বন্যা–ভূমিধসে বিপর্যস্ত তিন প্রদেশ
ঘূর্ণিঝড়ঘেরা প্রবল বর্ষণের পর সুমাত্রা দ্বীপে বন্যা ও ভূমিধসে ইতোমধ্যে ৮৬০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। শত শত মানুষ এখনো নিখোঁজ; বহু পরিবার সম্পূর্ণভাবে গৃহহারা। তিনটি প্রদেশজুড়ে সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি ওষুধ পাঠাচ্ছে, কারণ বহু সড়ক ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় স্থলপথে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেছেন, প্রাথমিক ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতায় ঘাটতি ছিল এবং তা পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বহু এলাকায় নদীর পানি ভয়াবহভাবে বেড়ে আশপাশের বসতিগুলো ধুয়ে নিয়ে গেছে, বিশেষ করে যেখানে ঘরবাড়ি বানানো হয়েছিল নদীর কূলঘেঁষে কিংবা ঢালু পাহাড়ের গায়ে। স্কুল, মসজিদ ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে; সেখানে পর্যাপ্ত টয়লেট, স্যানিটেশন বা চিকিৎসাসেবা নেই। কাছের শহরগুলোর হাসপাতালগুলোতে আহতদের পাশাপাশি ডায়রিয়া ও অন্যান্য জলবাহিত রোগীর চাপও দ্রুত বাড়ছে। মানবিক সংস্থাগুলোর সতর্কতা—অবিলম্বে আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা না হলে দুর্যোগের পর আরেক দফা স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

জলবায়ু ঝুঁকি ও বন উজাড়ের দায়
ইন্দোনেশিয়া বরাবরই প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ; তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রবল বর্ষণ ও বন্যার ধরণ আরও তীব্র ও ঘন ঘন হয়ে উঠেছে। সুমাত্রার বহু পাহাড়ি ঢাল আগে থেকেই বন উজাড়ের ফলে দুর্বল; ভারি বৃষ্টিতে এসব এলাকা ভেঙে বড় বড় ভূমিধস ঘটিয়েছে, যা পুরো গ্রামকে গ্রাস করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনিয়ন্ত্রিত খনন, অবৈধ কাঠ কাটা এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিকল্পনাহীন বসতি স্থাপন—সব মিলিয়ে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
পুনর্গঠনের পথ তাই শুধু ঘরবাড়ি বানিয়ে দেওয়া নয়; নিরাপদ আবাসন, টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা, আগাম সতর্কবার্তা ও দুর্যোগ–সহনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শিল্পায়নের চাপ সামাল দিতে গিয়ে সরকারকে প্রমাণ করতে হবে, পরিবেশগত সংস্কার ও ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে তারা সত্যিই কঠোর হতে পারছে কি না। আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সবচেয়ে জরুরি কাজ—নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজ পাওয়া, অস্থায়ী হলেও নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা এবং দিনের পর দিন যে জীবিকা গড়ে তুলেছিলেন, তা আবার নতুন করে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















