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর ওপর মুখোশধারীদের হামলা, ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ ‘রেড জোন’ সিলেট: বড় ভূমিকম্পে ধসে পড়তে পারে হাজারো ভবন, নতুন করে সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞরা টঙ্গীতে জুটের বস্তার ৫ গুদামে আগুন, মসজিদের এসি পুড়ে গেছে বরিশাল ভূমিকম্পের পর হঠাৎ ভাঙনে বানারীপাড়ায় বসতবাড়ি ও জমি সন্ধ্যা নদীগর্ভে কুতুবদিয়া উপকূল থেকে ২৮ জেলেসহ ফিশিং ট্রলার ধরে নেওয়ার অভিযোগ, পরিবারগুলোর কান্না থামছে না ভূমিকম্পে সাবেক মেয়র মনজুরের ৭ তলা ভবন হেলে পড়ায় এলাকা ঘিরে কড়া পুলিশি প্রহরা কেরানিগঞ্জ জিনজিরায় ৭ তলা ভবন হেলে পড়ায় আতঙ্ক, বাসিন্দাদের রাত কাটছে রাস্তায় সাভারে আবার কম্পন, কারখানা–মহল্লা জুড়ে টানা উদ্বেগ বিজেপির অভিযোগ—অবৈধ ভোটার রক্ষা করতে এসআইআর বাধা দিচ্ছে তৃণমূল

কুয়েতের শীত: প্রকৃতি, অবসর আর নতুন করে প্রাণের সন্ধান

শীতের আগমনে কুয়েতের রূপ বদলে যায়

কুয়েতের বছরের বেশিরভাগ সময় ধরে তীব্র গরমে ঘরবন্দি থাকতে হলেও শীত এলে সবকিছু বদলে যায়। আবহাওয়া ঠান্ডা ও আরামদায়ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসে, প্রিয় জায়গাগুলোতে ঘুরে বেড়ায় এবং সেইসব কর্মকাণ্ড উপভোগ করে, যা প্রচণ্ড গরমের কারণে সম্ভব হয় না। শীত যেন কুয়েতের বাসিন্দাদের জন্য এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে—বাইরের জীবনে ফেরার উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।

স্বস্তিদায়ক আবহাওয়ায় নতুন জীবন

ইংরেজি শিক্ষিকা মোনা আল ফারাজ বলেন, গরমকালে তাপমাত্রা এতটাই চরম থাকে যে তাকে ঘরের ভেতরে থাকতে হয়। “কিন্তু শীতে আমি মুক্তি পাই,” বলেন তিনি। “আমি সমুদ্রের ধারে হাঁটা, পার্কে সাইক্লিং আর বাইরে সময় কাটাতে ভালোবাসি। শীতের আবহাওয়া মৃদু, খুব ঠান্ডাও নয়—একেবারে নিখুঁত।”

প্রায়ই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা পেরিয়ে যাওয়া কুয়েতের গ্রীষ্মের পর বাসিন্দারা শীতের অপেক্ষায় থাকেন। হিসাবরক্ষক হাসান আল-সাইয়েঘ বলেন, “আমরা সারা বছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করি। আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো গাল্ফ রোডে হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্র দেখা এবং সুক আল-মুবারকিয়া ঘুরে দেখা।”

মরুভূমির টানে ঘরে ফেরা

শীত মানেই মরুভূমিতে ছুটে যাওয়ার মৌসুম। কুয়েতের ঐতিহ্য, নীরবতা এবং বিস্তীর্ণ আকাশের সৌন্দর্য আবারও উপভোগ করার সুযোগ এনে দেয় এই সময়। ওমর আল-সালেম বলেন, “শীতে যদি কুয়েতে আসেন, মরুভূমিতে যেতেই হবে। এখানে ক্যাম্পিং করা অসাধারণ অভিজ্ঞতা—নীরব, সুন্দর আর একেবারে উপযুক্ত আবহাওয়া।”

ইঞ্জিনিয়ার তারিক হাদ্দাদও একই মত প্রকাশ করেন। “শীতে মরুভূমি-ই আমার প্রিয় জায়গা। দৃশ্যটা এত শান্ত যে মনে হয় প্রকৃতি নিজেই আপনাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। তারার নিচে ক্যাম্পিং—এটা জীবনে একবার হলেও সকলের করা উচিত। শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে এক অকৃত্রিম বিশ্রাম মেলে এখানে।”

সমুদ্রতীরেও জমে ওঠে প্রাণের উচ্ছ্বাস

শীতকালে শুধু মরুভূমি নয়, কুয়েতের সমুদ্রতীরও প্রাণ ফিরে পায়। শিক্ষার্থী ইউসুফ আল-মুতাইরি বলেন, “আমি কুয়েত টাওয়ার্স আর বিভিন্ন সৈকতে যেতে ভালোবাসি, বিশেষ করে আল বিদা সৈকতে। এই সময়ে বাতাস ঠান্ডা, সমুদ্র যেন আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে। গরমকালের মতো ঘরে বন্দি থাকতে হয় না।”

কেনাকাটা ও বিনোদন কেন্দ্রে ভিড়

অনেকে আবার শীতের সময় শহরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোকেই বেছে নেন। শিক্ষার্থী রামি খালিল জানান, “আল কৌত, ৩৬০ মল আর মারিনা মল—সবগুলোই শীতে ঘুরে দেখার মতো। তবে আমি বলব, মুবারকিয়া আর পুরনো সালমিয়া মার্কেট ঘুরে দেখুন—শীতের ঠান্ডা হাওয়ায় এসব জায়গার আলাদা এক আকর্ষণ আছে। মানুষ বাইরে বের হয়, ভিড় বাড়ে—সবকিছু অনেক বেশি প্রাণবন্ত লাগে।”

মাহমুদ ইসমাইল বলেন, “এভিনিউস মল, আল মুরুজ আর আল কৌত শীতের আদর্শ আড্ডাস্থল। উইন্টার ওয়ান্ডারল্যান্ড আর খাইরানও পরিবার আর অতিথিদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য দারুণ। আবহাওয়া সবকিছু আরও উপভোগ্য করে তোলে।”

শীতের আনন্দে এক অভিন্ন অনুভূতি

দেশজুড়ে এই সময় মানুষের মধ্যে এক ধরনের সক্রিয়তা তৈরি হয়। শিক্ষার্থী খালেদ দাব্বাঘ বলেন, “শীতের আবহাওয়া মানুষকে বাইরে যেতে আরও উৎসাহ দেয়। কুয়েতের শীত অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে আলাদা—শান্ত, উজ্জ্বল আর আনন্দে ভরা। বাইরে বের হওয়ার সত্যিকারের মূল্য শীতেই বোঝা যায়।”


#KuwaitWinter #KuwaitLifestyle #KuwaitTravel #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনার লবণচরা এলাকায় যুবককে গুলি, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে

কুয়েতের শীত: প্রকৃতি, অবসর আর নতুন করে প্রাণের সন্ধান

০১:৩০:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

শীতের আগমনে কুয়েতের রূপ বদলে যায়

কুয়েতের বছরের বেশিরভাগ সময় ধরে তীব্র গরমে ঘরবন্দি থাকতে হলেও শীত এলে সবকিছু বদলে যায়। আবহাওয়া ঠান্ডা ও আরামদায়ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসে, প্রিয় জায়গাগুলোতে ঘুরে বেড়ায় এবং সেইসব কর্মকাণ্ড উপভোগ করে, যা প্রচণ্ড গরমের কারণে সম্ভব হয় না। শীত যেন কুয়েতের বাসিন্দাদের জন্য এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে—বাইরের জীবনে ফেরার উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।

স্বস্তিদায়ক আবহাওয়ায় নতুন জীবন

ইংরেজি শিক্ষিকা মোনা আল ফারাজ বলেন, গরমকালে তাপমাত্রা এতটাই চরম থাকে যে তাকে ঘরের ভেতরে থাকতে হয়। “কিন্তু শীতে আমি মুক্তি পাই,” বলেন তিনি। “আমি সমুদ্রের ধারে হাঁটা, পার্কে সাইক্লিং আর বাইরে সময় কাটাতে ভালোবাসি। শীতের আবহাওয়া মৃদু, খুব ঠান্ডাও নয়—একেবারে নিখুঁত।”

প্রায়ই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা পেরিয়ে যাওয়া কুয়েতের গ্রীষ্মের পর বাসিন্দারা শীতের অপেক্ষায় থাকেন। হিসাবরক্ষক হাসান আল-সাইয়েঘ বলেন, “আমরা সারা বছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করি। আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো গাল্ফ রোডে হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্র দেখা এবং সুক আল-মুবারকিয়া ঘুরে দেখা।”

মরুভূমির টানে ঘরে ফেরা

শীত মানেই মরুভূমিতে ছুটে যাওয়ার মৌসুম। কুয়েতের ঐতিহ্য, নীরবতা এবং বিস্তীর্ণ আকাশের সৌন্দর্য আবারও উপভোগ করার সুযোগ এনে দেয় এই সময়। ওমর আল-সালেম বলেন, “শীতে যদি কুয়েতে আসেন, মরুভূমিতে যেতেই হবে। এখানে ক্যাম্পিং করা অসাধারণ অভিজ্ঞতা—নীরব, সুন্দর আর একেবারে উপযুক্ত আবহাওয়া।”

ইঞ্জিনিয়ার তারিক হাদ্দাদও একই মত প্রকাশ করেন। “শীতে মরুভূমি-ই আমার প্রিয় জায়গা। দৃশ্যটা এত শান্ত যে মনে হয় প্রকৃতি নিজেই আপনাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। তারার নিচে ক্যাম্পিং—এটা জীবনে একবার হলেও সকলের করা উচিত। শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে এক অকৃত্রিম বিশ্রাম মেলে এখানে।”

সমুদ্রতীরেও জমে ওঠে প্রাণের উচ্ছ্বাস

শীতকালে শুধু মরুভূমি নয়, কুয়েতের সমুদ্রতীরও প্রাণ ফিরে পায়। শিক্ষার্থী ইউসুফ আল-মুতাইরি বলেন, “আমি কুয়েত টাওয়ার্স আর বিভিন্ন সৈকতে যেতে ভালোবাসি, বিশেষ করে আল বিদা সৈকতে। এই সময়ে বাতাস ঠান্ডা, সমুদ্র যেন আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে। গরমকালের মতো ঘরে বন্দি থাকতে হয় না।”

কেনাকাটা ও বিনোদন কেন্দ্রে ভিড়

অনেকে আবার শীতের সময় শহরের বিনোদনকেন্দ্রগুলোকেই বেছে নেন। শিক্ষার্থী রামি খালিল জানান, “আল কৌত, ৩৬০ মল আর মারিনা মল—সবগুলোই শীতে ঘুরে দেখার মতো। তবে আমি বলব, মুবারকিয়া আর পুরনো সালমিয়া মার্কেট ঘুরে দেখুন—শীতের ঠান্ডা হাওয়ায় এসব জায়গার আলাদা এক আকর্ষণ আছে। মানুষ বাইরে বের হয়, ভিড় বাড়ে—সবকিছু অনেক বেশি প্রাণবন্ত লাগে।”

মাহমুদ ইসমাইল বলেন, “এভিনিউস মল, আল মুরুজ আর আল কৌত শীতের আদর্শ আড্ডাস্থল। উইন্টার ওয়ান্ডারল্যান্ড আর খাইরানও পরিবার আর অতিথিদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য দারুণ। আবহাওয়া সবকিছু আরও উপভোগ্য করে তোলে।”

শীতের আনন্দে এক অভিন্ন অনুভূতি

দেশজুড়ে এই সময় মানুষের মধ্যে এক ধরনের সক্রিয়তা তৈরি হয়। শিক্ষার্থী খালেদ দাব্বাঘ বলেন, “শীতের আবহাওয়া মানুষকে বাইরে যেতে আরও উৎসাহ দেয়। কুয়েতের শীত অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে আলাদা—শান্ত, উজ্জ্বল আর আনন্দে ভরা। বাইরে বের হওয়ার সত্যিকারের মূল্য শীতেই বোঝা যায়।”


#KuwaitWinter #KuwaitLifestyle #KuwaitTravel #সারাক্ষণ_রিপোর্ট