০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ফ্লাইটে আরও ৩৯ বাংলাদেশি ফেরত

যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ প্রবেশ ও ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আরও ৩৯ বাংলাদেশিকে বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে দেশে ফিরিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হলো, যা অভিবাসন রুট ও দালালচক্র নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।


উদ্বাস্তু হয়ে দেশে ফেরা ৩৯ বাংলাদেশি

২৮ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে আরও ৩৯ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে ব্র্যাক জরুরি সহায়তা ও পরিবহনের ব্যবস্থা করে।


ফেরত আসা ব্যক্তিদের জেলা পরিচয়

ফেরত পাঠানোদের মধ্যে ২৬ জন নোয়াখালীর।
এ ছাড়া কুমিল্লা, সিলেট, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার দুজন করে এবং চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে একজন করে ফিরেছেন।


চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ফেরত

এ বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ১৮৭ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছিল। সর্বশেষ ফেরত আসা ৩৯ জনের মধ্যে ৩৪ জন বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে বৈধভাবে ব্রাজিলে গিয়েছিলেন। পরে তারা মেক্সিকো হয়ে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।

অন্য পাঁচজনের মধ্যে দুজন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন এবং তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। অবৈধভাবে প্রবেশের পর তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলেও তা নাকচ হলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।


ব্রাজিল রুট নিয়ে উদ্বেগ ও সমালোচনা

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান প্রশ্ন তোলেন—ব্রাজিলে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর অনুমতি থাকলেও তারা সত্যিই ব্রাজিলে থাকছেন কি না বা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হচ্ছেন কি না—এ বিষয়ে কোনো পর্যবেক্ষণ ছিল কি না।

তিনি বলেন, প্রত্যেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করে দেশে শূন্য হাতে ফিরছেন, এর দায় কে নেবে? বৈধতার আড়ালে অবৈধ অভিবাসনের পথ খুলে দেওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও দায়িত্বহীনতা বলে মন্তব্য করেন তিনি। এজেন্সিগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।


ফেরত প্রক্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান

ফেরত আসা বাংলাদেশি ও বিমানবন্দর সূত্র জানায়, পূর্বে কয়েক দফায় বাংলাদেশিদের হাতকড়া ও পায়ে শিকল বেঁধে ফেরত পাঠানো হলেও সর্বশেষ ফ্লাইটে তা করা হয়নি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।


পূর্বে ফেরত পাঠানোর কয়েকটি ঘটনা

• ৮ জুন চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।
• ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।


যুক্তরাষ্ট্রে ফেরতের সামগ্রিক চিত্র

২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মার্কিন আইনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক নির্দেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হলে আইসিই প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটের ব্যবহার বেড়েছে।


#অভিবাসন বাংলাদেশি_ফেরত যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল_রুট ব্র্যাক অবৈধ_প্রবেশ ট্রাম্প_প্রশাসন


জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ফ্লাইটে আরও ৩৯ বাংলাদেশি ফেরত

০৫:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ প্রবেশ ও ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আরও ৩৯ বাংলাদেশিকে বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে দেশে ফিরিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হলো, যা অভিবাসন রুট ও দালালচক্র নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।


উদ্বাস্তু হয়ে দেশে ফেরা ৩৯ বাংলাদেশি

২৮ নভেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায় যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে আরও ৩৯ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে ব্র্যাক জরুরি সহায়তা ও পরিবহনের ব্যবস্থা করে।


ফেরত আসা ব্যক্তিদের জেলা পরিচয়

ফেরত পাঠানোদের মধ্যে ২৬ জন নোয়াখালীর।
এ ছাড়া কুমিল্লা, সিলেট, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার দুজন করে এবং চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে একজন করে ফিরেছেন।


চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ফেরত

এ বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ১৮৭ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছিল। সর্বশেষ ফেরত আসা ৩৯ জনের মধ্যে ৩৪ জন বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে বৈধভাবে ব্রাজিলে গিয়েছিলেন। পরে তারা মেক্সিকো হয়ে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।

অন্য পাঁচজনের মধ্যে দুজন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন এবং তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। অবৈধভাবে প্রবেশের পর তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলেও তা নাকচ হলে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।


ব্রাজিল রুট নিয়ে উদ্বেগ ও সমালোচনা

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান প্রশ্ন তোলেন—ব্রাজিলে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর অনুমতি থাকলেও তারা সত্যিই ব্রাজিলে থাকছেন কি না বা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হচ্ছেন কি না—এ বিষয়ে কোনো পর্যবেক্ষণ ছিল কি না।

তিনি বলেন, প্রত্যেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করে দেশে শূন্য হাতে ফিরছেন, এর দায় কে নেবে? বৈধতার আড়ালে অবৈধ অভিবাসনের পথ খুলে দেওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও দায়িত্বহীনতা বলে মন্তব্য করেন তিনি। এজেন্সিগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।


ফেরত প্রক্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান

ফেরত আসা বাংলাদেশি ও বিমানবন্দর সূত্র জানায়, পূর্বে কয়েক দফায় বাংলাদেশিদের হাতকড়া ও পায়ে শিকল বেঁধে ফেরত পাঠানো হলেও সর্বশেষ ফ্লাইটে তা করা হয়নি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর অভিযান আরও জোরদার হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।


পূর্বে ফেরত পাঠানোর কয়েকটি ঘটনা

• ৮ জুন চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।
• ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।


যুক্তরাষ্ট্রে ফেরতের সামগ্রিক চিত্র

২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মার্কিন আইনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক নির্দেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হলে আইসিই প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটের ব্যবহার বেড়েছে।


#অভিবাসন বাংলাদেশি_ফেরত যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল_রুট ব্র্যাক অবৈধ_প্রবেশ ট্রাম্প_প্রশাসন