০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের মৎস্যখাতে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক এখনো শ্রমিকের আইনগত স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত ভারতের নতুন শ্রম আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভে ট্রেড ইউনিয়নগুলো একই দিনে দুই ভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সামনে যে চ্যালেঞ্জ আশাশুনি–সাতক্ষীরা সড়কে অ্যাম্বুলেন্স–ইজিবাইক সংঘর্ষে আহত ৬, ঝুঁকিতে রোগীবাহী যান খুলনা–চুকনগর হাইওয়েতে থ্রি–হুইলার চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি আত্রাইয়ে মাছবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী সেনা সদস্য নিহত যশোরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী–এলাকাবাসী সংঘর্ষে আহত অন্তত ৫ হাতিয়ায় পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রেপ্তার, এলাকায় উত্তেজনা লক্ষ্মীপুর–রামগতি সড়কে যাত্রীবাহী বাসে আগুন, অল্পের জন্য রক্ষা সবাই চট্টগ্রাম–রাঙ্গামাটি সড়কে কাভারভ্যান–সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১

ভারতের নতুন শ্রম আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভে ট্রেড ইউনিয়নগুলো

শ্রমিক অধিকারের ‘প্রতারণা’ অভিযোগে রাস্তায় ইউনিয়নগুলো

ভারতের নতুন শ্রম কোড কার্যকর হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে বৃহৎ বিক্ষোভে নেমেছে ট্রেড ইউনিয়নগুলো। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাইসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকেরা পতাকা ও ব্যানার নিয়ে মিছিল করেছে, নতুন আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছে। ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, মজুরি, শিল্প-সম্পর্ক, সামাজিক নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসংক্রান্ত একাধিক পুরোনো আইনকে সমন্বয় করে আনা চারটি শ্রম কোড বাস্তবে শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি আর সংগঠিত হওয়ার অধিকারকে দুর্বল করছে। তারা অভিযোগ করেন, নতুন কাঠামোর ফলে নিয়োগকর্তারা সহজে শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়বে, আর স্থায়ী চাকরি ক্রমে কমে যাবে।

ইউনিয়নগুলোর দাবি, করপোরেট ও বড় শিল্পগোষ্ঠীর চাপেই সরকার এই পরিবর্তন এনেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে কারখানা গেট, পরিবহন টার্মিনাল, সরকারি দপ্তর ও শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ হয়েছে। সংগঠকরা জানান, কয়েক মিলিয়ন শ্রমিক এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। পুরোনো আইনগুলোতে যে সব সুরক্ষা ছিল, নতুন কাঠামো সেই সব ধারা শিথিল করেছে বলে তাদের অভিযোগ। ধীরে ধীরে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা জাতীয় কর্মবিরতি, শিল্পভিত্তিক ধর্মঘট ও দিল্লিমুখী ‘লং মার্চ’-এর মতো পদক্ষেপেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সরকারের ‘আধুনিকীকরণ’ যুক্তি ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক হিসাব

মোদি সরকার বলছে, নতুন শ্রম কোড ভারতের পুরোনো ও জটিল আইনি কাঠামোকে আধুনিক করেছে, ব্যবসা পরিচালনার ঝামেলা কমিয়েছে এবং এক ছাতার নিচে আনার ফলে প্রয়োগ আরও সহজ হবে। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলা জটিল নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় ছিল, ফলে নতুন আইন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াবে, আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতা আরও বাড়বে। বিনিয়োগপন্থী মহলও বিষয়টিকে ‘বিজনেস–ফ্রেন্ডলি’ সংস্কার হিসেবে দেখছে।

কিন্তু ইউনিয়নগুলো বলছে, বাস্তবে শ্রমিকের দৈনন্দিন জীবনে যে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, সরকার তার কোনো স্পষ্ট জবাব দিতে পারছে না। তারা উল্লেখ করছে, নতুন আইন অনুযায়ী বড় প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অনুমতির বাধ্যবাধকতা কমেছে, ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার বাধ্যবাধকতাও নরম হয়েছে। এর ফলে দর-কষাকষির ক্ষমতা কমবে, বিশেষ করে অনিরাপদ খাতে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকি বাড়বে। বিরোধী দলগুলোও এই ইস্যুতে সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে শুরু করেছে, যা আগামী নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শ্রমবাজারের এই দ্বন্দ্ব ভারতের ‘উন্নয়ন’ কাকে কতটা সুবিধা দিচ্ছে—এই বড় রাজনৈতিক প্রশ্নের সঙ্গেও জুড়ে যাবে। আপাতত ইউনিয়নগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, তারা একদিনের প্রতীকী কর্মসূচি নয়, দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে আছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশের মৎস্যখাতে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক এখনো শ্রমিকের আইনগত স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত

ভারতের নতুন শ্রম আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভে ট্রেড ইউনিয়নগুলো

০৫:৪৯:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

শ্রমিক অধিকারের ‘প্রতারণা’ অভিযোগে রাস্তায় ইউনিয়নগুলো

ভারতের নতুন শ্রম কোড কার্যকর হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে বৃহৎ বিক্ষোভে নেমেছে ট্রেড ইউনিয়নগুলো। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাইসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকেরা পতাকা ও ব্যানার নিয়ে মিছিল করেছে, নতুন আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছে। ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, মজুরি, শিল্প-সম্পর্ক, সামাজিক নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসংক্রান্ত একাধিক পুরোনো আইনকে সমন্বয় করে আনা চারটি শ্রম কোড বাস্তবে শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা, ন্যায্য মজুরি আর সংগঠিত হওয়ার অধিকারকে দুর্বল করছে। তারা অভিযোগ করেন, নতুন কাঠামোর ফলে নিয়োগকর্তারা সহজে শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়বে, আর স্থায়ী চাকরি ক্রমে কমে যাবে।

ইউনিয়নগুলোর দাবি, করপোরেট ও বড় শিল্পগোষ্ঠীর চাপেই সরকার এই পরিবর্তন এনেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে কারখানা গেট, পরিবহন টার্মিনাল, সরকারি দপ্তর ও শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ হয়েছে। সংগঠকরা জানান, কয়েক মিলিয়ন শ্রমিক এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। পুরোনো আইনগুলোতে যে সব সুরক্ষা ছিল, নতুন কাঠামো সেই সব ধারা শিথিল করেছে বলে তাদের অভিযোগ। ধীরে ধীরে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা জাতীয় কর্মবিরতি, শিল্পভিত্তিক ধর্মঘট ও দিল্লিমুখী ‘লং মার্চ’-এর মতো পদক্ষেপেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সরকারের ‘আধুনিকীকরণ’ যুক্তি ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক হিসাব

মোদি সরকার বলছে, নতুন শ্রম কোড ভারতের পুরোনো ও জটিল আইনি কাঠামোকে আধুনিক করেছে, ব্যবসা পরিচালনার ঝামেলা কমিয়েছে এবং এক ছাতার নিচে আনার ফলে প্রয়োগ আরও সহজ হবে। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে চলা জটিল নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় ছিল, ফলে নতুন আইন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াবে, আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতা আরও বাড়বে। বিনিয়োগপন্থী মহলও বিষয়টিকে ‘বিজনেস–ফ্রেন্ডলি’ সংস্কার হিসেবে দেখছে।

কিন্তু ইউনিয়নগুলো বলছে, বাস্তবে শ্রমিকের দৈনন্দিন জীবনে যে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, সরকার তার কোনো স্পষ্ট জবাব দিতে পারছে না। তারা উল্লেখ করছে, নতুন আইন অনুযায়ী বড় প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অনুমতির বাধ্যবাধকতা কমেছে, ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার বাধ্যবাধকতাও নরম হয়েছে। এর ফলে দর-কষাকষির ক্ষমতা কমবে, বিশেষ করে অনিরাপদ খাতে কাজ করা শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকি বাড়বে। বিরোধী দলগুলোও এই ইস্যুতে সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে শুরু করেছে, যা আগামী নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শ্রমবাজারের এই দ্বন্দ্ব ভারতের ‘উন্নয়ন’ কাকে কতটা সুবিধা দিচ্ছে—এই বড় রাজনৈতিক প্রশ্নের সঙ্গেও জুড়ে যাবে। আপাতত ইউনিয়নগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে, তারা একদিনের প্রতীকী কর্মসূচি নয়, দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে আছে।