০৮:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে কঠোর অবস্থান  মৈত্রী দিবসে প্রণয় ভার্মা ‘সাবসিডিতে হবে না’—চিনি শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ চাই: উপদেষ্টা আদিলুর  মানিকগঞ্জে কালিগঙ্গা নদীতে দুই শিশুর মৃত্যু যাত্রাবাড়ীতে বিদেশি পিস্তলসহ দুই যুবক গ্রেপ্তার পরস্পরনির্ভরতা ও পারস্পরিক সুফলই এগিয়ে নেবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: প্রণয় ভার্মা নিউ সাউথ ওয়েলসে ভয়াবহ বুশফায়ার, হাজারো মানুষকে সরে যেতে নির্দেশ মেলবোর্ন স্টেডিয়ামে লেডি গাগার তুমুল প্রত্যাবর্তন জাপানে রেকর্ডসংখ্যক ভাল্লুক হামলা, মানব–বন্যপ্রাণী সহাবস্থানের বড় সতর্কবার্তা ইইউর টেকসই আইন নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছে কাতার, গ্যাস সরবরাহ ঝুঁকির ইঙ্গিত

অ্যামাজন সফর কী বলল: জলবায়ু পদক্ষেপে পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ব

বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বড় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে, তখন অ্যামাজন সফরে অংশ নেওয়া এক যুব প্রতিনিধি বুঝলেন—জলবায়ু সংকট আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব, জটিল এবং সময়সীমাহীন।

অ্যামাজন সফরে এই যুব প্রতিনিধি কী শিখলেন জলবায়ু পদক্ষেপ সম্পর্কে

ত্রিশতম কপ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ আলোচনা করছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল—ফসিল জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে ধীরে ধীরে বন্ধ করা যায়। ভারত, রাশিয়া, সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতের মতো ফসিল জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর কারণে আলোচনা কঠিন হয়ে ওঠে। ৮০টিরও বেশি দেশ ফসিল জ্বালানির ব্যবহার কমানোর রোডম্যাপের সমর্থন জানালেও, বিরোধিতা ছিল প্রবল। প্রায় এক হাজার ছয়শোরও বেশি ফসিল জ্বালানি লবিস্টও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

অ্যামাজনের রেইনফরেস্টে বাস্তব অভিজ্ঞতা

ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত কপ ত্রিশ সম্মেলনে আলোচনার পাশাপাশি স্থানীয় অ্যামাজনবাসীর সঙ্গে কথা বলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত প্রভাব বুঝতে পারি। কুম্বু দ্বীপে গিয়ে দেখি—নদীর পানি বেড়ে যাওয়া, অনিয়মিত ফসল, খেজুর বীজের নির্ধারিত সময়ে ফলন না হওয়া, আকাই বেরির দেরিতে পাকাভাব—সব মিলিয়ে জীবন ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত। আকস্মিক বন্যার কারণে শিক্ষকরা শহর থেকে দ্বীপে যেতে না পারায় শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

COP30 draft under fire for lack of fossil fuel plan

ফসিল জ্বালানি নির্ভরতা কমানোর রোডম্যাপ বাতিল

কপ ত্রিশ সম্মেলনে ফসিল জ্বালানির ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধের আন্তর্জাতিক রোডম্যাপ তৈরির প্রস্তাব চূড়ান্ত মুহূর্তে বাতিল হয়। ব্রাজিল সরকার জানায়—২০২৬ সালের এপ্রিলে কলম্বিয়ার সান্তা মার্তা শহরে নতুন রোডম্যাপ নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনার আয়োজন করা হবে।

তরুণদের ভূমিকা আরও স্পষ্ট

সিঙ্গাপুর প্যাভিলিয়নে যুব প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে আমি বাংলাদেশের দূরবর্তী অঞ্চলে সৌরশক্তি ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। অস্ট্রেলিয়ার যুব প্রতিনিধি ফাহাদ হায়দার জানান—কম খরচে সৌর প্যানেল স্থাপন ও স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দিয়ে কীভাবে টেকসই শক্তি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

‘ন্যায্য পরিবর্তন কর্মসূচি’

কপ ত্রিশে ‘জাস্ট ট্রানজিশন ওয়ার্ক প্রোগ্রাম’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। জাতিসংঘের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো শ্রমিক, বিশেষত ফসিল জ্বালানি খাতের কর্মীদের জন্য ন্যায্য ও নিরাপদ রূপান্তর নিশ্চিত করা। সিঙ্গাপুরের জলবায়ু আলোচক জনাব জোসেফ টিও দক্ষভাবে সেশনটি পরিচালনা করেন।

Brazil's Lula joins negotiators at UN climate talks, but no deal yet on major issues | The Seattle Times

অ্যামাজনের সুরক্ষায় রাজনৈতিক সম্মতি অনুপস্থিত

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বনাঞ্চল অ্যামাজন রক্ষায় প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেশগুলো একমত হতে পারেনি। ৯২টি দেশ সমর্থন জানালেও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার প্রস্তাব চূড়ান্ত আলোচনায় পৌঁছায়নি।

কুম্বু দ্বীপবাসীর চোখে জলবায়ু পরিবর্তন

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান—দীর্ঘখরা, অসম বৃষ্টিপাত, বন্যা—সব মিলিয়ে কৃষি, খাদ্য সরবরাহ, আয় এবং জীবনযাত্রা বদলে যাচ্ছে। প্রমাণ হয়—জলবায়ু সংকট শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবন, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতকেও বদলে দিচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের জলবায়ু পদক্ষেপ

সিঙ্গাপুরে সরাসরি জলবায়ুর প্রভাব কম চোখে পড়লেও সরকার দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে ভর্তুকি, নগর সবুজায়ন এবং ‘হিট রেজিলিয়েন্ট সিটি’ গবেষণার মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

Asia and the Pacific Needs Grid Upgrade to Drive Energy Transition, says ADB Report | Asian Development Bank

এশিয়া-প্যাসিফিকে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

এশিয়া–প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি ভাগাভাগি, বন সংরক্ষণ ও কার্বন বাজার থেকে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি—এসব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। লক্ষ্য—একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া।

ভবিষ্যতের পথ

কপ ত্রিশের অভিজ্ঞতা আমাকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝিয়েছে—জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা শুধু আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত নয়; স্থানীয় সমস্যা, মানুষের অভ্যাস, শিক্ষা এবং সম্প্রদায়িক পদক্ষেপ—সবকিছুর সমষ্টি। যুবকদের জন্য এখানে বিরাট অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।

কুম্বু দ্বীপবাসীর বার্তা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে—আমরা আজ কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, কীভাবে জীবনযাপন করছি, কী শিখছি—সবই ভবিষ্যতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করবে।

 

# জলবায়ু_পরিবর্তন অ্যামাজন কপ৩০ নবায়নযোগ্য_শক্তি ফসিল_জ্বালানি পরিবেশ জলবায়ু_পদক্ষেপ যুব_প্রতিনিধি ব্রাজিল অ্যামাজন_রেইনফরেস্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে কঠোর অবস্থান

অ্যামাজন সফর কী বলল: জলবায়ু পদক্ষেপে পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ব

০৬:৪৬:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বড় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে, তখন অ্যামাজন সফরে অংশ নেওয়া এক যুব প্রতিনিধি বুঝলেন—জলবায়ু সংকট আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি বাস্তব, জটিল এবং সময়সীমাহীন।

অ্যামাজন সফরে এই যুব প্রতিনিধি কী শিখলেন জলবায়ু পদক্ষেপ সম্পর্কে

ত্রিশতম কপ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ আলোচনা করছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল—ফসিল জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে ধীরে ধীরে বন্ধ করা যায়। ভারত, রাশিয়া, সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতের মতো ফসিল জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলোর কারণে আলোচনা কঠিন হয়ে ওঠে। ৮০টিরও বেশি দেশ ফসিল জ্বালানির ব্যবহার কমানোর রোডম্যাপের সমর্থন জানালেও, বিরোধিতা ছিল প্রবল। প্রায় এক হাজার ছয়শোরও বেশি ফসিল জ্বালানি লবিস্টও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

অ্যামাজনের রেইনফরেস্টে বাস্তব অভিজ্ঞতা

ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত কপ ত্রিশ সম্মেলনে আলোচনার পাশাপাশি স্থানীয় অ্যামাজনবাসীর সঙ্গে কথা বলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত প্রভাব বুঝতে পারি। কুম্বু দ্বীপে গিয়ে দেখি—নদীর পানি বেড়ে যাওয়া, অনিয়মিত ফসল, খেজুর বীজের নির্ধারিত সময়ে ফলন না হওয়া, আকাই বেরির দেরিতে পাকাভাব—সব মিলিয়ে জীবন ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত। আকস্মিক বন্যার কারণে শিক্ষকরা শহর থেকে দ্বীপে যেতে না পারায় শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

COP30 draft under fire for lack of fossil fuel plan

ফসিল জ্বালানি নির্ভরতা কমানোর রোডম্যাপ বাতিল

কপ ত্রিশ সম্মেলনে ফসিল জ্বালানির ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধের আন্তর্জাতিক রোডম্যাপ তৈরির প্রস্তাব চূড়ান্ত মুহূর্তে বাতিল হয়। ব্রাজিল সরকার জানায়—২০২৬ সালের এপ্রিলে কলম্বিয়ার সান্তা মার্তা শহরে নতুন রোডম্যাপ নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনার আয়োজন করা হবে।

তরুণদের ভূমিকা আরও স্পষ্ট

সিঙ্গাপুর প্যাভিলিয়নে যুব প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে আমি বাংলাদেশের দূরবর্তী অঞ্চলে সৌরশক্তি ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। অস্ট্রেলিয়ার যুব প্রতিনিধি ফাহাদ হায়দার জানান—কম খরচে সৌর প্যানেল স্থাপন ও স্থানীয়দের প্রশিক্ষণ দিয়ে কীভাবে টেকসই শক্তি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

‘ন্যায্য পরিবর্তন কর্মসূচি’

কপ ত্রিশে ‘জাস্ট ট্রানজিশন ওয়ার্ক প্রোগ্রাম’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। জাতিসংঘের এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো শ্রমিক, বিশেষত ফসিল জ্বালানি খাতের কর্মীদের জন্য ন্যায্য ও নিরাপদ রূপান্তর নিশ্চিত করা। সিঙ্গাপুরের জলবায়ু আলোচক জনাব জোসেফ টিও দক্ষভাবে সেশনটি পরিচালনা করেন।

Brazil's Lula joins negotiators at UN climate talks, but no deal yet on major issues | The Seattle Times

অ্যামাজনের সুরক্ষায় রাজনৈতিক সম্মতি অনুপস্থিত

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বনাঞ্চল অ্যামাজন রক্ষায় প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেশগুলো একমত হতে পারেনি। ৯২টি দেশ সমর্থন জানালেও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার প্রস্তাব চূড়ান্ত আলোচনায় পৌঁছায়নি।

কুম্বু দ্বীপবাসীর চোখে জলবায়ু পরিবর্তন

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান—দীর্ঘখরা, অসম বৃষ্টিপাত, বন্যা—সব মিলিয়ে কৃষি, খাদ্য সরবরাহ, আয় এবং জীবনযাত্রা বদলে যাচ্ছে। প্রমাণ হয়—জলবায়ু সংকট শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবন, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতকেও বদলে দিচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের জলবায়ু পদক্ষেপ

সিঙ্গাপুরে সরাসরি জলবায়ুর প্রভাব কম চোখে পড়লেও সরকার দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে ভর্তুকি, নগর সবুজায়ন এবং ‘হিট রেজিলিয়েন্ট সিটি’ গবেষণার মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

Asia and the Pacific Needs Grid Upgrade to Drive Energy Transition, says ADB Report | Asian Development Bank

এশিয়া-প্যাসিফিকে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

এশিয়া–প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি ভাগাভাগি, বন সংরক্ষণ ও কার্বন বাজার থেকে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি—এসব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। লক্ষ্য—একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া।

ভবিষ্যতের পথ

কপ ত্রিশের অভিজ্ঞতা আমাকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝিয়েছে—জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা শুধু আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত নয়; স্থানীয় সমস্যা, মানুষের অভ্যাস, শিক্ষা এবং সম্প্রদায়িক পদক্ষেপ—সবকিছুর সমষ্টি। যুবকদের জন্য এখানে বিরাট অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।

কুম্বু দ্বীপবাসীর বার্তা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে—আমরা আজ কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, কীভাবে জীবনযাপন করছি, কী শিখছি—সবই ভবিষ্যতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করবে।

 

# জলবায়ু_পরিবর্তন অ্যামাজন কপ৩০ নবায়নযোগ্য_শক্তি ফসিল_জ্বালানি পরিবেশ জলবায়ু_পদক্ষেপ যুব_প্রতিনিধি ব্রাজিল অ্যামাজন_রেইনফরেস্ট