০৬:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

এক বছরে ৪ হাজার কোটি সাশ্রয়, তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজ-আদা আমদানি বন্ধের উদ্যোগ

কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপচয় ঠেকাতে কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদার করে গত এক বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের তথ্য জানিয়েছেন কৃষি সচিব ড. মো. এমদাদুল্লাহ মিয়া। তিনি জানান, আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পেঁয়াজ ও আদায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে এবং এ দুই পণ্যের আমদানি বন্ধ করা হবে।

সেমিনারে কৃষি সচিবের বক্তব্য

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার সিআইআরডিএপ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত ‘কৃষি রূপান্তর: স্থানভিত্তিক কৃষিযন্ত্র ও কৃষিপণ্য রপ্তানির চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব তথ্য তুলে ধরেন ড. এমদাদুল্লাহ মিয়া।

তিনি জানান, প্রকল্পের দুর্নীতি ও অপচয় নিয়ন্ত্রণে আনার ফলে গত বছর মোট ৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া গেছে।

এ বছরও শুধু সার খাতে ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি জানান, যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ ৬০০ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু মাত্র ২০ কোটি টাকায় প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বাকিটা কোষাগারে ফেরত গেছে।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আসছে ভারতের পেঁয়াজ - বিডি২৪ভিউজ

কৃষিঋণ, উৎপাদন ও কৃষকের ন্যায্য দামের প্রসঙ্গ

কৃষি সচিব বলেন, কৃষকের ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা ছাড়া কৃষিবান্ধব অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি জানান, কৃষির সার্বিক উন্নয়নে ২৫ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে, যার খসড়া আগামী ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত হবে।

পেঁয়াজের দাম নিয়ে জনমতের সমালোচনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, অন্য সবজির দাম ১০০ টাকা হলে মানুষ সহজেই মেনে নেয়, কিন্তু পেঁয়াজ ১০০ টাকা হলেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন—কৃষক কি পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পাবে না?

তিনি আরও দুঃখ প্রকাশ করেন, আলুর কম দামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কিছু কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে—যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কৃষকের পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়নে সরকারের আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দেশীয় কৃষিযন্ত্র উৎপাদনের অগ্রগতি

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) যান্ত্রিক ধানচাষ প্রকল্পের পরিচালক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, কৃষিযন্ত্রে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পথে দেশ এগোচ্ছে। শ্রীলঙ্কা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় মানসম্মত কৃষিযন্ত্র দেশেই তৈরি হচ্ছে।

তবে ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দারুল হুদা জানান, উন্নত কৃষিযন্ত্র—বিশেষ করে কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ট্রান্সপ্ল্যান্টার—দেশে উৎপাদনের প্রধান বাধা হলো দুর্বল লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ৫৪ বছর পরও দেশে কোনো রাষ্ট্রীয় ইঞ্জিন উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান নেই।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আবারও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদ...

রপ্তানি সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বিশ্বব্যাপী অ্যাগ্রো-প্রসেসিং বাজারের আকার ৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার। তিনি কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১৮টি দপ্তর থেকে অনুমোদন নেওয়ার জটিলতা দূর করতে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার না থাকায় রপ্তানিকারকরা বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন।

এদিকে আম রপ্তানির প্রসঙ্গে জানান প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে আম রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে এবং আমদানি শূন্যে নেমে এসেছে।

তবে উচ্চ বিমানভাড়া ও নির্দিষ্ট কার্গো স্পেস না পাওয়ায় রপ্তানি বাড়াতে সমস্যা হচ্ছে। কৃষিপণ্যের জন্য বিমানে আলাদা নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।

রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও কৃষকের মর্যাদা

সেমিনারের সভাপতির বক্তব্যে বিএজেএফ সভাপতি শাহানওয়ার সাঈদ শাহীন বলেন, কৃষক ও কৃষির স্বার্থ রক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষি উন্নয়নে সুস্পষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

অন্যান্য বক্তারাও বলেন, কৃষিকে লাভজনক, শিক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ পেশায় রূপান্তর করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের জানান, দেশের কৃষিখাতে মোট অর্থায়নের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এমএফআই খাত থেকে, যা কৃষির অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

এক বছরে ৪ হাজার কোটি সাশ্রয়, তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজ-আদা আমদানি বন্ধের উদ্যোগ

০৫:৪০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপচয় ঠেকাতে কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলা জোরদার করে গত এক বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের তথ্য জানিয়েছেন কৃষি সচিব ড. মো. এমদাদুল্লাহ মিয়া। তিনি জানান, আগামী তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পেঁয়াজ ও আদায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে এবং এ দুই পণ্যের আমদানি বন্ধ করা হবে।

সেমিনারে কৃষি সচিবের বক্তব্য

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার সিআইআরডিএপ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত ‘কৃষি রূপান্তর: স্থানভিত্তিক কৃষিযন্ত্র ও কৃষিপণ্য রপ্তানির চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব তথ্য তুলে ধরেন ড. এমদাদুল্লাহ মিয়া।

তিনি জানান, প্রকল্পের দুর্নীতি ও অপচয় নিয়ন্ত্রণে আনার ফলে গত বছর মোট ৪ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া গেছে।

এ বছরও শুধু সার খাতে ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

একটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি জানান, যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ ৬০০ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু মাত্র ২০ কোটি টাকায় প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে এবং বাকিটা কোষাগারে ফেরত গেছে।

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আসছে ভারতের পেঁয়াজ - বিডি২৪ভিউজ

কৃষিঋণ, উৎপাদন ও কৃষকের ন্যায্য দামের প্রসঙ্গ

কৃষি সচিব বলেন, কৃষকের ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা ছাড়া কৃষিবান্ধব অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি জানান, কৃষির সার্বিক উন্নয়নে ২৫ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে, যার খসড়া আগামী ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত হবে।

পেঁয়াজের দাম নিয়ে জনমতের সমালোচনায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার ভাষায়, অন্য সবজির দাম ১০০ টাকা হলে মানুষ সহজেই মেনে নেয়, কিন্তু পেঁয়াজ ১০০ টাকা হলেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন—কৃষক কি পেঁয়াজের ন্যায্য দাম পাবে না?

তিনি আরও দুঃখ প্রকাশ করেন, আলুর কম দামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কিছু কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে—যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কৃষকের পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়নে সরকারের আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

দেশীয় কৃষিযন্ত্র উৎপাদনের অগ্রগতি

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) যান্ত্রিক ধানচাষ প্রকল্পের পরিচালক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, কৃষিযন্ত্রে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের পথে দেশ এগোচ্ছে। শ্রীলঙ্কা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় মানসম্মত কৃষিযন্ত্র দেশেই তৈরি হচ্ছে।

তবে ব্রির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দারুল হুদা জানান, উন্নত কৃষিযন্ত্র—বিশেষ করে কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ট্রান্সপ্ল্যান্টার—দেশে উৎপাদনের প্রধান বাধা হলো দুর্বল লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ৫৪ বছর পরও দেশে কোনো রাষ্ট্রীয় ইঞ্জিন উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান নেই।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আবারও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদ...

রপ্তানি সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বিশ্বব্যাপী অ্যাগ্রো-প্রসেসিং বাজারের আকার ৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার। তিনি কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ১৮টি দপ্তর থেকে অনুমোদন নেওয়ার জটিলতা দূর করতে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস’ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার না থাকায় রপ্তানিকারকরা বড় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন।

এদিকে আম রপ্তানির প্রসঙ্গে জানান প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে আম রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে এবং আমদানি শূন্যে নেমে এসেছে।

তবে উচ্চ বিমানভাড়া ও নির্দিষ্ট কার্গো স্পেস না পাওয়ায় রপ্তানি বাড়াতে সমস্যা হচ্ছে। কৃষিপণ্যের জন্য বিমানে আলাদা নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।

রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও কৃষকের মর্যাদা

সেমিনারের সভাপতির বক্তব্যে বিএজেএফ সভাপতি শাহানওয়ার সাঈদ শাহীন বলেন, কৃষক ও কৃষির স্বার্থ রক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষি উন্নয়নে সুস্পষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

অন্যান্য বক্তারাও বলেন, কৃষিকে লাভজনক, শিক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ পেশায় রূপান্তর করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের জানান, দেশের কৃষিখাতে মোট অর্থায়নের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এমএফআই খাত থেকে, যা কৃষির অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখছে।