রেক্সহেপ রেক্সহেপি বিশ্বাস করেন, স্বাচ্ছন্দ্য মানুষকে কখনও সামনে এগোতে দেয় না। কঠিন জীবনসংগ্রামই তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাধীন ঘড়ি নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলেছে।
কঠিন জীবন, কঠিন শিক্ষা
এক্রিভিয়া প্রতিষ্ঠাতা রেক্সহেপ রেক্সহেপির ঘড়ি আজ নিলামে বিপুল দামে বিক্রি হয়। কিন্তু তিনি কখনও সফলতার গল্প বলতে পছন্দ করেন না; বরং ব্যর্থতা, হতাশা ও সংগ্রামের শক্তি নিয়েই কথা বলতে ভালোবাসেন। ৩৮ বছর বয়সী রেক্সহেপির জন্য কঠিন পথই ছিল আসল শিক্ষা—এ শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন তাঁর প্রয়াত দাদীর কাছ থেকে।
শৈশবের সংগ্রাম
১৯৮৭ সালে কসোভোতে জন্ম রেক্সহেপির। তিন বছর বয়সে মা চলে যান, বাবা ছিলেন সুইজারল্যান্ডে। তিনি বড় হন দাদীর সঙ্গে। তাঁর স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিল বাবার তিসো ঘড়ির টিকটিক শব্দ—যা তাকে ঘড়ির জগতে টেনে আনে।
১৯৯৮ সালে যুদ্ধের মুখ থেকে পালিয়ে তিনি বাবার কাছে জেনেভায় পৌঁছান। নতুন দেশ ও ভাষায় মানিয়ে নেওয়া ছিল কঠিন, তবুও তিনি জানতেন—এ পথই তাঁকে এগিয়ে নেবে।

প্রাথমিক সাফল্য
১৫ বছর বয়সে পাটেক ফিলিপের মতো বিশ্বখ্যাত ঘড়ি প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পান। এরপর কাজ করেন এফ.পি. জর্নের কর্মশালায়। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করা। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “এক্রিভিয়া”—যার অর্থ নির্ভুলতা।
কঠিন শুরু
শুরুটা ছিল একদম নিচ থেকে—একটি সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টে সীমিত সম্পদ নিয়ে। প্রথম তিন বছর একটি ঘড়িও বিক্রি করতে পারেননি। ঋণের চাপ বাড়ছিল, কিন্তু হাল ছাড়েননি।
তিনি নিজেকে বলতেন, “আমি এর চেয়েও বেশি যোগ্য।”
সাফল্যের নতুন দিগন্ত
২০১৩ সালে তাঁর প্রথম মডেল AK-01 টুরবিলন ক্রোনোগ্রাফ মোনোপুশার উন্মোচিত হয়। এটি দ্রুতই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়।
২০১৮ সালে তাঁর “ক্রোনোমিটার কন্টেম্পোরেইন” ঘড়িটি গ্র্যান্ড প্রিক্স দে জেনেভা পুরস্কার জিতে তাকে ঘড়ি নির্মাণের শীর্ষস্থানে পৌঁছে দেয়।
২০২৪ সালে তাঁর তিনটি ঘড়ি নিলামে বিক্রি হয় ৪.৩ মিলিয়ন ডলারে। কিন্তু রেক্সহেপি বলেন, “নিলামের দাম নয়, আমার কাজই আমাকে পরিচিত করুক।”

নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার তাড়না
রেক্সহেপি কখনও এমন ঘড়ি বিক্রি করেন না যেটিকে তিনি নিজের মান অনুযায়ী যথেষ্ট ভালো মনে করেন না। নতুন নতুন ডিজাইনের কারণে তিনি প্রতিটি মডেলের উৎপাদন সীমিত রাখেন। তাঁর ভাষায়, “স্বাচ্ছন্দ্য আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেয় না।”
অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছে দিতে তিনি একজন প্রশিক্ষণার্থীও নিয়োগ করেছেন।
এক সোনালী শেষ
রেক্সহেপি বলেন, “আমি আরও দ্রুত এগোতে চাই কিন্তু পারছি না—এটাই আমাকে বড় হতে সাহায্য করে।”
তার মতে, সাফল্য অর্থ বা মর্যাদার বিষয় নয়—এটি তাঁর বাবা, শিক্ষক, এবং বিশেষ করে দাদীর বিশ্বাসের প্রতি সম্মান।
“যদি কষ্ট না হয়, তবে কিছুই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















