শত চেষ্টা করেও আলগা করে পৃথক করতে পারছিলাম না এবং কিছুক্ষণের জন্য হাঁটতেও পারিনি।
কো-পাইলটের উত্তেজিত চীৎকারের কারণ আমার বোধগম্য হলো। সেই পর্বতমালার চারদিকে আমরা বারকয়েক বৃত্তাকারে ঘুরলাম। ইত্যবসরে মেঘ এবং ছিদ্রটি দুটোর অবস্থানও সরে গেছে। তবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ছিদ্রটির মধ্য দিয়ে সাঁই করে উপরে উঠে যাই। উপরে উঠে দেখি যে জাপানিদের সেই দুই ‘জিরো’ ফাইটার প্লেন ছিদ্রটির উপরে বৃত্তাকারে ঘুরছে তো ঘুরছেই, তবে ভাগ্যিস যে তার কাছাকাছি নেই; তাই গুলি বিনিময় হয় না। কিন্তু নাছোড়বান্দা আর কারে বলে।
তারা আবারো ভেতরে ঢোকে এবং আমাদেরকে তাক করে আবারো গুলি ছোড়ে। ওদেরকে আমরা মোটেই পর্যুদস্ত করতে পারছিলাম না, কারণ ওয়া “দুই”, আমরা “এক”; ‘দুই’-এর বিরুদ্ধে ‘একে’র, অর্থাৎ “টু-টু-ওয়ান” পেরে ওঠা কঠিন। আমাদের পাইলট আবারো মেঘের ছিদ্র বেয়ে নিচে নেমে এলো। কিন্তু আমরা (ছিদ্র থেকে) বেরিয়ে এসে দেখি ওরা-ও সেখানে আবার হাজির এবং বেশ কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে।
(মেঘের) ছিদ্রটি ইত্যবসরে বেশ খানিকটা ছোটো হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে গুলি বিনিময় হলো এবং (পরে জানতে পেরেছি যে) ওরা আমাদের বি-২৫-এর “ফিউজলেজ”-এ দুটো ছিদ্র তৈরিতে সমর্থ হয়। যাহোক, আমরা এক ধরনের ডগ-ফাইটে নিয়োজিত থাকাতে এবং সেই দুই ‘জিরো’-র প্রতি ৫০ (পয়েন্ট ৫০) ক্যালিবারের টুইন 1 মেশিনগান চালাতে ব্যস্ত থাকায় ভীতসন্ত্রস্ত বা নার্ভাস অনুভব করার মতো সুযোগ আমার ছিল না।
স্পষ্টত তাদের ফাইটারের জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে আসছিল- নয়তো ‘খেলা’ শেষের অনেক আগেই রণভঙ্গ করবে কেনো আর চলেই বা যাবে কেনো! অতঃপর আমরা যখন অবতরণ করি- প্লেন থেকে নামতে যাব তখন আবিস্কার করি যে আমার দুই হাঁটুর চামড়া পরস্পরের সঙ্গে আটকে গিয়ে এমনভাবে চর্মবন্ধনীর সৃষ্টি করেছে যে শত চেষ্টা করেও আলগা করে পৃথক করতে পারছিলাম না এবং কিছুক্ষণের জন্য হাঁটতেও পারিনি।
আমার বিশ্বাস যে “আফটার-শক”-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে এরকম হয়ে থাকে। কারণ, শুধুমাত্র তো আমি একা নই, আরো অনেকের অনুরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছে”। -জেনারেল স্টিলওয়েলের সেনাবাহিনী ১৯৪৪ সালের ১৭ মে “মিয়িতকিনিয়া”-র বিমানক্ষেত্রটি দখল করতে সক্ষম হন বটে কিন্তু “মিয়িতকিনিয়া” শহর নয়; বিমানক্ষেত্র থেকে মাত্র এক মাইল দূরের পথ “মিয়িতকিনিয়া” শহর জাপানিদের দখলে থেকে যায়। অবশেষে জেনারেলের সেনাবাহিনী ১৯৪৪ সালের আগস্ট মাসে “মিয়িতকিনিয়া” শহরটি দখল করেন।
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬৫)
নাঈম হক 


















