সংক্ষিপ্তসার
• ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ টাওয়ার হতে চলেছে নতুন ভবন
• ছয় বছরে স্থানীয় অর্থনীতিতে ৯.৯ বিলিয়ন পাউন্ড যোগ হবে
• ৭,৮০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি
• ডিজাইন করবে নিউইয়র্ক সদরদপ্তরের স্থপতি প্রতিষ্ঠান ফস্টার + পার্টনার্স
• ক্যানারি ওয়ার্ফের জন্য বড় জয়
• ব্রেক্সিট-পরবর্তী লন্ডনের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত
মার্কিন ব্যাংকিং জায়ান্ট জেপিমর্গান ঘোষণা করেছে যে তারা লন্ডনের পূর্বাঞ্চলের ক্যানারি ওয়ার্ফ আর্থিক জেলায় একটি অত্যাধুনিক নতুন টাওয়ার নির্মাণ করবে। যুক্তরাজ্যের নতুন বাজেট প্রকাশের পরই এ বিনিয়োগের ঘোষণা আসে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে তৈরি।
নতুন প্রকল্পের অর্থনৈতিক অবদান
জেপিমর্গানের হিসাব অনুযায়ী, ভবনটির নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড মিলিয়ে আগামী ছয় বছরে স্থানীয় অর্থনীতিতে ৯.৯ বিলিয়ন পাউন্ড যোগ হবে। প্রকল্পটি মোট ৭,৮০০ নতুন চাকরি তৈরি করবে।
ভবনটির আকার ও বৈশিষ্ট্য
• প্রস্তাবিত ভবনের আয়তন ৩০ লাখ বর্গফুট (২৮০,০০০ বর্গমিটার)।
• এটি ব্রিটেনের বর্তমান সর্বোচ্চ ভবন ‘দ্য শার্ড’-এর ফ্লোরস্পেসের দ্বিগুণেরও বেশি হবে।
• জেপিমর্গানের নিউইয়র্কের পার্ক অ্যাভিনিউর সদ্য নির্মিত সদরদপ্তরের থেকেও বড় হবে ভবনটি।
• নির্মাণ ব্যয় হবে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড, তবে চূড়ান্ত নকশা ও উচ্চতা এখনো নির্ধারণাধীন।
যুক্তরাজ্যের প্রতি আস্থা
মহামারির পর অফিসে কর্মীদের ফেরাতে সংগ্রাম করা ক্যানারি ওয়ার্ফের জন্য এটি বড় ধরনের সাফল্য। জেপিমর্গান বহুদিন ধরেই কর্মীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিসে ফেরার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

জেপিমর্গানের চেয়ারম্যান ও সিইও জেমি ডাইমন বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অগ্রাধিকার তাদের এ সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে। বাজেটে ব্যাংকের ওপর নতুন কর আরোপ না করায় তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী রেচেল রিভসের প্রতি সমর্থন জানান। রিভস এ বিনিয়োগকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির প্রতি ‘বহুবিলিয়ন পাউন্ডের আস্থা ভোট’ বলে উল্লেখ করেন।
তবে জেপিমর্গান জানায়, যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়িক পরিবেশ ইতিবাচক থাকলেই প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে।
ব্রেক্সিট-পরবর্তী গুরুত্ব
ব্রেক্সিটের পর অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে কর্মী স্থানান্তর করতে হয়েছে। এ অবস্থায় লন্ডনের জন্য জেপিমর্গানের নতুন বিনিয়োগকে একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নতুন টাওয়ারের অবস্থান
• টাওয়ারটি থেমস নদীর তীরে ‘রিভারসাইড সাউথ’ সাইটে তৈরি হবে।
• ২০০৮ সালে জেপিমর্গান এ জমিটি কেনে।
• প্রথমে তারা এখানেই নতুন যুক্তরাজ্য সদরদপ্তর গড়ার পরিকল্পনা করেছিল, তবে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর সেই পরিকল্পনা স্থগিত হয় এবং তারা লেহম্যান ব্রাদার্সের পুরনো ভবনে চলে যায়।
বর্তমান ভবনটি জেপিমর্গানের কার্যক্রমের জন্য ছোট হয়ে গেছে, বিশেষ করে তাদের রিটেইল ব্যাংক ‘চেইস’-এর যুক্তরাজ্য শাখার সম্প্রসারণের কারণে।
স্থপতি ও নকশা
• নতুন টাওয়ার ডিজাইন করবে ফস্টার + পার্টনার্স।
• একই প্রতিষ্ঠান জেপিমর্গানের নিউইয়র্ক সদরদপ্তরও ডিজাইন করেছে।
• পরিকল্পনায় থাকছে পাবলিক পার্ক, ছাদ টেরেস, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, নার্সিং রুম, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে।
ক্যানারি ওয়ার্ফের জন্য ‘সংজ্ঞায়িত মুহূর্ত’
ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপের সিইও শোবি খান বলেন, জেপিমর্গানের সিদ্ধান্ত অঞ্চলটির জন্য একটি ‘নির্ধারণী মুহূর্ত’। ২০২৫ সাল হবে গত এক দশকের মধ্যে তাদের সেরা লিজিং বছর।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যানারি ওয়ার্ফে আবাসিক নির্মাণ প্রকল্প বেশি হয়েছে, এবং অফিস খালি থাকার হার ডকল্যান্ডস এলাকায় ১৫%, যা লন্ডনের গড় ১০.৪% এর চেয়ে বেশি।
অন্যান্য পদক্ষেপ
জেপিমর্গান এ প্রকল্পে সাবেক ক্যানারি ওয়ার্ফ গ্রুপ চেয়ারম্যান জর্জ ইয়াকোবেস্কুর পরামর্শ নিচ্ছে। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী গোল্ডম্যান স্যাকসও ঘোষণা করেছে যে তারা ব্রিটেনের বার্মিংহামে তাদের অফিস সম্প্রসারণ করবে এবং ৫০০ কর্মী নিয়োগ দেবে।
জেপিমর্গানের পরিকল্পিত নতুন টাওয়ার শুধু একটি ভবন নয়—এটি যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে আস্থা, ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ এবং লন্ডনের আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে পুনরুত্থানের প্রতীক।
#JPMorgan London CanaryWharf UKEconomy Investment TowerConstruction
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















