০৪:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
খাবার ফুরিয়ে আসছে, নেই ইন্টারনেট; ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ১৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ইয়াশ রোহান: নীরবতার ভেতরে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের তারকা তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার অবস্থার উন্নতি, চিকিৎসা সঠিকভাবে চলছে: ডা. জাহিদ মনউন্মোচনকারী উপন্যাস ‘লাইটব্রেকার্স’ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তালেবান ইস্যুতে বাড়ছে আফগান-পাকিস্তান উত্তেজনা জলব্যায়ামে প্রেম, আর শেষ পর্যন্ত পুলেই বিয়ে টেক্সাসে মুসলিম অধিকার সংস্থা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণার জেরে তীব্র প্রতিক্রিয়া খরা কি উন্নত সিন্ধু সভ্যতার অবসান ঘটিয়েছিল? ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস: শীতের কাঁপুনিতে শুরু হলো ডিসেম্বর

ব্যক্তিমালিকানাধীন বাজারের বুদ্‌বুদের বিপক্ষে বাজি ধরার কৌশল

২০০৮ সালের মার্কিন আবাসন বাজার ধস নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য বিগ শর্ট’-এ বিনিয়োগকারীরা কীভাবে মর্টগেজ বাজারে শর্টসেল করে বিশাল মুনাফা করেছিলেন, তা অনেকের মনে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিনিয়োগকারী মনে করছেন, তেমনই আরেকটি ধাক্কার মুখোমুখি হতে পারে আমেরিকা—যদিও আকারে ছোট—এবার এর উৎস হতে পারে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাজার এবং তালিকাবহির্ভূত প্রযুক্তি খাত।

যেভাবে শর্টসেল জটিল হয়ে উঠেছে
কোনো সম্পদের বিপক্ষে বাজি ধরতে হলে সেটি ধার নিতে হয়, বর্তমান দামে বিক্রি করতে হয় এবং দাম কমলে আবার কম দামে কিনে ফেরত দিতে হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন ও অস্বচ্ছ বাজারে এই কাজ আরও কঠিন। তার ওপর লেম্যান ব্রাদার্স পতনের পর ব্যাংকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সিনথেটিক পণ্য সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, যা আগে এসব শর্টসেল সহজ করত।

তারপরও ওয়াল স্ট্রিট পথ খুঁজে নেয়—আর সেই পথগুলোই এখন জনপ্রিয় হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকেই শর্ট করা
যেহেতু ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হাতের নাগালে পাওয়া কঠিন, তাই বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই শর্ট করছে। অনেক বড় প্রাইভেট ইকুইটি ও প্রাইভেট ক্রেডিট সংস্থা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত—যেমন অ্যাপোলো, ব্ল্যাকস্টোন, ব্লু আউল এবং কেকেআর।

যেমন উদাহরণ: মার্কিন গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী ফার্স্ট ব্র্যান্ডস প্রতারণার অভিযোগে সেপ্টেম্বর মাসে ভেঙে পড়ে। এটি নিয়ে সবচেয়ে সহজ শর্ট কৌশল হতে পারত ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক জেফারিসকে শর্ট করা, কারণ তারা ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। পতনের পরবর্তী চার সপ্তাহে জেফারিসের শেয়ারের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়।

তাছাড়া বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বা বিডিসি) গুলোও তালিকাভুক্ত, যদিও তাদের সম্পদের বড় অংশই ব্যক্তিমালিকানাধীন ঋণে বিনিয়োগ করা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এস–থ্রি পার্টনার্স জানায়, ২১ অক্টোবর পর্যন্ত বছরে বিনিয়োগকারীরা বিডিসি শর্ট করে ১২৪ মিলিয়ন ডলার লাভ করেছে। এ বছরের মধ্যে এসঅ্যান্ডপি বিডিসি সূচক ১৩ শতাংশ কমেছে।

নির্দিষ্ট, কাস্টম চুক্তির মাধ্যমে বাজি
কিউভিআর অ্যাডভাইজার্সের বেন আইফার্ট একটি ভিন্ন ধরনের ডেরিভেটিভ চুক্তি দেন, যা তালিকাবহির্ভূত প্রযুক্তি কোম্পানির (যেমন ওপেনএআই) মূল্যায়ন নিয়ে শর্টসেলকে সম্ভব করে।

এই চুক্তিতে দুই পক্ষের কেউই ঐ প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ার না রেখেও ভবিষ্যৎ মূল্যায়নের উপর বাজি ধরতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ওপেনএআই ভবিষ্যতে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যে তালিকাভুক্ত হয় বা বিক্রি হয়, তবে আইফার্টকে বিপরীত পক্ষকে টাকা দিতে হবে। মূল্যায়ন কমে গেলে তিনি বরং পাওনা হয়ে যান। এই ব্যবস্থা পূর্বাভাস বাজারগুলোর (যেমন পলিমার্কেট) বিকল্পও তৈরি করছে।

তবে ঝুঁকিও রয়েছে। কোম্পানি একেবারে ধসলে কিংবা কখনো তালিকাভুক্ত বা বিক্রি না হলে এই চুক্তি কার্যকরই হবে না, ফলে কোনো পক্ষই টাকা পাবে না। অর্থাৎ এগুলো শর্টসেল ও বাজির মাঝামাঝি স্বভাবের, যেখানে পারস্পরিক বিশ্বাসই আসল ভিত্তি।

 ছোট ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণকে লক্ষ্য করা
তত্ত্বগতভাবে কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপক্ষে বাজি ধরা সবচেয়ে কঠিন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন এক পদ্ধতির কথা চলে আসছে। এই পদ্ধতিতে সিন্ডিকেটেড লোন—অর্থাৎ ব্যাংক-ঋণ নেটওয়ার্ক—এর ওপর নির্ভর করে শর্ট পজিশন নেওয়া যায়।

এর প্রক্রিয়া সাধারণ শর্টসেলের মতোই। কোনো বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট একটি ঋণ—যা তার মালিকানায় নেই—একটি ব্যাংকের কাছে ভবিষ্যতে হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্রি করে। দুই পক্ষ তিন মাসের মতো সময় নিয়ে নিষ্পত্তির তারিখ ঠিক করে। এই সময়ে ঋণের মূল্য বাড়লে বিক্রেতাকে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হওয়ায় ক্ষতি হয়। আর দাম কমে গেলে বিক্রেতার লাভ।

এই কৌশলকে বলা যায় চতুর ফাঁকফোকর। যদিও সিন্ডিকেটেড লোন পুরোপুরি ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্রেডিট নয়, তবুও এগুলো শর্টসেলারদের জন্য অনেক বেশি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করার সুযোগ করে দেয়।

ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির বিরুদ্ধে বাজি ধরার ভবিষ্যৎ
পদ্ধতিটি এখনো খুব জনপ্রিয় নয়, কিন্তু সহজ হওয়ায় দ্রুত ছড়াতে পারে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও মার্কেটমেকাররা যখন ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্রেডিট ট্রেডিং বাড়াচ্ছে, বাজার আরও তরল হবে—আর শর্টসেলারদের সুযোগও বাড়বে।

অর্থাৎ, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাজার নিয়ে যারা সন্দিহান, এখন তারা সেই মতের পেছনে টাকা লাগানোর সুযোগ আরও বেশি পাবেন।


জনপ্রিয় সংবাদ

খাবার ফুরিয়ে আসছে, নেই ইন্টারনেট; ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ১৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

ব্যক্তিমালিকানাধীন বাজারের বুদ্‌বুদের বিপক্ষে বাজি ধরার কৌশল

১২:০৭:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

২০০৮ সালের মার্কিন আবাসন বাজার ধস নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য বিগ শর্ট’-এ বিনিয়োগকারীরা কীভাবে মর্টগেজ বাজারে শর্টসেল করে বিশাল মুনাফা করেছিলেন, তা অনেকের মনে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিনিয়োগকারী মনে করছেন, তেমনই আরেকটি ধাক্কার মুখোমুখি হতে পারে আমেরিকা—যদিও আকারে ছোট—এবার এর উৎস হতে পারে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাজার এবং তালিকাবহির্ভূত প্রযুক্তি খাত।

যেভাবে শর্টসেল জটিল হয়ে উঠেছে
কোনো সম্পদের বিপক্ষে বাজি ধরতে হলে সেটি ধার নিতে হয়, বর্তমান দামে বিক্রি করতে হয় এবং দাম কমলে আবার কম দামে কিনে ফেরত দিতে হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন ও অস্বচ্ছ বাজারে এই কাজ আরও কঠিন। তার ওপর লেম্যান ব্রাদার্স পতনের পর ব্যাংকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সিনথেটিক পণ্য সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, যা আগে এসব শর্টসেল সহজ করত।

তারপরও ওয়াল স্ট্রিট পথ খুঁজে নেয়—আর সেই পথগুলোই এখন জনপ্রিয় হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকেই শর্ট করা
যেহেতু ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হাতের নাগালে পাওয়া কঠিন, তাই বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেই শর্ট করছে। অনেক বড় প্রাইভেট ইকুইটি ও প্রাইভেট ক্রেডিট সংস্থা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত—যেমন অ্যাপোলো, ব্ল্যাকস্টোন, ব্লু আউল এবং কেকেআর।

যেমন উদাহরণ: মার্কিন গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী ফার্স্ট ব্র্যান্ডস প্রতারণার অভিযোগে সেপ্টেম্বর মাসে ভেঙে পড়ে। এটি নিয়ে সবচেয়ে সহজ শর্ট কৌশল হতে পারত ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক জেফারিসকে শর্ট করা, কারণ তারা ঐ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। পতনের পরবর্তী চার সপ্তাহে জেফারিসের শেয়ারের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়।

তাছাড়া বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বা বিডিসি) গুলোও তালিকাভুক্ত, যদিও তাদের সম্পদের বড় অংশই ব্যক্তিমালিকানাধীন ঋণে বিনিয়োগ করা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান এস–থ্রি পার্টনার্স জানায়, ২১ অক্টোবর পর্যন্ত বছরে বিনিয়োগকারীরা বিডিসি শর্ট করে ১২৪ মিলিয়ন ডলার লাভ করেছে। এ বছরের মধ্যে এসঅ্যান্ডপি বিডিসি সূচক ১৩ শতাংশ কমেছে।

নির্দিষ্ট, কাস্টম চুক্তির মাধ্যমে বাজি
কিউভিআর অ্যাডভাইজার্সের বেন আইফার্ট একটি ভিন্ন ধরনের ডেরিভেটিভ চুক্তি দেন, যা তালিকাবহির্ভূত প্রযুক্তি কোম্পানির (যেমন ওপেনএআই) মূল্যায়ন নিয়ে শর্টসেলকে সম্ভব করে।

এই চুক্তিতে দুই পক্ষের কেউই ঐ প্রযুক্তি কোম্পানির শেয়ার না রেখেও ভবিষ্যৎ মূল্যায়নের উপর বাজি ধরতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ওপেনএআই ভবিষ্যতে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যে তালিকাভুক্ত হয় বা বিক্রি হয়, তবে আইফার্টকে বিপরীত পক্ষকে টাকা দিতে হবে। মূল্যায়ন কমে গেলে তিনি বরং পাওনা হয়ে যান। এই ব্যবস্থা পূর্বাভাস বাজারগুলোর (যেমন পলিমার্কেট) বিকল্পও তৈরি করছে।

তবে ঝুঁকিও রয়েছে। কোম্পানি একেবারে ধসলে কিংবা কখনো তালিকাভুক্ত বা বিক্রি না হলে এই চুক্তি কার্যকরই হবে না, ফলে কোনো পক্ষই টাকা পাবে না। অর্থাৎ এগুলো শর্টসেল ও বাজির মাঝামাঝি স্বভাবের, যেখানে পারস্পরিক বিশ্বাসই আসল ভিত্তি।

 ছোট ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণকে লক্ষ্য করা
তত্ত্বগতভাবে কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের বিপক্ষে বাজি ধরা সবচেয়ে কঠিন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন এক পদ্ধতির কথা চলে আসছে। এই পদ্ধতিতে সিন্ডিকেটেড লোন—অর্থাৎ ব্যাংক-ঋণ নেটওয়ার্ক—এর ওপর নির্ভর করে শর্ট পজিশন নেওয়া যায়।

এর প্রক্রিয়া সাধারণ শর্টসেলের মতোই। কোনো বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট একটি ঋণ—যা তার মালিকানায় নেই—একটি ব্যাংকের কাছে ভবিষ্যতে হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্রি করে। দুই পক্ষ তিন মাসের মতো সময় নিয়ে নিষ্পত্তির তারিখ ঠিক করে। এই সময়ে ঋণের মূল্য বাড়লে বিক্রেতাকে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হওয়ায় ক্ষতি হয়। আর দাম কমে গেলে বিক্রেতার লাভ।

এই কৌশলকে বলা যায় চতুর ফাঁকফোকর। যদিও সিন্ডিকেটেড লোন পুরোপুরি ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্রেডিট নয়, তবুও এগুলো শর্টসেলারদের জন্য অনেক বেশি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করার সুযোগ করে দেয়।

ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির বিরুদ্ধে বাজি ধরার ভবিষ্যৎ
পদ্ধতিটি এখনো খুব জনপ্রিয় নয়, কিন্তু সহজ হওয়ায় দ্রুত ছড়াতে পারে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও মার্কেটমেকাররা যখন ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্রেডিট ট্রেডিং বাড়াচ্ছে, বাজার আরও তরল হবে—আর শর্টসেলারদের সুযোগও বাড়বে।

অর্থাৎ, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাজার নিয়ে যারা সন্দিহান, এখন তারা সেই মতের পেছনে টাকা লাগানোর সুযোগ আরও বেশি পাবেন।