০৪:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫
খাবার ফুরিয়ে আসছে, নেই ইন্টারনেট; ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ১৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ইয়াশ রোহান: নীরবতার ভেতরে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের তারকা তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান খালেদা জিয়ার অবস্থার উন্নতি, চিকিৎসা সঠিকভাবে চলছে: ডা. জাহিদ মনউন্মোচনকারী উপন্যাস ‘লাইটব্রেকার্স’ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তালেবান ইস্যুতে বাড়ছে আফগান-পাকিস্তান উত্তেজনা জলব্যায়ামে প্রেম, আর শেষ পর্যন্ত পুলেই বিয়ে টেক্সাসে মুসলিম অধিকার সংস্থা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণার জেরে তীব্র প্রতিক্রিয়া খরা কি উন্নত সিন্ধু সভ্যতার অবসান ঘটিয়েছিল? ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস: শীতের কাঁপুনিতে শুরু হলো ডিসেম্বর

পাকিস্তানের আফগানিস্তানবিরোধী বাণিজ্যযুদ্ধ উল্টো আঘাত হানছে নিজ অর্থনীতিতেই

পাকিস্তান-তালেবান উত্তেজনা এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এখন তার নিজের অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরের পর সীমান্ত বন্ধ, আকাশ থেকে টিটিপি ঘাঁটিতে বিমান হামলা এবং কূটনৈতিক টানাপড়েন—সব মিলিয়ে পাকিস্তান এখন বছরে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রপ্তানি হারানোর ঝুঁকিতে।

এদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার দ্রুতই বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে—ইরান, ভারত ও মধ্য এশিয়ার দিকে তাদের বাণিজ্য সরে যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক চাপ যেমন তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানের ওপর, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য মানচিত্রেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে।

Absolutely no truth': Pakistan rejects claims of involvement in ouster of  Bangladesh's Hasina | Arab News

সীমান্ত বন্ধ, বাণিজ্য অচল

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে—আফগান তালেবান টিটিপিকে সহায়তা দিচ্ছে, এ কারণেই সীমান্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।

টিটিপি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালালেও তাদের ঘাঁটি আফগানিস্তানের ভেতরে। অক্টোবর মাসে পাকিস্তান তার জবাব দেয় সীমান্তপারের বিমান হামলা দিয়ে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তোলে।

ফলে ১১ অক্টোবর থেকে সব বাণিজ্য ও পণ্য চলাচল থেমে আছে।

ফলাফল—মাত্র এক মাসেই আফগানিস্তানে পাকিস্তানের রপ্তানি কমেছে ৫৭ শতাংশ। ২০২৪ সালে পাকিস্তান আফগানিস্তানে যেসব ৮০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য পাঠিয়েছিল, সেই বাজার এখন কার্যত অচল। মধ্য এশিয়ায় রপ্তানির ২৭০ মিলিয়ন ডলারও আফগান ট্রানজিট বন্ধ হয়ে ঝুঁকির মুখে।

পাকিস্তানের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। কয়েক ডজন কনটেইনার ওষুধ নিয়ে সীমান্তে আটকে আছে।

পাক-আফগান যৌথ বাণিজ্য চেম্বার বলছে—কমপক্ষে সাত থেকে দশ দিন সীমান্ত খুলে দিলে আটকে থাকা পণ্য উদ্ধার করা সম্ভব।

Pakistan-Afghanistan News: How trade war with Kabul is bleeding Islamabad -  India Today

মানুষের চলাচলেও বিপর্যয়

চামান সীমান্তে হাজারো শ্রমিক আটকে আছে।

অনেকের বৈধ পাসপোর্ট থাকলেও দেশে ফিরতে পারছে না।

অপর পক্ষে, সীমান্ত বন্ধ থাকায় আফগানিস্তানের খাদ্যপণ্য, কয়লা ও ফলের বড় অংশও পাকিস্তানে পৌঁছাতে পারছে না—যা দুই দেশের মানুষের ওপরই চাপ তৈরি করছে।

আফগানিস্তানের বাণিজ্য এখন ইরান-ভারতমুখী

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তালেবান সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা বরাদার নির্দেশ দেন—তিন মাসের মধ্যে পাকিস্তান-নির্ভর বাণিজ্য বন্ধ করতে। দ্রুত বিকল্প পথ খুঁজে নিতে।

এর পরপরই আফগান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নূরউদ্দিন আজিজি দিল্লিতে পাঁচ দিনের সফর করেন। দুই দেশ সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়—

• ভারতে আফগান বাণিজ্য অ্যাটাশে নিয়োগ
• ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য আফগানিস্তানে স্বর্ণখনি প্রকল্পে পাঁচ বছরের কর অবকাশ
• ভারত-আফগানিস্তান সরাসরি এয়ার কার্গো করিডর

Pakistan's trade war with Afghanistan boomerangs on its economy - Nikkei  Asia

ইতোমধ্যে আফগানিস্তান ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে পাকিস্তানকে এড়িয়ে ভারত ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য করছে। যুক্তরাষ্ট্রও চাবাহার পরিচালনার জন্য ভারতকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা ছাড় দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক দ্রুত খারাপ না হলে এ পরিবর্তন আরও ধীরে ঘটত। এখন তালেবান প্রকাশ্যেই ইসলামাবাদ থেকে দূরে সরে নতুন অংশীদার খুঁজছে।

Traders urge Pakistan, Afghanistan to resolve border issues for trade  revival - Profit by Pakistan Today

দীর্ঘমেয়াদে কার ক্ষতি বেশি?

ইসলামাবাদের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন—দীর্ঘমেয়াদে এই পরিবর্তন পাকিস্তানের জন্যই বেশি ব্যয়বহুল হবে।

আফগানিস্তান মধ্য এশিয়ায় যাওয়ার বড় ট্রানজিট পয়েন্ট। সীমান্ত বন্ধ থাকলে পাকিস্তানের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক গড়ার সুযোগও কমে যাবে।

অন্যদিকে, করাচির অর্থনীতিবিদ আদিল নাখোডা মনে করেন—আফগানিস্তান সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানকে পাশ কাটাতে পারবে না।

ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং সীমিত পরিবহন সক্ষমতা আফগান-ভারত বাণিজ্যকে ধীর করে দিতে পারে।

কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে—রাজনৈতিক উত্তেজনা বাণিজ্যকে পিছিয়ে দিচ্ছে, এবং পাকিস্তানের আফগানিস্তানবিরোধী বাণিজ্যযুদ্ধ এখন তার নিজের অর্থনীতির উপরেই চাপ বাড়াচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এর প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে সামনে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

খাবার ফুরিয়ে আসছে, নেই ইন্টারনেট; ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় ১৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

পাকিস্তানের আফগানিস্তানবিরোধী বাণিজ্যযুদ্ধ উল্টো আঘাত হানছে নিজ অর্থনীতিতেই

০৫:৫০:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

পাকিস্তান-তালেবান উত্তেজনা এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এখন তার নিজের অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরের পর সীমান্ত বন্ধ, আকাশ থেকে টিটিপি ঘাঁটিতে বিমান হামলা এবং কূটনৈতিক টানাপড়েন—সব মিলিয়ে পাকিস্তান এখন বছরে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রপ্তানি হারানোর ঝুঁকিতে।

এদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার দ্রুতই বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে—ইরান, ভারত ও মধ্য এশিয়ার দিকে তাদের বাণিজ্য সরে যাচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক চাপ যেমন তৈরি হচ্ছে পাকিস্তানের ওপর, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য মানচিত্রেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে।

Absolutely no truth': Pakistan rejects claims of involvement in ouster of  Bangladesh's Hasina | Arab News

সীমান্ত বন্ধ, বাণিজ্য অচল

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে—আফগান তালেবান টিটিপিকে সহায়তা দিচ্ছে, এ কারণেই সীমান্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।

টিটিপি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালালেও তাদের ঘাঁটি আফগানিস্তানের ভেতরে। অক্টোবর মাসে পাকিস্তান তার জবাব দেয় সীমান্তপারের বিমান হামলা দিয়ে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তোলে।

ফলে ১১ অক্টোবর থেকে সব বাণিজ্য ও পণ্য চলাচল থেমে আছে।

ফলাফল—মাত্র এক মাসেই আফগানিস্তানে পাকিস্তানের রপ্তানি কমেছে ৫৭ শতাংশ। ২০২৪ সালে পাকিস্তান আফগানিস্তানে যেসব ৮০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য পাঠিয়েছিল, সেই বাজার এখন কার্যত অচল। মধ্য এশিয়ায় রপ্তানির ২৭০ মিলিয়ন ডলারও আফগান ট্রানজিট বন্ধ হয়ে ঝুঁকির মুখে।

পাকিস্তানের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। কয়েক ডজন কনটেইনার ওষুধ নিয়ে সীমান্তে আটকে আছে।

পাক-আফগান যৌথ বাণিজ্য চেম্বার বলছে—কমপক্ষে সাত থেকে দশ দিন সীমান্ত খুলে দিলে আটকে থাকা পণ্য উদ্ধার করা সম্ভব।

Pakistan-Afghanistan News: How trade war with Kabul is bleeding Islamabad -  India Today

মানুষের চলাচলেও বিপর্যয়

চামান সীমান্তে হাজারো শ্রমিক আটকে আছে।

অনেকের বৈধ পাসপোর্ট থাকলেও দেশে ফিরতে পারছে না।

অপর পক্ষে, সীমান্ত বন্ধ থাকায় আফগানিস্তানের খাদ্যপণ্য, কয়লা ও ফলের বড় অংশও পাকিস্তানে পৌঁছাতে পারছে না—যা দুই দেশের মানুষের ওপরই চাপ তৈরি করছে।

আফগানিস্তানের বাণিজ্য এখন ইরান-ভারতমুখী

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তালেবান সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা বরাদার নির্দেশ দেন—তিন মাসের মধ্যে পাকিস্তান-নির্ভর বাণিজ্য বন্ধ করতে। দ্রুত বিকল্প পথ খুঁজে নিতে।

এর পরপরই আফগান শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী নূরউদ্দিন আজিজি দিল্লিতে পাঁচ দিনের সফর করেন। দুই দেশ সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়—

• ভারতে আফগান বাণিজ্য অ্যাটাশে নিয়োগ
• ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য আফগানিস্তানে স্বর্ণখনি প্রকল্পে পাঁচ বছরের কর অবকাশ
• ভারত-আফগানিস্তান সরাসরি এয়ার কার্গো করিডর

Pakistan's trade war with Afghanistan boomerangs on its economy - Nikkei  Asia

ইতোমধ্যে আফগানিস্তান ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে পাকিস্তানকে এড়িয়ে ভারত ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য করছে। যুক্তরাষ্ট্রও চাবাহার পরিচালনার জন্য ভারতকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা ছাড় দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক দ্রুত খারাপ না হলে এ পরিবর্তন আরও ধীরে ঘটত। এখন তালেবান প্রকাশ্যেই ইসলামাবাদ থেকে দূরে সরে নতুন অংশীদার খুঁজছে।

Traders urge Pakistan, Afghanistan to resolve border issues for trade  revival - Profit by Pakistan Today

দীর্ঘমেয়াদে কার ক্ষতি বেশি?

ইসলামাবাদের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেন—দীর্ঘমেয়াদে এই পরিবর্তন পাকিস্তানের জন্যই বেশি ব্যয়বহুল হবে।

আফগানিস্তান মধ্য এশিয়ায় যাওয়ার বড় ট্রানজিট পয়েন্ট। সীমান্ত বন্ধ থাকলে পাকিস্তানের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক গড়ার সুযোগও কমে যাবে।

অন্যদিকে, করাচির অর্থনীতিবিদ আদিল নাখোডা মনে করেন—আফগানিস্তান সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানকে পাশ কাটাতে পারবে না।

ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং সীমিত পরিবহন সক্ষমতা আফগান-ভারত বাণিজ্যকে ধীর করে দিতে পারে।

কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে—রাজনৈতিক উত্তেজনা বাণিজ্যকে পিছিয়ে দিচ্ছে, এবং পাকিস্তানের আফগানিস্তানবিরোধী বাণিজ্যযুদ্ধ এখন তার নিজের অর্থনীতির উপরেই চাপ বাড়াচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এর প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে সামনে।