০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১৩৫) চীনের নতুন স্ট্যাটাস সিম্বল: আর্ক’টেরিক্সের এক হাজার ডলারের জ্যাকেট প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৩৬) স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এ উইল বায়ারস এখন জাদুকর—টেবিল রিড ভিডিওতে উচ্ছ্বসিত সহশিল্পীরা ভারতীয় কর্মীদের রাশিয়ায় চলাচল সহজ করা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করার ব্যাপারে সম্মতি ক্লেবার মেনডোনসা ফিলহোর ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’: একটি মজাদার রাজনৈতিক থ্রিলার কষ্ট না হলে বিশ্বাস জন্মায় না: এক্রিভিয়া প্রতিষ্ঠাতা রেক্সহেপ রেক্সহেপির পথচলার গল্প ইউক্রেনজুড়ে রুশ ড্রোন–মিসাইলের নজিরবিহীন হামলা স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের সঙ্গে অসদাচরণের জেরে এমএমসিএইচ চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত ট্রাম্প প্রশাসনের নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে কঠোর অবস্থান

চীনের নতুন স্ট্যাটাস সিম্বল: আর্ক’টেরিক্সের এক হাজার ডলারের জ্যাকেট

লাক্সারি মন্দার মধ্যেও বাড়ছে টেকনিক্যাল আউটারওয়্যারের চাহিদা
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—কানাডিয়ান আউটডোর ব্র্যান্ড আর্ক’টেরিক্স কীভাবে চীনে নীরবে এক বিশেষ ধরনের লাক্সারি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। শাংহাইয়ের ওয়েস্ট নানজিং রোডে তাদের বিশাল ‘মিউজিয়াম’ স্টোরের সামনে এখন প্রায় নিয়মিতই লাইন পড়ে; ভেতরে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পাহাড়ি পাথুরে দেয়াল নকশার পটভূমিতে ঝুলছে জলরোধী, টেকনিক্যাল জ্যাকেট, যার দাম অনেক ক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকার চেয়েও বেশি। রিয়েল এস্টেট সংকট আর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে চীনা ক্রেতাদের বড় অংশ ঝকঝকে লোগোপূর্ণ পণ্যের বদলে দীর্ঘমেয়াদে মূল্য ধরে রাখবে—এমন পণ্যে ঝুঁকছে; আর্ক’টেরিক্স ঠিক সেই জায়গাতেই নিজেদের দাঁড় করিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছর আগে যেখানে গ্রেটার চায়না অঞ্চল থেকে আর্ক’টেরিক্সের বিক্রির প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসত, এখন তা বেড়ে প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে; ফলে ব্র্যান্ডটির সামগ্রিক আয় দুই বিলিয়ন ডলারেরও ওপরে উঠেছে।

অ্যান্টা স্পোর্টসের নিয়ন্ত্রণাধীন আমের স্পোর্টসের মালিকানাধীন আর্ক’টেরিক্স ২০১৯ সাল থেকে চীনে নিজেদের কৌশল বদলাতে শুরু করে। হোলসেল বিক্রির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে তারা জোর দেয় নিজস্ব ব্র্যান্ড স্টোর ও ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মে। ফলে দাম ও ব্র্যান্ড প্রেজেন্টেশন দুটো নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়, আর ব্র্যান্ডকে একই সঙ্গে পারফরম্যান্স ও ‘কোয়ায়েট লাক্সারি’র প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা যায়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনেক চীনা ক্রেতাই এই জ্যাকেট পরেন অফিসে যাওয়ার পথে, ক্যাফেতে বা শহুরে হাঁটাহাটিতে; পাহাড়ি ট্রেইল বা স্কি স্লোপে নয়। তিব্বতে এক আতশবাজি প্রদর্শনী স্পনসর করা নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কে পরিবেশগত ক্ষতির অভিযোগ ওঠায় কিছু সময়ের জন্য সামাজিক মাধ্যমে বয়কটের ডাক উঠেছিল, তদন্তও হয়েছে। তবু শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যা দেখায়—ব্র্যান্ডের প্রতি আবেগ অনেক সময় ক্ষণস্থায়ী ক্ষোভের চেয়ে শক্তিশালী থাকে।

Arc'teryx Won Over China With a $1,000 Jacket. Now It's Popping Up Everywhere. - WSJ

চীনা অভিজ্ঞতা দিয়ে গ্লোবাল খেলায় নতুন ইনিংস
এখন চীনে গড়া এই প্লেবুকই আর্ক’টেরিক্স ব্যবহার করছে অন্য বাজারে। নিউ ইয়র্কের রকেফেলার সেন্টারে নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্টোর খোলা হয়েছে, সামনে আরও একাধিক বড় শহরে স্টোর খোলার পরিকল্পনা। নির্বাহীদের ভাষ্য, আধুনিক পেশাজীবীদের জন্য ‘পাওয়ার ইউনিফর্ম’ তৈরি করাই এখন তাদের লক্ষ্য—যে পোশাক একই সঙ্গে উষ্ণ, টেকনিক্যালি উন্নত এবং দূর থেকে দেখেই চেনা যায়। এর অর্থ হলো, দ্রুত বিস্তারের চাপের মাঝেও প্রিমিয়াম দাম, পারফরম্যান্স–বিশ্বাসযোগ্যতা ও সীমিত বিতরণ বজায় রাখা। বাস্তবে কোম্পানি এখনো তাদের ডিজাইনকে পাহাড়ি ক্রীড়াবিদদের চাহিদা অনুযায়ী গড়ে, কিন্তু জানে তাদের বড় অংশের গ্রাহক এগুলো পরবেন অফিস যাওয়া–আসা, কফিশপে বসা কিংবা উইকএন্ড ট্রিপে।

চীনা বাজারে আর্ক’টেরিক্সের সাফল্য আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করে—বিশ্ব লাক্সারি ব্যবসার ভবিষ্যৎ হয়তো শুধু ব্যাগ আর গয়নায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। সম্পদের সংকেত হিসেবে এখন অনেকেই এমন পণ্য বেছে নিচ্ছেন, যা দামি হলেও কার্যকর; ফ্যাশন আর ফাংশনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। প্যাটাগোনিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ফ্যাশন হাউস—যারা আউটডোর নান্দনিকতা নিয়ে পরীক্ষা করছে, তাদের জন্য বার্তাটি পরিষ্কার: কেবল লোগো নয়, বাস্তব পারফরম্যান্স ও ব্র্যান্ডের সত্যিকারের গল্পই এখন ক্রেতার আস্থা গড়ার মূল চাবিকাঠি। ক্লাইম্বিং কমিউনিটির প্রিয় ছোট ব্র্যান্ড থেকে চীনের অর্থনীতিনির্ভর গ্লোবাল প্রতীকে পরিণত হওয়া আর্ক’টেরিক্স দেখিয়ে দিচ্ছে—সংস্কৃতি ও কর্পোরেট কৌশল একসঙ্গে মিললে ব্র্যান্ড পরিবর্তনের গতি কত দ্রুত হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১৩৫)

চীনের নতুন স্ট্যাটাস সিম্বল: আর্ক’টেরিক্সের এক হাজার ডলারের জ্যাকেট

০৪:০০:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

লাক্সারি মন্দার মধ্যেও বাড়ছে টেকনিক্যাল আউটারওয়্যারের চাহিদা
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—কানাডিয়ান আউটডোর ব্র্যান্ড আর্ক’টেরিক্স কীভাবে চীনে নীরবে এক বিশেষ ধরনের লাক্সারি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। শাংহাইয়ের ওয়েস্ট নানজিং রোডে তাদের বিশাল ‘মিউজিয়াম’ স্টোরের সামনে এখন প্রায় নিয়মিতই লাইন পড়ে; ভেতরে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পাহাড়ি পাথুরে দেয়াল নকশার পটভূমিতে ঝুলছে জলরোধী, টেকনিক্যাল জ্যাকেট, যার দাম অনেক ক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকার চেয়েও বেশি। রিয়েল এস্টেট সংকট আর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে চীনা ক্রেতাদের বড় অংশ ঝকঝকে লোগোপূর্ণ পণ্যের বদলে দীর্ঘমেয়াদে মূল্য ধরে রাখবে—এমন পণ্যে ঝুঁকছে; আর্ক’টেরিক্স ঠিক সেই জায়গাতেই নিজেদের দাঁড় করিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছর আগে যেখানে গ্রেটার চায়না অঞ্চল থেকে আর্ক’টেরিক্সের বিক্রির প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসত, এখন তা বেড়ে প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে; ফলে ব্র্যান্ডটির সামগ্রিক আয় দুই বিলিয়ন ডলারেরও ওপরে উঠেছে।

অ্যান্টা স্পোর্টসের নিয়ন্ত্রণাধীন আমের স্পোর্টসের মালিকানাধীন আর্ক’টেরিক্স ২০১৯ সাল থেকে চীনে নিজেদের কৌশল বদলাতে শুরু করে। হোলসেল বিক্রির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে তারা জোর দেয় নিজস্ব ব্র্যান্ড স্টোর ও ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মে। ফলে দাম ও ব্র্যান্ড প্রেজেন্টেশন দুটো নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়, আর ব্র্যান্ডকে একই সঙ্গে পারফরম্যান্স ও ‘কোয়ায়েট লাক্সারি’র প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা যায়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনেক চীনা ক্রেতাই এই জ্যাকেট পরেন অফিসে যাওয়ার পথে, ক্যাফেতে বা শহুরে হাঁটাহাটিতে; পাহাড়ি ট্রেইল বা স্কি স্লোপে নয়। তিব্বতে এক আতশবাজি প্রদর্শনী স্পনসর করা নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কে পরিবেশগত ক্ষতির অভিযোগ ওঠায় কিছু সময়ের জন্য সামাজিক মাধ্যমে বয়কটের ডাক উঠেছিল, তদন্তও হয়েছে। তবু শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যা দেখায়—ব্র্যান্ডের প্রতি আবেগ অনেক সময় ক্ষণস্থায়ী ক্ষোভের চেয়ে শক্তিশালী থাকে।

Arc'teryx Won Over China With a $1,000 Jacket. Now It's Popping Up Everywhere. - WSJ

চীনা অভিজ্ঞতা দিয়ে গ্লোবাল খেলায় নতুন ইনিংস
এখন চীনে গড়া এই প্লেবুকই আর্ক’টেরিক্স ব্যবহার করছে অন্য বাজারে। নিউ ইয়র্কের রকেফেলার সেন্টারে নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্টোর খোলা হয়েছে, সামনে আরও একাধিক বড় শহরে স্টোর খোলার পরিকল্পনা। নির্বাহীদের ভাষ্য, আধুনিক পেশাজীবীদের জন্য ‘পাওয়ার ইউনিফর্ম’ তৈরি করাই এখন তাদের লক্ষ্য—যে পোশাক একই সঙ্গে উষ্ণ, টেকনিক্যালি উন্নত এবং দূর থেকে দেখেই চেনা যায়। এর অর্থ হলো, দ্রুত বিস্তারের চাপের মাঝেও প্রিমিয়াম দাম, পারফরম্যান্স–বিশ্বাসযোগ্যতা ও সীমিত বিতরণ বজায় রাখা। বাস্তবে কোম্পানি এখনো তাদের ডিজাইনকে পাহাড়ি ক্রীড়াবিদদের চাহিদা অনুযায়ী গড়ে, কিন্তু জানে তাদের বড় অংশের গ্রাহক এগুলো পরবেন অফিস যাওয়া–আসা, কফিশপে বসা কিংবা উইকএন্ড ট্রিপে।

চীনা বাজারে আর্ক’টেরিক্সের সাফল্য আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করে—বিশ্ব লাক্সারি ব্যবসার ভবিষ্যৎ হয়তো শুধু ব্যাগ আর গয়নায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। সম্পদের সংকেত হিসেবে এখন অনেকেই এমন পণ্য বেছে নিচ্ছেন, যা দামি হলেও কার্যকর; ফ্যাশন আর ফাংশনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। প্যাটাগোনিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ফ্যাশন হাউস—যারা আউটডোর নান্দনিকতা নিয়ে পরীক্ষা করছে, তাদের জন্য বার্তাটি পরিষ্কার: কেবল লোগো নয়, বাস্তব পারফরম্যান্স ও ব্র্যান্ডের সত্যিকারের গল্পই এখন ক্রেতার আস্থা গড়ার মূল চাবিকাঠি। ক্লাইম্বিং কমিউনিটির প্রিয় ছোট ব্র্যান্ড থেকে চীনের অর্থনীতিনির্ভর গ্লোবাল প্রতীকে পরিণত হওয়া আর্ক’টেরিক্স দেখিয়ে দিচ্ছে—সংস্কৃতি ও কর্পোরেট কৌশল একসঙ্গে মিললে ব্র্যান্ড পরিবর্তনের গতি কত দ্রুত হতে পারে।