১১:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
কষ্ট না হলে বিশ্বাস জন্মায় না: এক্রিভিয়া প্রতিষ্ঠাতা রেক্সহেপ রেক্সহেপির পথচলার গল্প ইউক্রেনজুড়ে রুশ ড্রোন–মিসাইলের নজিরবিহীন হামলা স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের সঙ্গে অসদাচরণের জেরে এমএমসিএইচ চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে কঠোর অবস্থান  মৈত্রী দিবসে প্রণয় ভার্মা ‘সাবসিডিতে হবে না’—চিনি শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ চাই: উপদেষ্টা আদিলুর  মানিকগঞ্জে কালিগঙ্গা নদীতে দুই শিশুর মৃত্যু যাত্রাবাড়ীতে বিদেশি পিস্তলসহ দুই যুবক গ্রেপ্তার পরস্পরনির্ভরতা ও পারস্পরিক সুফলই এগিয়ে নেবে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: প্রণয় ভার্মা নিউ সাউথ ওয়েলসে ভয়াবহ বুশফায়ার, হাজারো মানুষকে সরে যেতে নির্দেশ

ইউক্রেনজুড়ে রুশ ড্রোন–মিসাইলের নজিরবিহীন হামলা

রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ব্যাপক আকাশ হামলা
রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর যুদ্ধের অন্যতম বড় আকাশ হামলা চালিয়েছে। রাতভর একাধিক ধাপে শত শত ড্রোন ও ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, যার লক্ষ্য ছিল রাজধানী কিয়েভ থেকে শুরু করে সামনের সারির শহর ও অপেক্ষাকৃত পেছনের অঞ্চল পর্যন্ত। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ অবকাঠামো, শিল্পকারখানা ও ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; বহু মানুষ বোমা আশ্রয়ে রাত কাটিয়েছে। রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে কেন্দ্র করে এই হামলা চালানো হয়েছে, যা দেশীয় জনমত ও আন্তর্জাতিক অডিয়েন্সের উদ্দেশে শক্তি প্রদর্শনের বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নতুন এই ধাপকে “ক্লান্ত করে তোলার সন্ত্রাস” বলে আখ্যা দিয়ে বেসামরিক মানুষের মনোবল ভাঙার প্রয়াস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

স্থানীয় প্রশাসনগুলোর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরো পড়ে একাধিক বহুতল ভবনে আগুন ধরে যায়, একটি শপিং সেন্টারসহ নানা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কিছু এলাকায় আংশিক ব্ল্যাকআউট দেখা দেয়। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী দাবি করেছে, তারা অধিকাংশ আত্মঘাতী ড্রোন ও কিছু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে; তবে এমন বিশাল আকারের হামলা অনেক জায়গায় রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাপে ফেলে। কৃষ্ণসাগর উপকূলীয় শহর ওডেসায় ধ্বংসাবশেষ বন্দরের কাছে পড়ায় শস্য রপ্তানি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পুরো রাত জুড়ে দমকল ও উদ্ধারকারী দলগুলো ধসে পড়া স্থাপনা, ক্ষতিগ্রস্ত সাবস্টেশন ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে, আর কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে যে হতাহতের আনুষ্ঠানিক সংখ্যা এখনও বাড়তে পারে।

অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা সহায়তার দাবিতে কিয়েভের চাপ বৃদ্ধি
এই বিপুল আক্রমণকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা অংশীদারদের কাছে আরও উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত গোলাবারুদের দাবিতে নতুন করে সুর উঁচু করেছে কিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অগ্রাধিকারের পরিবর্তনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে আলোচনার সময়েই নতুন এই হামলা ঘটল। ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রতিটি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে যে ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা রকেট ব্যবহার করতে হয়, সেগুলোর মজুত দ্রুত কমে যাচ্ছে; অন্যদিকে রাশিয়া তুলনামূলক সস্তা ড্রোন বড় আকারে উৎপাদন ও আমদানি করতে পারছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ড্রোনবহুল প্রথম ধাপ দিয়ে রাডারকে বিভ্রান্ত করে পরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া—এমন কৌশলের মাধ্যমে রাশিয়া দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে এবং উচ্চমূল্যের প্রতিরক্ষা ইউনিটের অবস্থানও পরীক্ষায় ফেলছে।

যদিও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিয়েভ জোর দিয়ে বলছে, এই আকাশ হামলার পরেও রাশিয়া স্থলযুদ্ধে বড় ধরনের অগ্রগতি দেখাতে পারেনি এবং বর্তমান পরিস্থিতি মূলত চাপ সৃষ্টির কৌশল; তবু ফ্রন্টলাইন থেকে বহু দূরের শহরগুলোতে বসবাসকারী মানুষের ওপর এর মানসিক প্রভাব গভীর। বাইরে প্রচণ্ড শীত, ভেতরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা—এর মাঝেই নানা প্রজন্মের মানুষ রাত কাটাচ্ছে ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশন বা বেসমেন্টে। মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্রিডে নতুন করে ক্ষয়ক্ষতি হলে এই শীতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়বে বয়স্ক মানুষ, শিশু ও আগেই বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলো। কূটনৈতিক পর্যায়ে মধ্যস্থতাকারীরা পর্দার আড়ালে সংলাপ চালু রাখার চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু শনিবারের হামলা দেখিয়ে দিল—যেকোনো সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এখনো অনেক দূরের পথ। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের কাছে বার্তাটি স্পষ্ট: এই যুদ্ধ এখন কেবল ট্রেঞ্চে নয়, আকাশের নিচে টিকে থাকার লড়াইও।

জনপ্রিয় সংবাদ

কষ্ট না হলে বিশ্বাস জন্মায় না: এক্রিভিয়া প্রতিষ্ঠাতা রেক্সহেপ রেক্সহেপির পথচলার গল্প

ইউক্রেনজুড়ে রুশ ড্রোন–মিসাইলের নজিরবিহীন হামলা

১০:০০:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ব্যাপক আকাশ হামলা
রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর যুদ্ধের অন্যতম বড় আকাশ হামলা চালিয়েছে। রাতভর একাধিক ধাপে শত শত ড্রোন ও ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, যার লক্ষ্য ছিল রাজধানী কিয়েভ থেকে শুরু করে সামনের সারির শহর ও অপেক্ষাকৃত পেছনের অঞ্চল পর্যন্ত। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ অবকাঠামো, শিল্পকারখানা ও ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; বহু মানুষ বোমা আশ্রয়ে রাত কাটিয়েছে। রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী দিবসকে কেন্দ্র করে এই হামলা চালানো হয়েছে, যা দেশীয় জনমত ও আন্তর্জাতিক অডিয়েন্সের উদ্দেশে শক্তি প্রদর্শনের বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নতুন এই ধাপকে “ক্লান্ত করে তোলার সন্ত্রাস” বলে আখ্যা দিয়ে বেসামরিক মানুষের মনোবল ভাঙার প্রয়াস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

স্থানীয় প্রশাসনগুলোর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরো পড়ে একাধিক বহুতল ভবনে আগুন ধরে যায়, একটি শপিং সেন্টারসহ নানা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কিছু এলাকায় আংশিক ব্ল্যাকআউট দেখা দেয়। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী দাবি করেছে, তারা অধিকাংশ আত্মঘাতী ড্রোন ও কিছু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে; তবে এমন বিশাল আকারের হামলা অনেক জায়গায় রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাপে ফেলে। কৃষ্ণসাগর উপকূলীয় শহর ওডেসায় ধ্বংসাবশেষ বন্দরের কাছে পড়ায় শস্য রপ্তানি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পুরো রাত জুড়ে দমকল ও উদ্ধারকারী দলগুলো ধসে পড়া স্থাপনা, ক্ষতিগ্রস্ত সাবস্টেশন ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে, আর কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে যে হতাহতের আনুষ্ঠানিক সংখ্যা এখনও বাড়তে পারে।

অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা সহায়তার দাবিতে কিয়েভের চাপ বৃদ্ধি
এই বিপুল আক্রমণকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা অংশীদারদের কাছে আরও উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত গোলাবারুদের দাবিতে নতুন করে সুর উঁচু করেছে কিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অগ্রাধিকারের পরিবর্তনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে আলোচনার সময়েই নতুন এই হামলা ঘটল। ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রতিটি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে যে ব্যয়বহুল প্রতিরক্ষা রকেট ব্যবহার করতে হয়, সেগুলোর মজুত দ্রুত কমে যাচ্ছে; অন্যদিকে রাশিয়া তুলনামূলক সস্তা ড্রোন বড় আকারে উৎপাদন ও আমদানি করতে পারছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ড্রোনবহুল প্রথম ধাপ দিয়ে রাডারকে বিভ্রান্ত করে পরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া—এমন কৌশলের মাধ্যমে রাশিয়া দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে এবং উচ্চমূল্যের প্রতিরক্ষা ইউনিটের অবস্থানও পরীক্ষায় ফেলছে।

যদিও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিয়েভ জোর দিয়ে বলছে, এই আকাশ হামলার পরেও রাশিয়া স্থলযুদ্ধে বড় ধরনের অগ্রগতি দেখাতে পারেনি এবং বর্তমান পরিস্থিতি মূলত চাপ সৃষ্টির কৌশল; তবু ফ্রন্টলাইন থেকে বহু দূরের শহরগুলোতে বসবাসকারী মানুষের ওপর এর মানসিক প্রভাব গভীর। বাইরে প্রচণ্ড শীত, ভেতরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা—এর মাঝেই নানা প্রজন্মের মানুষ রাত কাটাচ্ছে ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশন বা বেসমেন্টে। মানবিক সংস্থাগুলো সতর্ক করছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গ্রিডে নতুন করে ক্ষয়ক্ষতি হলে এই শীতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়বে বয়স্ক মানুষ, শিশু ও আগেই বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলো। কূটনৈতিক পর্যায়ে মধ্যস্থতাকারীরা পর্দার আড়ালে সংলাপ চালু রাখার চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু শনিবারের হামলা দেখিয়ে দিল—যেকোনো সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি এখনো অনেক দূরের পথ। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের কাছে বার্তাটি স্পষ্ট: এই যুদ্ধ এখন কেবল ট্রেঞ্চে নয়, আকাশের নিচে টিকে থাকার লড়াইও।