১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি: তিন সপ্তাহ ধরে তথ্যশূন্যতায় শিক্ষার্থীরা ড্রোন যুদ্ধে রুশ সুবিধা বৃদ্ধি টানা তিন সপ্তাহ ইমরান খান জীবিত কিনা জানে না পরিবার: গভীর উদ্বেগে স্বজনরা ইসলামাবাদ–রাওয়ালপিন্ডিতে ১৪৪ ধারা; ইমরান খান ইস্যুতে বিক্ষোভ ঘিরে কেপি পুলিশকে কঠোর সতর্কবার্তা ২০২৬ সাল থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচ ব্যবহার নিষিদ্ধ তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন: সালাহউদ্দিন চীনের হাতে বৈশ্বিক ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের নিয়ন্ত্রণ সিঙ্গাপুরের সাহিত্যকে এগিয়ে নিতে নিজের সম্পদ ঝুঁকিতে ফেলছেন এডমন্ড উই মৃত্যুহীন প্রসবের লক্ষ্য: ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাফল্য প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৩২)

আমেরিকায় মূল্যসংকট: কীভাবে সমাধান সম্ভব

আমেরিকান সমাজে খাদ্যের দামের পরিবর্তন প্রায়শই জনঅসন্তোষ রূপ নেয়। ১৯১৬ সালে গৃহিণীরা ডিমের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বয়কট শুরু করেছিলেন। পরবর্তী দশকেও একই ধারা চলেছে—হ্যারি ট্রুম্যান থেকে শুরু করে রিচার্ড নিক্সন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রেসিডেন্টকে খাদ্য দামোত্তর জনরোষ মোকাবিলা করতে হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে যখন ডিম, মাংস ও গরুর মাংসের দাম দ্রুত বাড়ছে, তখন শহরতলির গৃহিণীরা বিক্ষোভে নেমে এলেন। কেউ কেউ বাজার দর মেনে নিতে না পেরে বিকল্প খাবারের কথাও ভাবতে বাধ্য হন।

টিকটকের যুগে নতুন ক্ষোভ
আজকের সময়ে টিকটক ভিডিওতে হাহাকার শোনা যায়—১৩ ডলারের বার্গার, ১২ ডলারের বুরিটো বা ৫ ডলারের ডিম কেনার কষ্ট। এই অসন্তোষ রাজনীতিকদেরও তাড়া করছে। ট্রাম্প ২,০০০ ডলারের চেক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা নাকি শুল্ক থেকে পাওয়া আয়ের মাধ্যমে সম্ভব। এমনকি তিনি ৫০ বছরের মর্টগেজ চালুর ধারণাও দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানও খুব আলাদা নয়—‘অ্যাফোর্ডেবিলিটি’ এখন তাদেরও প্রধান স্লোগান, যার মধ্যে ভাড়াবৃদ্ধি স্থগিত, সরকারি মুদিখানা, ইত্যাদি নানা প্রস্তাব উঠে আসছে।

আসল আদ্যোপান্ত: পরিস্থিতি যত ভয়াবহ মনে হয়, ততটা নয়
সব অভিযোগ সত্ত্বেও বাস্তবচিত্র তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। গরুর মাংস ও ডিমের দাম কিছুটা বেশি হলেও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ইতিহাসের তুলনায় তেমন অস্বাভাবিক নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বার্ষিক খাদ্যমূল্যস্ফীতি ২.৫% এবং ভাড়াবৃদ্ধি ৩.৫%-এর নিচে। ২০১৯ সালের পর থেকেই সাধারণ কর্মীদের ঘণ্টাপ্রতি আয় ভাড়া, খাবার কিংবা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির তুলনায় বেশি হারে বাড়ছে। ফলে মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা মহামারির আগের তুলনায় এখন বেশি।

তবুও মানুষ এত অসন্তুষ্ট কেন?
কারণ বেশিরভাগ মানুষ ‘বাস্তব’ অর্থে দাম বোঝার ক্ষেত্রে দুর্বল। অর্থনীতিবিদ আরভিং ফিশার যে ‘মানি ইলিউশন’-এর কথা বলেছিলেন— অর্থাৎ নামমাত্র দাম বাড়লেই মনে হয় সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে—তা আজও সত্য। আচরণগত অর্থনীতির গবেষণায় বারবার দেখা গেছে, নামমাত্র দাম বা বেতনের বৃদ্ধি বা হ্রাস মানুষকে ভুল ধারণা দেয়, যদিও প্রকৃত মূল্য একই থাকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় পুরনো দামের স্মৃতি বাস্তবতা বোঝার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

জনপ্রিয় সমাধান গুলোর সীমাবদ্ধতা
শিশু সেবা, জ্বালানি, আবাসন—এই খাতগুলোতে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমানোর ‘অ্যাবানডেন্স এজেন্ডা’ ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে জনপ্রিয়। ট্রাম্প আবার খাবারে নিজেই আরোপ করা শুল্ক বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সত্যি কথা হলো— এমন পদক্ষেপ নামমাত্র দাম কমবে না। মূল্যস্ফীতি না ঘটলে বা মন্দা না এলে দাম সাধারণত নিচে নামে না, ফলে রাজনীতিকরা যেসব দাম মানুষ দেখে এবং ক্ষুব্ধ হয়, সেগুলো থেকে পালাতে পারবে না।

একটি ভিন্ন ধারণা: কেবল সংখ্যাটি বদলে দিন
ফ্রান্স ১৯৬০ সালে দাম পুনর্গঠনের জন্য মুদ্রা থেকে দুটি শূন্য বাদ দিয়েছিল। মেক্সিকো ১৯৯৩ সালে একইভাবে নতুন পেসো চালু করে। পোল্যান্ড ১৯৯৫ সালে ১০,০০০ পুরনো জ্লোটি বদলে ১ নতুন ইউনিট নির্ধারণ করে। এসব উদাহরণ দেখায়—মূল্য কাঠামো ঠিক রেখে শুধু সংখ্যাগুলো বদলালে মানুষের ধারণা বদলায়। জার্মানিতে ইউরো চালুর পর প্রকৃত মূল্যস্ফীতি না বাড়লেও মানুষ শুধু সংখ্যার পরিবর্তন দেখে মনে করেছিল সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।

আমেরিকায় কি নতুন ‘ডলার’ আসতে পারে?
যদি অন্যান্য দেশ মূল্যের সংখ্যা সরলীকরণ করতে পারে, তাহলে আমেরিকা বা পারবে না কেন? ‘নিউ ডলার’ চালু করলে জিনিসপত্র আদতে সস্তা হবে না, কিন্তু সংখ্যাগুলো কম দেখাবে—যা জনরোষ কমাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাড়িভাড়ার উদাহরণই যথেষ্ট: ব্রুকলিনের উইলিয়ামসবার্গে এখন ৪,০০০ ডলারের এক বেডরুম আগামী কয়েক দশকে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে ১৬,০০০ বা ৩২,০০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। এমন বিশাল সংখ্যাই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ায়।

আমেরিকানরা বড় সংখ্যাকে কখনোই সহজভাবে নেয় না। তাই রাজনীতিকদের জন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান হতে পারে—ডলারের শেষে একটি শূন্য বাদ দেওয়া। তাতে অন্তত দামগুলো “সস্তা” দেখাবে, এবং ক্রেতাদের মনও কিছুটা শান্ত হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি: তিন সপ্তাহ ধরে তথ্যশূন্যতায় শিক্ষার্থীরা

আমেরিকায় মূল্যসংকট: কীভাবে সমাধান সম্ভব

১১:৩৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

আমেরিকান সমাজে খাদ্যের দামের পরিবর্তন প্রায়শই জনঅসন্তোষ রূপ নেয়। ১৯১৬ সালে গৃহিণীরা ডিমের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বয়কট শুরু করেছিলেন। পরবর্তী দশকেও একই ধারা চলেছে—হ্যারি ট্রুম্যান থেকে শুরু করে রিচার্ড নিক্সন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রেসিডেন্টকে খাদ্য দামোত্তর জনরোষ মোকাবিলা করতে হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে যখন ডিম, মাংস ও গরুর মাংসের দাম দ্রুত বাড়ছে, তখন শহরতলির গৃহিণীরা বিক্ষোভে নেমে এলেন। কেউ কেউ বাজার দর মেনে নিতে না পেরে বিকল্প খাবারের কথাও ভাবতে বাধ্য হন।

টিকটকের যুগে নতুন ক্ষোভ
আজকের সময়ে টিকটক ভিডিওতে হাহাকার শোনা যায়—১৩ ডলারের বার্গার, ১২ ডলারের বুরিটো বা ৫ ডলারের ডিম কেনার কষ্ট। এই অসন্তোষ রাজনীতিকদেরও তাড়া করছে। ট্রাম্প ২,০০০ ডলারের চেক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা নাকি শুল্ক থেকে পাওয়া আয়ের মাধ্যমে সম্ভব। এমনকি তিনি ৫০ বছরের মর্টগেজ চালুর ধারণাও দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের অবস্থানও খুব আলাদা নয়—‘অ্যাফোর্ডেবিলিটি’ এখন তাদেরও প্রধান স্লোগান, যার মধ্যে ভাড়াবৃদ্ধি স্থগিত, সরকারি মুদিখানা, ইত্যাদি নানা প্রস্তাব উঠে আসছে।

আসল আদ্যোপান্ত: পরিস্থিতি যত ভয়াবহ মনে হয়, ততটা নয়
সব অভিযোগ সত্ত্বেও বাস্তবচিত্র তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। গরুর মাংস ও ডিমের দাম কিছুটা বেশি হলেও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ইতিহাসের তুলনায় তেমন অস্বাভাবিক নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বার্ষিক খাদ্যমূল্যস্ফীতি ২.৫% এবং ভাড়াবৃদ্ধি ৩.৫%-এর নিচে। ২০১৯ সালের পর থেকেই সাধারণ কর্মীদের ঘণ্টাপ্রতি আয় ভাড়া, খাবার কিংবা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির তুলনায় বেশি হারে বাড়ছে। ফলে মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা মহামারির আগের তুলনায় এখন বেশি।

তবুও মানুষ এত অসন্তুষ্ট কেন?
কারণ বেশিরভাগ মানুষ ‘বাস্তব’ অর্থে দাম বোঝার ক্ষেত্রে দুর্বল। অর্থনীতিবিদ আরভিং ফিশার যে ‘মানি ইলিউশন’-এর কথা বলেছিলেন— অর্থাৎ নামমাত্র দাম বাড়লেই মনে হয় সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে—তা আজও সত্য। আচরণগত অর্থনীতির গবেষণায় বারবার দেখা গেছে, নামমাত্র দাম বা বেতনের বৃদ্ধি বা হ্রাস মানুষকে ভুল ধারণা দেয়, যদিও প্রকৃত মূল্য একই থাকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় পুরনো দামের স্মৃতি বাস্তবতা বোঝার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

জনপ্রিয় সমাধান গুলোর সীমাবদ্ধতা
শিশু সেবা, জ্বালানি, আবাসন—এই খাতগুলোতে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমানোর ‘অ্যাবানডেন্স এজেন্ডা’ ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে জনপ্রিয়। ট্রাম্প আবার খাবারে নিজেই আরোপ করা শুল্ক বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সত্যি কথা হলো— এমন পদক্ষেপ নামমাত্র দাম কমবে না। মূল্যস্ফীতি না ঘটলে বা মন্দা না এলে দাম সাধারণত নিচে নামে না, ফলে রাজনীতিকরা যেসব দাম মানুষ দেখে এবং ক্ষুব্ধ হয়, সেগুলো থেকে পালাতে পারবে না।

একটি ভিন্ন ধারণা: কেবল সংখ্যাটি বদলে দিন
ফ্রান্স ১৯৬০ সালে দাম পুনর্গঠনের জন্য মুদ্রা থেকে দুটি শূন্য বাদ দিয়েছিল। মেক্সিকো ১৯৯৩ সালে একইভাবে নতুন পেসো চালু করে। পোল্যান্ড ১৯৯৫ সালে ১০,০০০ পুরনো জ্লোটি বদলে ১ নতুন ইউনিট নির্ধারণ করে। এসব উদাহরণ দেখায়—মূল্য কাঠামো ঠিক রেখে শুধু সংখ্যাগুলো বদলালে মানুষের ধারণা বদলায়। জার্মানিতে ইউরো চালুর পর প্রকৃত মূল্যস্ফীতি না বাড়লেও মানুষ শুধু সংখ্যার পরিবর্তন দেখে মনে করেছিল সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।

আমেরিকায় কি নতুন ‘ডলার’ আসতে পারে?
যদি অন্যান্য দেশ মূল্যের সংখ্যা সরলীকরণ করতে পারে, তাহলে আমেরিকা বা পারবে না কেন? ‘নিউ ডলার’ চালু করলে জিনিসপত্র আদতে সস্তা হবে না, কিন্তু সংখ্যাগুলো কম দেখাবে—যা জনরোষ কমাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাড়িভাড়ার উদাহরণই যথেষ্ট: ব্রুকলিনের উইলিয়ামসবার্গে এখন ৪,০০০ ডলারের এক বেডরুম আগামী কয়েক দশকে দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে ১৬,০০০ বা ৩২,০০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। এমন বিশাল সংখ্যাই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ায়।

আমেরিকানরা বড় সংখ্যাকে কখনোই সহজভাবে নেয় না। তাই রাজনীতিকদের জন্য সবচেয়ে সহজ সমাধান হতে পারে—ডলারের শেষে একটি শূন্য বাদ দেওয়া। তাতে অন্তত দামগুলো “সস্তা” দেখাবে, এবং ক্রেতাদের মনও কিছুটা শান্ত হবে।