০৭:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
প্রতারণার ফাঁদে আটক ফিলিপাইনের নারীরা এবং তাদের ফেলে যাওয়া পরিবার দক্ষিণ কোরিয়া মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় অস্ত্র রপ্তানি বাড়াতে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমারের নাগরিকদের অস্থায়ী সুরক্ষা বাতিল বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ বাংলাদেশের মৎস্যখাতে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক এখনো শ্রমিকের আইনগত স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত ভারতের নতুন শ্রম আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভে ট্রেড ইউনিয়নগুলো একই দিনে দুই ভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সামনে যে চ্যালেঞ্জ আশাশুনি–সাতক্ষীরা সড়কে অ্যাম্বুলেন্স–ইজিবাইক সংঘর্ষে আহত ৬, ঝুঁকিতে রোগীবাহী যান খুলনা–চুকনগর হাইওয়েতে থ্রি–হুইলার চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি আত্রাইয়ে মাছবাহী ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী সেনা সদস্য নিহত

বাংলাদেশের মৎস্যখাতে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক এখনো শ্রমিকের আইনগত স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত

বাংলাদেশের মৎস্যখাতে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ যুক্ত, যার মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ সরাসরি এই খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা আইনগতভাবে “শ্রমিক” হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। এই দীর্ঘদিনের বঞ্চনা তাদের মৌলিক অধিকার—বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার—ব্যাহত করছে।

নিম্নে সহজ ভাষায়, পরিষ্কার কাঠামোয় সাজানো পুরো প্রতিবেদনের পুনর্লিখন ও অনুবাদ উপস্থাপন করা হলো।

শ্রমিক পরিচয় না থাকায় জোরালো আহ্বান

ঢাকায় দৈনিক স্টার সেন্টারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এবং জার্মান থিংক-ট্যাংক ফ্রিডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুঙের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে বক্তারা বলেন, মৎস্যশ্রমিকদের আইনগত সুরক্ষা অত্যন্ত দুর্বল। তাদের জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থাও অপ্রতুল।

বর্তমান শ্রম আইন শুধুমাত্র ট্রলার এবং ফিশ প্রসেসিং শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে নদী, হাওর-বাওর, উপকূল এবং অন্যান্য স্থানে কাজ করা বিপুল সংখ্যক শ্রমিক একেবারেই আইনগত সুরক্ষার বাইরে রয়েছেন।

নব শ্রম আইনে ধর্মঘট করা যাবে না, কিন্তু কাজ করতে হবে ১৪ ঘণ্টা - Dainik  Statesman

শ্রম আইন থেকে ব্যাপক বাদ পড়া

• শ্রম আইনের আওতার বাইরে থাকায় অধিকাংশ মৎস্যশ্রমিক কোনো প্রকার শ্রম পরিদর্শন কাঠামোর নিরাপত্তা পান না।
• চাকরির শর্ত, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো প্রায়ই অগ্রাহ্য করা হয়।
• চিংড়ি ও ট্রলার শিল্প ছাড়া অন্য কোথাও কোনো নির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নেই।

 স্বাস্থ্যঝুঁকি, নিরাপত্তাহীনতা ও মানবিক সংকট

• কর্মক্ষেত্রে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়, কিন্তু চিকিৎসা সুবিধা বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত।
• ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) বা ন্যায্য মজুরি—কোনোটিই সবার জন্য নিশ্চিত নয়।
• ‘দাদন’ বা আগাম ঋণের মাধ্যমে অনেক শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদি ঋণ-ফাঁদে আটকা পড়ে থাকেন।
• সমুদ্রে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জলদস্যু হামলার বিরুদ্ধে যথাযথ জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা নেই। আধুনিক সংকেত ব্যবস্থার অভাব মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
• মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার যে সহায়তা দেয়, তা পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

আইন সংস্কারের জরুরি প্রয়োজন

সংলাপে বক্তারা বলেন, মৎস্যশ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনগত সংস্কার এখন অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের সাংবিধানিক অঙ্গীকার, শ্রম নীতি এবং আইএলও কনভেনশন ১৮৮-এর আলোকে নিম্নোক্ত সুপারিশ করা হয়:

Employment Law Attorneys | Statman & Harris | Cincinnati

• সকল মৎস্যশ্রমিককে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘শ্রমিক’ হিসেবে পরিচয় নিশ্চিত করা।
• জাতীয় শ্রম আইনের আওতায় সব শ্রেণির মৎস্যশ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা।
• শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করা।
• সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ এবং ক্ষতিপূরণের একটি সমন্বিত কাঠামো প্রণয়ন করা।
• শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও প্রতিনিধিত্বের অধিকার নিশ্চিতে আইনগত সুযোগ তৈরি করা।

 জাতীয় পর্যায়ে ঐক্যমতের আহ্বান

সংলাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল—গবেষণার ফলাফল নীতিনির্ধারকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা, জাতীয় পর্যায়ে সহমত তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় নীতিসংস্কারের জন্য সমর্থন জোগাড় করা।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিলস উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জাতীয় মৎস্যশ্রমিক অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক নাঈমুল আহসান জুয়েল। গবেষণা উপস্থাপন করেন বিলস-এর উপপরিচালক অ্যাডভোকেট নাজরুল ইসলাম।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রতারণার ফাঁদে আটক ফিলিপাইনের নারীরা এবং তাদের ফেলে যাওয়া পরিবার

বাংলাদেশের মৎস্যখাতে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক এখনো শ্রমিকের আইনগত স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত

০৬:৪৬:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের মৎস্যখাতে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ যুক্ত, যার মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ সরাসরি এই খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তারা আইনগতভাবে “শ্রমিক” হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। এই দীর্ঘদিনের বঞ্চনা তাদের মৌলিক অধিকার—বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার—ব্যাহত করছে।

নিম্নে সহজ ভাষায়, পরিষ্কার কাঠামোয় সাজানো পুরো প্রতিবেদনের পুনর্লিখন ও অনুবাদ উপস্থাপন করা হলো।

শ্রমিক পরিচয় না থাকায় জোরালো আহ্বান

ঢাকায় দৈনিক স্টার সেন্টারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) এবং জার্মান থিংক-ট্যাংক ফ্রিডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুঙের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে বক্তারা বলেন, মৎস্যশ্রমিকদের আইনগত সুরক্ষা অত্যন্ত দুর্বল। তাদের জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থাও অপ্রতুল।

বর্তমান শ্রম আইন শুধুমাত্র ট্রলার এবং ফিশ প্রসেসিং শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে নদী, হাওর-বাওর, উপকূল এবং অন্যান্য স্থানে কাজ করা বিপুল সংখ্যক শ্রমিক একেবারেই আইনগত সুরক্ষার বাইরে রয়েছেন।

নব শ্রম আইনে ধর্মঘট করা যাবে না, কিন্তু কাজ করতে হবে ১৪ ঘণ্টা - Dainik  Statesman

শ্রম আইন থেকে ব্যাপক বাদ পড়া

• শ্রম আইনের আওতার বাইরে থাকায় অধিকাংশ মৎস্যশ্রমিক কোনো প্রকার শ্রম পরিদর্শন কাঠামোর নিরাপত্তা পান না।
• চাকরির শর্ত, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়গুলো প্রায়ই অগ্রাহ্য করা হয়।
• চিংড়ি ও ট্রলার শিল্প ছাড়া অন্য কোথাও কোনো নির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নেই।

 স্বাস্থ্যঝুঁকি, নিরাপত্তাহীনতা ও মানবিক সংকট

• কর্মক্ষেত্রে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়, কিন্তু চিকিৎসা সুবিধা বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত।
• ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) বা ন্যায্য মজুরি—কোনোটিই সবার জন্য নিশ্চিত নয়।
• ‘দাদন’ বা আগাম ঋণের মাধ্যমে অনেক শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদি ঋণ-ফাঁদে আটকা পড়ে থাকেন।
• সমুদ্রে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জলদস্যু হামলার বিরুদ্ধে যথাযথ জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা নেই। আধুনিক সংকেত ব্যবস্থার অভাব মৃত্যুঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
• মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার যে সহায়তা দেয়, তা পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়।

আইন সংস্কারের জরুরি প্রয়োজন

সংলাপে বক্তারা বলেন, মৎস্যশ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনগত সংস্কার এখন অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশের সাংবিধানিক অঙ্গীকার, শ্রম নীতি এবং আইএলও কনভেনশন ১৮৮-এর আলোকে নিম্নোক্ত সুপারিশ করা হয়:

Employment Law Attorneys | Statman & Harris | Cincinnati

• সকল মৎস্যশ্রমিককে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘শ্রমিক’ হিসেবে পরিচয় নিশ্চিত করা।
• জাতীয় শ্রম আইনের আওতায় সব শ্রেণির মৎস্যশ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা।
• শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করা।
• সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ এবং ক্ষতিপূরণের একটি সমন্বিত কাঠামো প্রণয়ন করা।
• শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও প্রতিনিধিত্বের অধিকার নিশ্চিতে আইনগত সুযোগ তৈরি করা।

 জাতীয় পর্যায়ে ঐক্যমতের আহ্বান

সংলাপের মূল উদ্দেশ্য ছিল—গবেষণার ফলাফল নীতিনির্ধারকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা, জাতীয় পর্যায়ে সহমত তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় নীতিসংস্কারের জন্য সমর্থন জোগাড় করা।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিলস উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জাতীয় মৎস্যশ্রমিক অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক নাঈমুল আহসান জুয়েল। গবেষণা উপস্থাপন করেন বিলস-এর উপপরিচালক অ্যাডভোকেট নাজরুল ইসলাম।