বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক উৎপাদন বাড়ছে দ্রুত, আর তার সঙ্গে বাড়ছে দূষণ ও মানবস্বাস্থ্যের ঝুঁকি। প্লাস্টিক বর্জ্যে সাগর, নদী ও শহর ভরে উঠছে—এমন প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও উৎপাদনের গতি কমছে না। দ্য জাপান টাইমসে প্রকাশিত নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, ২০৪০ সাল নাগাদ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে।
প্লাস্টিক দূষণের ভবিষ্যৎ চিত্র
পিউ চারিটেবল ট্রাস্টস ও আইসিএফ ইন্টারন্যাশনালের যৌথ রিপোর্ট ব্রেকিং দ্য প্লাস্টিক ওয়েভ ২০২৫-এর হিসাব অনুযায়ী,
• ২০৪০ সালে প্রতি বছর প্লাস্টিক দূষণ পৌঁছবে ২৮০ মিলিয়ন মেট্রিক টনে—যেন প্রতি সেকেন্ডে এক ট্রাক প্লাস্টিক আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
• নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন বাড়বে ৫২%।
• প্লাস্টিকজনিত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বাড়বে ৫৮% এবং ৪.২ গিগাটন কার্বন ডাই–অক্সাইড সমতুল্য নির্গমনে পৌঁছবে। যদি প্লাস্টিক উৎপাদনকে একটি দেশ ধরা হয়, তবে তা হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দূষণকারী।
সমস্যার মূল উৎস
প্লাস্টিকের বড় অংশই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি। বর্তমানে ব্যবহৃত প্লাস্টিকে রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার রাসায়নিক উপাদান, যার অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গত পাঁচ বছরে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিকে থাকা এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর নামের রাসায়নিকগুলো মানুষের হজম, প্রজনন ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
রিপোর্টের হিসাবমতে,
• ২০২৫ সালে প্লাস্টিক উৎপাদন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে বিশ্ববাসীর মোট ৫.৬ মিলিয়ন স্বাস্থ্যকর জীবনবর্ষ ক্ষতি হবে।
• ২০৪০ সালে এই ক্ষতি বেড়ে হবে ৯.৮ মিলিয়ন জীবনবর্ষ।
এদের বড় অংশই প্রাথমিক প্লাস্টিক উৎপাদন থেকে সৃষ্ট ক্যানসার ও শ্বাসজনিত রোগের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত।
আন্তর্জাতিক সমঝোতায় ব্যর্থতা
প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক চুক্তির জন্য গত আগস্টে আলোচনায় বসা দেশগুলো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। যারা বেশি প্লাস্টিক উৎপাদন করে, তারা নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন কমানোর প্রস্তাব আটকে দেয়। ফলে ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার কার্যত স্থবির অবস্থায় রয়ে গেছে।
গোপন উৎসের প্লাস্টিক
পিউ–এর ২০২০ সালের রিপোর্ট কেবল ভোক্তামুখী প্লাস্টিক বর্জ্যের দিকে নজর দিয়েছিল। কিন্তু নতুন রিপোর্টে নির্মাণ, কৃষি ও পরিবহন খাতে ব্যবহৃত লুকানো প্লাস্টিককেও বিশ্লেষণে আনা হয়েছে।
সম্ভাব্য সমাধান
রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশগুলো চাইলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে—
• পণ্যের নকশা পুনর্বিবেচনা
• পুনর্ব্যবহারের উপযোগী প্যাকেজিং
• পুনঃব্যবহারের কাঠামোতে বিনিয়োগ
উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে পুরোনো দিনের দুধওয়ালার মডেল—একবার ব্যবহারের বদলে বোতল বারবার ধুয়ে ব্যবহার।
পিউ–এর আশাব্যঞ্জক দৃশ্যপটে প্লাস্টিক উৎপাদনে দেওয়া ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে এবং বর্জ্য সংগ্রহব্যবস্থা বড় আকারে বাড়ানো হবে। এতে প্রায় সব প্লাস্টিক প্যাকেজিং সংগ্রহ করা সম্ভব হবে এবং পুনর্ব্যবহার দ্বিগুণ হতে পারে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক: কঠিন চ্যালেঞ্জ
যতই উদ্যোগ নেওয়া হোক, মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ কঠিন। বড় উৎসগুলো হলো—
• গাড়ির টায়ারের ক্ষয়
• রং
• কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য (যেমন মাটিতে গলে যায় এমন প্লাস্টিক পড, মালচিং শিট ইত্যাদি)
এসবের উপযোগী বিকল্প এখনো খুব সীমিত। তাই পিউ–এর সুপারিশ—
• মোট প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো
• নিরাপদ রাসায়নিক ব্যবহার
• মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়ানো কমাতে লক্ষ্যভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়া
বিশেষজ্ঞদের মত
বিয়ন্ড প্লাস্টিকসের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা জুডিথ এঙ্ক বলেন, প্লাস্টিক উৎপাদন কমানো ও ক্ষতিকর রাসায়নিক নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
তবে তিনি প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার বাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তার মতে—
“প্লাস্টিকের রাসায়নিক ও পলিমারের জটিলতার কারণে বড় আকারে পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে প্রায় অসম্ভব। দশকের পর দশক যে ব্যবস্থা কাজ করেনি, সেখানে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।”
#tags: প্লাস্টিক_দূষণ পরিবেশ_সংকট পিউ_রিপোর্ট বিশ্ব_স্বাস্থ্য পুনর্ব্যবহার 2040-
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















