১২:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
ক্যামেরার যুগে গোপনীয়তার বিলীন সময়: নির্মাতা অর্থনীতির অদৃশ্য চাপ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত : যুক্তিসংগত শাস্তির বিধান প্রণয়নে হাইকোর্টের রুল চাট্টাল নদী: উৎপত্তি, ভূগোল ও মানুষের জীবন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের নবগঠিত কমিটি অনুমোদন জুলাই ২০২৪ বিদ্রোহ–সংশ্লিষ্ট ১০৬ মামলায় চার্জশিট দাখিল, ২০৮৩ জনের অব্যাহতির সুপারিশ চট্টগ্রামে রোড ক্র্যাশে নিহত–আহতদের স্মরণে মানববন্ধন ভোট ছিনতাইয়ের যে কোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে: জামায়াত নেতা বাংলাদেশে জননিরাপত্তা জোরদারে ডিজিটাল ও কমিউনিটি-ভিত্তিক উদ্যোগের তাগিদ সাম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার ক্ষমতায় এলে মেগাপ্রকল্প নয়, তৃণমূলে বিনিয়োগেই অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি

ক্যামেরার যুগে গোপনীয়তার বিলীন সময়: নির্মাতা অর্থনীতির অদৃশ্য চাপ

দশ বছর আগে “দ্য ক্যামেরা ইটস ফার্স্ট” ছিল এক ধরনের মজা— ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সারদের অ্যাভোকাডো টোস্ট পোস্ট নিয়ে ঠাট্টা। আজ তা জীবনের প্রতিটি কোণের সংকেত। ডিনারের টেবিল, ঘর গুছানো, সম্পর্কের মুহূর্ত, এমনকি শোক—সবই হয়ে উঠেছে জনসম্মুখের খোলা জানালা।
এ এমন এক সময়, যখন ব্যক্তিগততা পরিণত হয়েছে পণ্যে; লাইটিং বদলালেই মানুষ আর পোস্টের ফারাক থাকে না।

নিজস্বতার ওপর দাঁড়িয়ে এক নতুন ব্যবসা

স্রেফ জীবনযাপন আর জীবনযাপন নেই—এটি পরিণত হয়েছে পারফরম্যান্সে। ইতিবাচক গর্ভধারণ টেস্ট থেকে শিশুর প্রথম স্কুল-ডে—যা কখনো ছিল পরিবারের ভেতরের মুহূর্ত, এখন তা ব্র্যান্ড কনটেন্ট।
বেশিরভাগ নির্মাতার ক্ষেত্রে যত ব্যক্তিগত, তত লাভজনক। ফলে ব্যক্তিগত সত্তা পরিণত হয়েছে এক ধরনের সম্পদশ্রেণিতে।

Performative privacy in a surveillance economy | The Daily Star
এই পথ তৈরি হয়েছিল “মমি ব্লগার”দের মাধ্যমে। তাদের সন্তানরাই এখন বড় হয়ে প্রশ্ন তুলছে— কেন তাদের শৈশব স্মৃতি বিক্রির উপাদান হয়ে উঠল? তাদের অস্বস্তি একটি ইঙ্গিত: আমাদের অন্তরঙ্গ সময়গুলো এখন জনসমক্ষে শ্রমে পরিণত হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম আন্তরিকতা বা অভিনয়—কোনোটাই বিচার করে না। শুধু দেখে, কোনটি বেশি ক্লিকযোগ্য। ব্রিটিশ ভোগ–এ সাংবাদিক শঁতে জোসেফ লিখেছিলেন— এক সময় অনলাইন জনপ্রিয়তার মাপকাঠি ছিল সম্পর্ক দেখানো, এখন সেটাই লুকিয়ে রাখা হয় এনগেজমেন্ট বাড়াতে।
ফলোয়ার মানে আয়; তাই প্রেমিককে পোস্ট করা আজ ব্যবসার ঝুঁকি।

ইনফ্লুয়েন্সার শিল্প ২০২৭ সালে ৪৮০ বিলিয়ন ডলারের হলেও, এর ভিত নড়বড়ে। দুইশ মিলিয়নের বেশি মানুষ নিজেদের ‘ক্রিয়েটর’ বললেও, স্রেফ ৪% বছরে এক লাখ ডলারের ওপরে আয় করে।
কেউ কেউ সাম্রাজ্যও গড়েছে— মিশেল ফ্যানের আইপ্সি, জ্যাকি আইনার FORVR MOOD—এগুলো এখন কেস স্টাডি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শিখাচ্ছে ‘ক্রিয়েটর ইকোনমি’।

The magic is in the prompt': Non-tech entrepreneur Gali Meiri turned AI anxiety into

গ্ল্যামারের আড়ালে ভঙ্গুর বাস্তবতা

কিন্তু এর ভেতরে নেই কোনো স্থায়ী সুরক্ষা। শিশু নির্মাতাদের জন্য নিয়ম কম; মাত্র দুটি অঙ্গরাজ্যে আয় বণ্টনের বাধ্যবাধকতা আছে।
জাতিগত বৈষম্যও রয়ে গেছে—সাদা নির্মাতারা সমপরিমাণ কাজেও বেশি আয় পায়।
বিতর্কে ব্র্যান্ডেরাও টলে যায়— যেমন হুদা বিউটি, যাকে একজন ইনফ্লুয়েন্সারের আচরণ নিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়। এর মাধ্যমে বোঝা যায়—এই ইকোসিস্টেমের নৈতিক ভিত্তি কতটা অস্থির।

প্রভাব এতই ছড়িয়েছে যে সাংবাদিকরাও হয়ে উঠছেন স্বাধীন ‘ক্রিয়েটর সাংবাদিক’। পেশা থেকে পেশায় এখন একটাই নিয়ম—দর্শক না গড়লে পিছিয়ে পড়তে হবে।

সমস্যা সৃষ্টি করে সৃষ্টিশীলতা নয়—বরং সেই কাঠামো, যা আমাদের ক্রমাগত উন্মুক্ত থাকতে বাধ্য করে, আর খুব কম প্রতিরক্ষা দেয়।
ডেটা বিক্রি হয়, গোপনীয়তা ভেঙে যায়, আর “শেয়ার করা” ও “কাজ করা”-র সীমারেখা মুছে যায়।
আমরা সবাই এক ট্রিলিয়ন ডলারের শিল্পে অবৈতনিক শ্রমিক হয়ে উঠি— শুধু দৃষ্টি আকর্ষণের বিনিময়ে।

সম্ভবত সবচেয়ে নীরব বিদ্রোহটিই সবচেয়ে সহজ।
খাবার টেবিলে প্লেট এলে, হয়তো এবার সত্যিই আগে নিজের মুখেই তুলুন— আর ফোনটাকে রেখে দিন উল্টো করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্যামেরার যুগে গোপনীয়তার বিলীন সময়: নির্মাতা অর্থনীতির অদৃশ্য চাপ

ক্যামেরার যুগে গোপনীয়তার বিলীন সময়: নির্মাতা অর্থনীতির অদৃশ্য চাপ

১২:০১:০২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

দশ বছর আগে “দ্য ক্যামেরা ইটস ফার্স্ট” ছিল এক ধরনের মজা— ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সারদের অ্যাভোকাডো টোস্ট পোস্ট নিয়ে ঠাট্টা। আজ তা জীবনের প্রতিটি কোণের সংকেত। ডিনারের টেবিল, ঘর গুছানো, সম্পর্কের মুহূর্ত, এমনকি শোক—সবই হয়ে উঠেছে জনসম্মুখের খোলা জানালা।
এ এমন এক সময়, যখন ব্যক্তিগততা পরিণত হয়েছে পণ্যে; লাইটিং বদলালেই মানুষ আর পোস্টের ফারাক থাকে না।

নিজস্বতার ওপর দাঁড়িয়ে এক নতুন ব্যবসা

স্রেফ জীবনযাপন আর জীবনযাপন নেই—এটি পরিণত হয়েছে পারফরম্যান্সে। ইতিবাচক গর্ভধারণ টেস্ট থেকে শিশুর প্রথম স্কুল-ডে—যা কখনো ছিল পরিবারের ভেতরের মুহূর্ত, এখন তা ব্র্যান্ড কনটেন্ট।
বেশিরভাগ নির্মাতার ক্ষেত্রে যত ব্যক্তিগত, তত লাভজনক। ফলে ব্যক্তিগত সত্তা পরিণত হয়েছে এক ধরনের সম্পদশ্রেণিতে।

Performative privacy in a surveillance economy | The Daily Star
এই পথ তৈরি হয়েছিল “মমি ব্লগার”দের মাধ্যমে। তাদের সন্তানরাই এখন বড় হয়ে প্রশ্ন তুলছে— কেন তাদের শৈশব স্মৃতি বিক্রির উপাদান হয়ে উঠল? তাদের অস্বস্তি একটি ইঙ্গিত: আমাদের অন্তরঙ্গ সময়গুলো এখন জনসমক্ষে শ্রমে পরিণত হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম আন্তরিকতা বা অভিনয়—কোনোটাই বিচার করে না। শুধু দেখে, কোনটি বেশি ক্লিকযোগ্য। ব্রিটিশ ভোগ–এ সাংবাদিক শঁতে জোসেফ লিখেছিলেন— এক সময় অনলাইন জনপ্রিয়তার মাপকাঠি ছিল সম্পর্ক দেখানো, এখন সেটাই লুকিয়ে রাখা হয় এনগেজমেন্ট বাড়াতে।
ফলোয়ার মানে আয়; তাই প্রেমিককে পোস্ট করা আজ ব্যবসার ঝুঁকি।

ইনফ্লুয়েন্সার শিল্প ২০২৭ সালে ৪৮০ বিলিয়ন ডলারের হলেও, এর ভিত নড়বড়ে। দুইশ মিলিয়নের বেশি মানুষ নিজেদের ‘ক্রিয়েটর’ বললেও, স্রেফ ৪% বছরে এক লাখ ডলারের ওপরে আয় করে।
কেউ কেউ সাম্রাজ্যও গড়েছে— মিশেল ফ্যানের আইপ্সি, জ্যাকি আইনার FORVR MOOD—এগুলো এখন কেস স্টাডি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও শিখাচ্ছে ‘ক্রিয়েটর ইকোনমি’।

The magic is in the prompt': Non-tech entrepreneur Gali Meiri turned AI anxiety into

গ্ল্যামারের আড়ালে ভঙ্গুর বাস্তবতা

কিন্তু এর ভেতরে নেই কোনো স্থায়ী সুরক্ষা। শিশু নির্মাতাদের জন্য নিয়ম কম; মাত্র দুটি অঙ্গরাজ্যে আয় বণ্টনের বাধ্যবাধকতা আছে।
জাতিগত বৈষম্যও রয়ে গেছে—সাদা নির্মাতারা সমপরিমাণ কাজেও বেশি আয় পায়।
বিতর্কে ব্র্যান্ডেরাও টলে যায়— যেমন হুদা বিউটি, যাকে একজন ইনফ্লুয়েন্সারের আচরণ নিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়। এর মাধ্যমে বোঝা যায়—এই ইকোসিস্টেমের নৈতিক ভিত্তি কতটা অস্থির।

প্রভাব এতই ছড়িয়েছে যে সাংবাদিকরাও হয়ে উঠছেন স্বাধীন ‘ক্রিয়েটর সাংবাদিক’। পেশা থেকে পেশায় এখন একটাই নিয়ম—দর্শক না গড়লে পিছিয়ে পড়তে হবে।

সমস্যা সৃষ্টি করে সৃষ্টিশীলতা নয়—বরং সেই কাঠামো, যা আমাদের ক্রমাগত উন্মুক্ত থাকতে বাধ্য করে, আর খুব কম প্রতিরক্ষা দেয়।
ডেটা বিক্রি হয়, গোপনীয়তা ভেঙে যায়, আর “শেয়ার করা” ও “কাজ করা”-র সীমারেখা মুছে যায়।
আমরা সবাই এক ট্রিলিয়ন ডলারের শিল্পে অবৈতনিক শ্রমিক হয়ে উঠি— শুধু দৃষ্টি আকর্ষণের বিনিময়ে।

সম্ভবত সবচেয়ে নীরব বিদ্রোহটিই সবচেয়ে সহজ।
খাবার টেবিলে প্লেট এলে, হয়তো এবার সত্যিই আগে নিজের মুখেই তুলুন— আর ফোনটাকে রেখে দিন উল্টো করে।