আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে তারা মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য দেওয়া অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদা বা টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস (TPS) বন্ধ করছে। ওয়াশিংটনের দাবি, মিয়ানমারের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নাগরিকদের দেশে ফিরে যাওয়া এখন নিরাপদ। এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে TPS সুবিধার আওতায় থাকা প্রায় চার হাজার মিয়ানমার নাগরিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ঘোষিত আসন্ন নির্বাচনের পরিকল্পনা দেশটির পরিস্থিতি উন্নতির ইঙ্গিত বহন করে। তাই আর TPS চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এই সিদ্ধান্ত গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কারণ মিয়ানমার এখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় নিমজ্জিত—২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে সেখানে সামরিক শাসন চলছে এবং দেশজুড়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ অব্যাহত রয়েছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ব্যাখ্যা
মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা সচিব ক্রিস্টি নোম জানান, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে মিয়ানমারের জন্য TPS আর প্রযোজ্য নয়। তাঁর ভাষায়, “এই সিদ্ধান্ত TPS-কে তার প্রকৃত উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে আনে—এটি অস্থায়ী। বার্মার পরিস্থিতি এমনভাবে উন্নত হয়েছে যে নাগরিকদের ফিরে যাওয়া এখন নিরাপদ।” তিনি আরও দাবি করেন যে মিয়ানমারে শাসনব্যবস্থা ও স্থিতিশীলতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে—জরুরি অবস্থার অবসান, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিকল্পনা, যুদ্ধবিরতি এবং স্থানীয় প্রশাসনে অগ্রগতি তার প্রমাণ।
২৬ জানুয়ারি TPS-এর মেয়াদ শেষ
স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় চার হাজার মিয়ানমার নাগরিকের জন্য প্রদত্ত TPS-এর মেয়াদ ২৬ জানুয়ারি শেষ হয়ে যাবে। এরপর তারা দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।

আন্তর্জাতিক মহলের অসন্তোষ
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা স্পষ্ট জানিয়েছে, সামরিক জান্তা যে নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে, তা মোটেও স্বাধীন বা সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিরোধী দলগুলোর অনেককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং দেশটির গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সু চি এখনো কারাগারে বন্দি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক জন সিফটন মার্কিন মূল্যায়নকে “অবাস্তব” বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, “শাসনব্যবস্থা বা স্থিতিশীলতার কোনো উন্নতি হয়নি। জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, আর সামরিক সরকারের নির্বাচনের ঘোষণা একটি নাটক—তা মজারও নয়, পুরোপুরি প্রতারণা।”
মার্কিন সতর্কতা
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এখনো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মিয়ানমারে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়—কারণ সেখানে অস্থিরতা, সশস্ত্র সংঘর্ষ এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারীদের অনিয়মিত আচরণের ঝুঁকি রয়েছে।

মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি
স্টেট ডিপার্টমেন্টের সর্বশেষ মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর সীমাবদ্ধতার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে। সামরিক বাহিনী ও বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় বেসামরিক এলাকায় বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সামরিক সরকারের হাতে আটক দুই শীর্ষ বিরোধী নেতার মৃত্যুর কথাও।
বাইডেন প্রশাসনের সময় বৃদ্ধি পেলেও ট্রাম্প তা বাতিল করলেন
ট্রাম্পের আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিয়ানমারের TPS আরও ১৮ মাস বাড়িয়েছিলেন, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৫ নভেম্বর। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের TPS বাতিল করার নীতিতে অটল রয়েছেন এবং মিয়ানমারও সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
TPS বাতিলের এই সিদ্ধান্ত বহু পরিবার ও ব্যক্তিকে উদ্বেগে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক মহল বলছে, মিয়ানমারে এখনো স্থিতিশীলতা ফিরেনি এবং জোর করে মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, এই মর্যাদা কেবল অস্থায়ী পরিস্থিতির জন্যই প্রযোজ্য, এবং মিয়ানমার এখন “ফিরে যাওয়ার মতো যথেষ্ট নিরাপদ।”
#আন্তর্জাতিকসম্পর্ক #মার্কিননীতি #মিয়ানমারসংকট #মানবাধিকার #যুক্তরাষ্ট্রঅভিবাসন #ট্রাম্পপ্রশাসন
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















