লিড: এক সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়, প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯৫০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার তাণ্ডব
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসে এক সপ্তাহে প্রায় ৯৩৮ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে শ্রীলঙ্কায়, যেখানে প্রাণহানি ও নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে।
শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৪–তে পৌঁছেছে। এখনো প্রায় ৪০০ মানুষ নিখোঁজ এবং ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
এটি দুই দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বহু এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়া এবং ভূমিধসে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। রাজধানী কলম্বোর নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। বৃষ্টি কমলেও পানি নামছে না, ফলে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চলছে।

উদ্ধার অভিযান ও আন্তর্জাতিক সহায়তা
কলম্বোর উত্তরে একটি হাসপাতালের জন্য খাদ্যবাহী শ্রীলঙ্কা বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার নদীতে বিধ্বস্ত হলেও পাঁচজন ক্রুকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়।
রবিবার ভারতের পাঠানো আরেকটি হেলিকপ্টার ২৪ জনকে উদ্ধার করে, যাদের মধ্যে ছিলেন এক গর্ভবতী নারী ও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী একজন ব্যক্তি। পাকিস্তান উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে, আর জাপান একটি মূল্যায়নকারী দলসহ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের চিলাও শহরের প্লাবিত হাসপাতাল থেকে দুই শিশু ও এক ১০ বছর বয়সী শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিসানায়েকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ায় মৃত্যু ৪৪২, শত শত মানুষ নিখোঁজ
ইন্দোনেশিয়ায় প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৪৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪০২ জন নিখোঁজ। আহত হয়েছে ৬৪৬ জন। সুমাত্রার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি এলাকায় এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। রাজধানী জাকার্তা থেকে দুটি যুদ্ধজাহাজ পাঠানো হয়েছে ত্রাণ পৌঁছাতে।
আচেহ প্রদেশের পিদিয়ে জায়ার মেউরেউদু এলাকায় প্লাবিত ঘরবাড়ির মধ্যে দিয়ে মানুষ চলাচল করছে।

থাইল্যান্ডে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বন্যা
থাইল্যান্ডে কমপক্ষে ১৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকার ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কাজ করছে। মৃতদের পরিবারকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ বাথ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে বন্যা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে; ইতোমধ্যে দুই স্থানীয় কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন।

মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চল প্লাবিত
মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চল পেরলিস রাজ্যের বহু এলাকা প্লাবিত। সেখানে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ইতিহাসের তুলনা
শ্রীলঙ্কায় এবারকার ক্ষয়ক্ষতি ২০০৪ সালের বিধ্বংসী এশিয়ান সুনামির পর সবচেয়ে বড়। ওই সুনামিতে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল এবং এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছিল।
মৌসুমি বৃষ্টিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে বিপর্যয়
এ বছরের মৌসুমি বৃষ্টিতে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়েছে, খাদ্য ও জরুরি সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে।
প্রতিবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মৌসুমি বৃষ্টি ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়। এ বছর সেই বিপর্যয় আরও ব্যাপক হয়েছে।

#দুর্যোগ #এশিয়া #বন্যা #ঘূর্ণিঝড় #শ্রীলঙ্কা #ইন্দোনেশিয়া #থাইল্যান্ড #মালয়েশিয়া #সংবাদ
আপনি চাইলে এই লেখাটি আরও সংবাদপত্রের স্টাইলে সাজিয়ে দিতে পারি, অথবা সংক্ষিপ্ত/বিস্তারিত কোনো সংস্করণও প্রস্তুত করতে পারি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















