মার্কিন বাজারে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর ভারতীয় রপ্তানি খাত এক কঠিন বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়েছে। তবু আশ্চর্যভাবে দেখা যাচ্ছে, সামুদ্রিক পণ্য, গাড়ির যন্ত্রাংশ, রত্ন-গহনা ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির উল্লেখযোগ্য অংশ সরে যাচ্ছে নতুন বাজারে—এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি অর্থনীতি সেই চাপ সামলানোর জায়গা হয়ে উঠছে।
নতুন বাজার খুঁজে নিচ্ছে রত্ন, সামুদ্রিক পণ্য ও অটো কম্পোনেন্টস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রত্ন ও গহনার রপ্তানি সেপ্টেম্বরে আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭৬ শতাংশ কমে গেছে। কিন্তু মোট রপ্তানির পতন মাত্র দেড় শতাংশ—কারণ এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানি বেড়েছে ৭৯ শতাংশ, হংকংয়ে ১১ শতাংশ, বেলজিয়ামে ৮ শতাংশ।

গাড়ির যন্ত্রাংশ খাতেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমলেও জার্মানি, ইউএই ও থাইল্যান্ডে বেড়েছে, ফলে মোট রপ্তানি বেড়েছে ৮ শতাংশ। এদিকে সামুদ্রিক পণ্যের রপ্তানি সেপ্টেম্বরে ২৫ শতাংশ এবং অক্টোবরে ১১ শতাংশ এগিয়েছে—মূলত চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে চাহিদা বাড়ার কারণে।
এই বৈচিত্র্য প্রয়াস দেখাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি বিলম্বিত হলেও ভারতের বিস্তৃত বাণিজ্য-সংযোগ অন্য বাজারে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারছে।
কম দামের পণ্যে ধাক্কা, ছোট ইউনিটগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে
তবে সব খাত সমানভাবে টিকে থাকতে পারছে না। কম মুনাফার, শ্রমনির্ভর খাত—যেমন সুতি পোশাক, স্পোর্টস সামগ্রী, কার্পেট ও চামড়ার জুতো—তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে আছে। চীন ও আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখানে আরও কঠিন।
স্পোর্টস সামগ্রীর ৪০ শতাংশ রপ্তানি যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে শুল্ক বাড়তেই অক্টোবর মাসে এই খাতের মোট রপ্তানি ৬ শতাংশ কমেছে। সুতি পোশাকেও রপ্তানি হ্রাসের ধারা স্পষ্ট—যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ শতাংশ পতনের পর ইউএই, স্পেন ও ইতালিতে রপ্তানি বাড়লেও মোট রপ্তানি সেপ্টেম্বরেই ৬ শতাংশ কমে যায়। চামড়ার জুতোর রপ্তানিও ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

সরকার তাই শ্রমনির্ভর সামুদ্রিক পণ্য খাতকে জোরালোভাবে নতুন বাজারে পাঠাতে চাইছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমোদিত ভারতীয় সামুদ্রিক ইউনিটের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ—অতিরিক্ত ১০২টি ইউনিট এখন রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে। রাশিয়াতেও নতুন বাজার খোলা হতে পারে, যেখানে আরও ২৫টি ইউনিট অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
এসব পদক্ষেপে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি নতুন বাজারে সরানো সম্ভব হলেও এর তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে আগে সরবরাহ করা পণ্যের পরিমাণ ছিল ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি—অর্থাৎ চাপ কমলেও সম্পূর্ণ ঘোচেনি।
সবচেয়ে বেশি আঘাত লেগেছে চিংড়ি রপ্তানিতে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ভারতের মোট সামুদ্রিক রপ্তানির ৬৫ শতাংশই ছিল চিংড়ি—যা সাধারণত কম মুনাফার পণ্য।
বৈচিত্র্যের পথে সরকার ও রপ্তানিকারকদের জোর তৎপরতা
![Dólar à vista [chevron_left]brby[chevron_right] sobe 0,15%, a r$5,3993 na venda, nos primeiros negócios do dia | Reuters](https://www.reuters.com/resizer/v2/MHG23WQZTBOMNJQEQ63C3U42BA.jpg?auth=86d70463298b5736467ad6032cfa684ac4213d9ea1849272359f455e3ce2ce96&width=5500&quality=80)
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানিকারকদের সতর্ক করেছে, নতুন বাজারে জায়গা পেতে দামে বড় ধরণের কাটতি না করতে। এতে পণ্যের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কিছু চালান গেলেও সেগুলো ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে মধ্য আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ার নতুন ক্রেতাদের মাধ্যমে—ইন্দোনেশিয়া ও ইকুয়েডর এখন এই বাজারে শীর্ষ লাভজনক দেশ।
ভারতের জন্য বড় সম্ভাবনার জায়গা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হলে শুল্ক কমে আসবে প্রায় ১২ শতাংশ থেকে—যা রপ্তানিতে নতুন গতি আনবে। ইতিমধ্যে ইউরোপে ভারতের সামুদ্রিক রপ্তানি ১.১ বিলিয়ন ডলারের বাজার, এবং নতুন অনুমোদনে এই রপ্তানি আরও ২০–২৫ শতাংশ বাড়তে পারে।
রপ্তানি খাতে টিকে থাকতে সরকার ৪৫,০৬০ কোটি রুপির সহায়তা অনুমোদন করেছে—যার মধ্যে ২০,০০০ কোটি রুপি ব্যাংক ঋণের গ্যারান্টি।
এসব পদক্ষেপে এক বিষয় স্পষ্ট—মার্কিন শুল্ক চাপ বাড়লেও ভারতের রপ্তানি বৈচিত্র্য ক্রমে নতুন পথ দেখাচ্ছে। দেশটি ধীরে ধীরে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বাজারে আরও স্থায়ী অবস্থান গড়ে তুলছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















