দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধনকুবের দাতাদের অর্থ, মতামত, পরামর্শ—এমনকি হুমকির মুখে পরিচালিত হয়ে এসেছে। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর সেই প্রভাব এখন বহু গুণ বেড়ে গেছে। এবার ধনকুবেরদের হাতে এসেছে নতুন এক মিত্র—হোয়াইট হাউস নিজেই।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছে কয়েকজন বিলিয়নিয়ারের সেই প্রচেষ্টাকে, যার উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি, স্বাধীনতা ও আদর্শকে নিজের পছন্দের দিকে টেনে নেওয়া। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষার কাঠামো যে এক গভীর রূপান্তরের পথে, তা এখন আর আড়ালে নেই।
হার্ভার্ড–পেনসিলভেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট অপসারণ—নতুন যুগের সূচনা
২০২৩ সালে শুরু হয় সুনামির মতো পরিবর্তন।
- • হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপক বিল অ্যাকম্যান
- • প্রাইভেট–ইক্যুইটি দিগ্গজ মার্ক রোয়ান
এই দু’জন তাদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার ও দাতা–চাপের মাধ্যমে হার্ভার্ড ও ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার প্রেসিডেন্টদের উৎখাতে সফল হন। অ্যাকম্যানের ডিইআই নীতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রচারণা সরাসরি প্রভাব ফেলেছিল ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণে।
মার্ক রোয়ান আরও দূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল—ফেডারেল তহবিল চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ট্রাম্প প্রশাসনের আদর্শিক শর্ত মানতে হবে। রোয়ানের কারণ—সনাতন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন ব্যবস্থা “স্ব–সংস্কারের অক্ষম এক কাঠামো”।
শিক্ষাক্ষেত্রে ট্রাম্পের ‘বাহির থেকে নিয়ন্ত্রণ’ নীতি
ট্রাম্প প্রকাশ্যে বিলিয়নিয়ারদের—বিশেষত রোয়ানের—ধারণাকে গ্রহণ করেছেন। এতে শিক্ষা বিভাগের সিদ্ধান্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক—সবকিছুতেই আসছে পরিবর্তন।
হোয়াইট হাউসের ব্যাখ্যা—ধনকুবেরেরা বহুদিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন; তাদের প্রস্তাবই উচ্চশিক্ষাকে “পুনরুজ্জীবিত” করতে পারে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্বের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। কলম্বিয়া ও মিশিগানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লি বোলিঞ্জার সতর্ক করে বলেন—
“সমালোচনা করা সবার অধিকার। কিন্তু প্রভাব–বলয় যখন দাবির তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন বিপদ জন্মায়।”
মার্ক রোয়ান—যেখানে প্রভাব, সেখানে বিতর্ক
রোয়ান শুধু দাতা নন; তিনি অ্যাপোলো গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের সিইও—যার বড় বিনিয়োগ ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স–এ, দীর্ঘদিন বিতর্কিত একটি ফর–প্রফিট বিশ্ববিদ্যালয়।
সেখানে—
- • গ্র্যাজুয়েশন রেট কম

- • শিক্ষার্থীদের আয় কম
- • ঋণের বোঝা বেশি
তবু রোয়ান একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানহানি করছেন, অন্যদিকে সেই একই খাতে মুনাফা তুলছেন—এ অভিযোগ নিয়ে অনেক শিক্ষক রাস্তায় নেমেছেন।
পেনসিলভেনিয়ায় রোয়ানের হস্তক্ষেপ ছিল আরও সরাসরি। ইসরায়েল–সম্পর্কিত ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিরোধ হলে তিনি দাতাদের একত্র করে অর্থ–বয়কটের ডাক দেন এবং অবশেষে প্রেসিডেন্ট ম্যাগিলকে পদত্যাগে বাধ্য করেন।
উচ্চশিক্ষায় বাহ্যিক চাপ—গণতন্ত্রের জন্য সংকেত?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঐতিহ্যগতভাবে সমাজের স্বাধীন চিন্তার কেন্দ্র। কিন্তু আজ সেই ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে—অর্থসম্পদ কেমনভাবে রাজনৈতিক ও নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।

কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন—ট্রাম্প প্রশাসন সমালোচকদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দিচ্ছে।
ভেটেরান শিক্ষাসংগঠনের নাসিরিয়ান বলেন—
“ইচ্ছা করে আগেকার দিনে ধনকুবেরেরা বিরল শিল্প–সংগ্রহেই ব্যস্ত থাকতেন।”
অর্থ, রাজনীতি ও শিক্ষা—এই ত্রিমাত্রিক শক্তির সংঘর্ষ আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবিষ্যৎকে গভীরভাবে বদলে দেবে—এতে সন্দেহ নেই।
#USPolitics #HigherEducation #Universities #Sarakhon #ThePresentWorld
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















