স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের উত্থানের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশ্ব স্বর্ণ পরিষদের (ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল – ডব্লিউজিসি) প্রধান নির্বাহী ডেভিড টেইট বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৫,০০০ ডলার ছুঁতে পারে। তিনি জানান, সুদের হার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক স্বর্ণ কেনা, জাপানের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এই ঊর্ধ্বগতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে।
স্বর্ণের দামের সম্ভাব্য উত্থান
খালিজ টাইমস কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডেভিড টেইট বলেন, “স্বর্ণ আউন্স প্রতি ৫,০০০ ডলার ছুঁবে না—এটা আমাকে বিস্মিত করবে। যদি না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খুব ভাগ্যবান হন এবং ৬-৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাঝারি মুদ্রাস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতি কমাতে সক্ষম হন।” তাঁর মতে, স্বর্ণের দামে ধারাবাহিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো আর্থিক ব্যর্থতার আশঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের ঘূর্ণাবর্ত নিয়ে উদ্বেগ। তিনি মন্তব্য করেন, “যদি এই ঝুঁকি কমে যায়, স্বর্ণের উত্থানও থমকে যেতে পারে।”

ব্যাংকগুলোর পূর্বাভাস
বেশ কয়েকটি বৈশ্বিক ব্যাংক স্বর্ণের দাম ৫,০০০ ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিয়েছে। ব্যাংক অব আমেরিকা সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে জানিয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নিরাপদ সম্পদের চাহিদা বাড়ায় স্বর্ণ দ্রুত এই মাইলফলকে পৌঁছাতে পারে। এর আগে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গোল্ডম্যান স্যাকসও আউন্স প্রতি প্রায় ৫,০০০ ডলারের পূর্বাভাস দেয়। ডেভিড টেইট দুবাই প্রেশাস মেটালস কনফারেন্স ২০২৫–এ অংশ নিয়ে এসব মন্তব্য করেন।
বাজার পরিস্থিতি
২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে স্বর্ণ আউন্স প্রতি ৪,৩৮১ ডলার ছুঁয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ দামে উঠে। পরে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার কারণে দাম কিছুটা কমে যায়। গত বুধবার সকালে স্বর্ণের দাম দাঁড়ায় আউন্স প্রতি ৪,১৬২.৩১ ডলার, যা আগের দিনের তুলনায় ০.৪৮ শতাংশ বেশি। দুবাই বাজারে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম আবারও প্রতি গ্রাম ৫০০ দিরহাম অতিক্রম করেছে।
স্বর্ণের দামে উত্থানের কারণ
ডব্লিউজিসি প্রধানের মতে, স্বর্ণের দামের ঊর্ধ্বগতি পেছনে কয়েকটি বড় কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ও সুদের হার পরিস্থিতি স্বর্ণের বাজারকে প্রভাবিত করছে। বিশ্বব্যাপী শুল্ক ও বাণিজ্য নীতি বাজারে চাপ সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক স্বর্ণ কেনা বাজারকে আরও উষ্ণ করে তুলছে। চীনের বীমা তহবিল গুলোকে স্বর্ণ কেনার অনুমোদন দেওয়াও এই চাহিদা বাড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক বছর লাগবে বলে মনে হচ্ছে। এই অস্থিরতা স্বর্ণের দামের জন্য ইতিবাচক।”

বিশ্লেষকদের মতামত
এক্সএস ডটকমের বাজার বিশ্লেষক লিন ট্রান বলেন, স্বর্ণের দাম এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “ডলার দুর্বল হওয়া বা বন্ডের ফলন কমার পাশাপাশি মুদ্রানীতি প্রত্যাশা, মুদ্রাস্ফীতির দৃষ্টিভঙ্গি, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অবস্থা এবং নিরাপদ সম্পদের চাহিদা—সবই মিলিয়ে স্বর্ণের দাম বাড়ার পক্ষে কাজ করছে।” লিন ট্রান আরও জানান, স্বর্ণের স্বল্পমেয়াদি ঊর্ধ্বগতিকে ধরে রাখতে মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্য থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে।
#স্বর্ণবাজার #দামবৃদ্ধি #বিশ্বস্বর্ণপরিষদ #যুক্তরাষ্ট্রঅর্থনীতি #মুদ্রাস্ফীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















