০৩:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৬ তম কিস্তি )

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪
  • 17
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

আনন্দ মুখ তুলে তিরস্কার করে বলল, ‘রাগ করবে না বলে রাগ

করছ যে?’

‘রাগ করব না, এমন কথা আমি কখনো বলিনি।’

আনন্দের চোখ ছলছল করে এল। ‘ঝগড়া করবার সুযোগ পেয়ে তুমি ছাড়তে সে আবার মাথা নিচু করে বলল, চাইছ না। আমি গোড়াতেই বলিনি আমি ছোটলোক হয়ে গেছি? আমার একটা খারাপ অসুখ হলে কি তুমি এমনি করে ঝগড়া করবে?’

হেরম্বের কথা সত্য সত্যই রুক্ষ হয়ে উঠেছিল। সে গলা নরম করে বলল, ‘ঝগড়া করিনি, আনন্দ। তুমি আমার সম্বন্ধে যা ভেবেছ তাতেও আমি রাগ করিনি। তুমি নিজেকে কি যেন একটা ঠাওরে নিয়েছ, আমার রাগের কারণ তাই। তুমি কি ভাব তুমি মানুষ নও, স্বর্গের দেবী?

কখনো খারাপ চিন্তা তোমার মনে আসবে না? মানুষের মনে হীনতা আসে, মানুষ সেজন্য আত্মগ্লানি ভোগ করে, কিন্তু এই তুচ্ছ সাময়িক ব্যাপারে তোমার মতো বিচলিত কেউ হয় না।’ আনন্দ বিবর্ণ মুখে বলল, ‘আমার কি ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে যদি জানতে’ ‘জানি। হওয়া কিন্তু উচিত নয়।

আজ তুমি একবার আমাকে বললে তোমার ভয় হচ্ছে, আমাদের ভালবাসা বুঝি মরেই গেল। -এখন বলছ আমি তোমাকে লোভ করেছি, ভালবাসিনি। এ সব চিত্তচাঞ্চল্য, আনন্দ, বিচলিত হয়ে এ সমস্তকে প্রশ্রয় দিতে নেই।’

আনন্দ আবার মুখ তুলেছিল, তার তাকাবার ভঙ্গী দেখে হেরম্বের মন উদ্বেগে ভরে গেল। আনন্দ যেন তাকে চিনছে, আনন্দের দামী দামী ভুল যেন ভেঙে যাচ্ছে একে একে, তার বিশ্বয়ের, বেদনার সীমা নেই।

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৫ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৫ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৬ তম কিস্তি )

১২:০০:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪
রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্যে আরেকটি নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছিলো। ভাষাকে মানুষের মুখের ভাষার কাছে নিয়ে আসা নয়, সাহিত্যে’র বিষয়ও হয়েছিলো অনেক বিস্তৃত। সাহিত্যে উঠে এসেছিলো পরিবর্তিত মন ও সমাজের নানান প্রাঙ্গন। সময়ের পথ ধরে সে যুগটি এখন নিকট অতীত। আর সে সাহিত্যও চিরায়ত সাহিত্য। দূর অতীত ও নিকট অতীতের সকল চিরায়ত সাহিত্য মানুষকে সব সময়ই পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। চিরায়ত সাহিত্যকে জানা ছাড়া বাস্তবে মানুষ তার নিজেকে সম্পূর্ণ জানতে পারে না।

সারাক্ষণের চিরায়ত সাহিত্য বিভাগে এবারে থাকছে মানিক বন্দোপধ্যায়ের দিবারাত্রির কাব্য।

দিবারাত্রির কাব্যে’র ভূমিকায় মানিক বন্দোপধ্যায় নিজেই যা লিখেছিলেন …..

দিবারাত্রির কাব্য আমার একুশ বছর বয়সের রচনা। শুধু প্রেমকে ভিত্তি করে বই লেখার সাহস ওই বয়সেই থাকে। কয়েক বছর তাকে তোলা ছিল। অনেক পরিবর্তন করে গত বছর বঙ্গশ্রীতে প্রকাশ করি।

দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক,- তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেইগুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের Projection-মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।

দিবা রাত্রির কাব্য

মানিক বন্দোপাধ্যায়

 

আনন্দ মুখ তুলে তিরস্কার করে বলল, ‘রাগ করবে না বলে রাগ

করছ যে?’

‘রাগ করব না, এমন কথা আমি কখনো বলিনি।’

আনন্দের চোখ ছলছল করে এল। ‘ঝগড়া করবার সুযোগ পেয়ে তুমি ছাড়তে সে আবার মাথা নিচু করে বলল, চাইছ না। আমি গোড়াতেই বলিনি আমি ছোটলোক হয়ে গেছি? আমার একটা খারাপ অসুখ হলে কি তুমি এমনি করে ঝগড়া করবে?’

হেরম্বের কথা সত্য সত্যই রুক্ষ হয়ে উঠেছিল। সে গলা নরম করে বলল, ‘ঝগড়া করিনি, আনন্দ। তুমি আমার সম্বন্ধে যা ভেবেছ তাতেও আমি রাগ করিনি। তুমি নিজেকে কি যেন একটা ঠাওরে নিয়েছ, আমার রাগের কারণ তাই। তুমি কি ভাব তুমি মানুষ নও, স্বর্গের দেবী?

কখনো খারাপ চিন্তা তোমার মনে আসবে না? মানুষের মনে হীনতা আসে, মানুষ সেজন্য আত্মগ্লানি ভোগ করে, কিন্তু এই তুচ্ছ সাময়িক ব্যাপারে তোমার মতো বিচলিত কেউ হয় না।’ আনন্দ বিবর্ণ মুখে বলল, ‘আমার কি ভয়ানক কষ্ট হচ্ছে যদি জানতে’ ‘জানি। হওয়া কিন্তু উচিত নয়।

আজ তুমি একবার আমাকে বললে তোমার ভয় হচ্ছে, আমাদের ভালবাসা বুঝি মরেই গেল। -এখন বলছ আমি তোমাকে লোভ করেছি, ভালবাসিনি। এ সব চিত্তচাঞ্চল্য, আনন্দ, বিচলিত হয়ে এ সমস্তকে প্রশ্রয় দিতে নেই।’

আনন্দ আবার মুখ তুলেছিল, তার তাকাবার ভঙ্গী দেখে হেরম্বের মন উদ্বেগে ভরে গেল। আনন্দ যেন তাকে চিনছে, আনন্দের দামী দামী ভুল যেন ভেঙে যাচ্ছে একে একে, তার বিশ্বয়ের, বেদনার সীমা নেই।

 

 

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৫ তম কিস্তি )

দিবারাত্রির কাব্য: মানিক বন্দোপধ্যায় ( ৫৫ তম কিস্তি )