তীব্র গরম ও ঝোড়ো হাওয়া আগুনকে ছড়িয়ে দিচ্ছে দ্রুত
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া বুশফায়ারের কারণে হাজার হাজার মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। সপ্তাহজুড়ে চলা তীব্র গরম, কম আর্দ্রতা ও ঝোড়ো বাতাস মিলিয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে পাহাড়ি ঝোপজঙ্গল থেকে শুরু করে কৃষিজমি পর্যন্ত যে কোনো স্থানে সামান্য স্ফুলিঙ্গ থেকেও আগুন লেগে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দমকল কর্মকর্তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানাচ্ছে, একাধিক আগুন নিয়ন্ত্রণ রেখা ভেঙে গেছে এবং কিছু এলাকার অগ্নিকাণ্ড ‘ইমার্জেন্সি ওয়ার্নিং’ স্তরে উঠে গেছে—যা সরাসরি প্রাণ ও সম্পদের জন্য ঝুঁকির সংকেত। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বাড়িঘর ছাই হয়ে গেছে, পুড়ে গেছে গাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা; আকাশজুড়ে ধোঁয়ার কালো মেঘ আবারও ২০১৯–২০ সালের ‘ব্ল্যাক সামার’ আগুনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে।
স্থানীয় ও আন্তঃরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দমকলকর্মীরা একটানা পালাক্রমে আগুনের সঙ্গে লড়াই করছেন। অনেক এলাকায় আগুনের তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সরাসরি মাটিতে গিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না; সেখানেই পানি ছিটানো বিমান ও হেলিকপ্টারের ওপর ভরসা রাখতে হচ্ছে। কিছু অঞ্চলে বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে—এখন আর সড়কপথে বের হওয়া নিরাপদ নয়; কাছাকাছি কমিউনিটি হল, স্কুল বা বড় কংক্রিট ভবনে আশ্রয় নেওয়াই উত্তম। যারা আগে থেকেই এলাকা ছাড়তে পেরেছেন, তাদের জন্য খোলা হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র; সেখানে চিকিৎসা সহায়তা ও শিশুসহ পরিবারের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে কিছু মহাসড়ক ও রেলপথ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে সরবরাহ শৃঙ্খলা ও ছুটির মৌসুমের ভ্রমণসূচির ওপর।

জলবায়ু পরিবর্তনে দীর্ঘতর অগ্নি মৌসুম
জলবায়ু বিজ্ঞানী ও জরুরি পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এবারের আগুন আলাদা কোনো ঘটনা নয়; বরং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী খরার ফলে অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে অগ্নি মৌসুম এবং বাড়ছে তার তীব্রতা। নিউ সাউথ ওয়েলসের বড় অংশে টানা কয়েক মাস স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে; ফলে বনজঙ্গল শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে ঝোড়ো হাওয়া শুধু আগুনের গতি বাড়াচ্ছে না, বরং অঙ্গার উড়িয়ে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার দূরে নতুন নতুন অগ্নিকাণ্ডের জন্ম দিচ্ছে। আগের অগ্নিকাণ্ডে যেসব কৃষক ও ছোট ব্যবসায়ী সবকিছু হারিয়েছিলেন, তাদের জন্য নতুন আগুন মানে আবার অনিশ্চয়তা, পুনর্গঠনের খরচ আর মানসিক চাপের পুনরাবৃত্তি।
কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ব্ল্যাক সামারের পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে হ্যাজার্ড রিডাকশন বার্ন ও আগাম প্রস্তুতির কারণে ক্ষতি আরও বেশি হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা কমেছে। কিন্তু তারা একই সঙ্গে স্বীকার করছেন, চরম আবহাওয়ার সামনে পরিকল্পনারও সীমাবদ্ধতা আছে। পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো বলছে, নিউ সাউথ ওয়েলসের সাম্প্রতিক আগুনগুলো স্পষ্ট করে দিচ্ছে—কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার গতি বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। স্থানীয় সরকারগুলো আপাতত নজর দিচ্ছে বাস্তব পদক্ষেপে—বিদ্যুৎ লাইন আরও টেকসই করা, আগেভাগে এসএমএস ও মোবাইল সতর্কতা পৌঁছে দেওয়া, আর স্বেচ্ছাসেবী ব্রিগেডগুলোকে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও মানসিক সহায়তা দেওয়া। ধোঁয়ার আবরণ যখন রাজ্য পেরিয়ে বড় শহরগুলোর আকাশ ঢেকে দিচ্ছে, তখন অনেক অস্ট্রেলিয়ানের জন্য জলবায়ু সংকট আর কেবল ভবিষ্যতের তত্ত্ব নয়; এটি তাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















