০৪:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫
মারাকেশে নতুন ঢেউ, চার তরুণ নির্মাতায় বদলে যাচ্ছে মরক্কোর সিনেমা টঙ্গীতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে বিদ্যুৎকর্মী নিহত সবুজ শক্তিতে ব্রেক নয়,‘অ্যাডভাইজারি’ জল্পনা উড়িয়ে দিল ভারত সরকার পেঁয়াজের দাম বাড়তেই থাকায় ভারত থেকেই আমদানির অনুমতি দিচ্ছে সরকার ডিফল্ট সার্চে একক আধিপত্যে ‘কাঁচি’, গুগলের চুক্তিতে এক বছরের সীমা ওকিনাওয়ার আকাশে চীনা রাডার লক, উত্তেজনার মধ্যেও সংযমের আহ্বান জাপান–অস্ট্রেলিয়ার বাজার ধসের আগাম সংকেত: কখন ফেটে যায় বিনিয়োগের বুদ্বুদ ট্রাম্পের পছন্দের সম্ভাব্য পরবর্তী ফেড চেয়ারম্যান হ্যাসেট নিয়ে বাড়ছে রাজনৈতিক বিতর্ক এশিয়ান অ্যাঙ্গল | ভিয়েতনামের মাদকবিরোধী পুলিশ এখন জেন-জেডের ভাষায় কথা বলছে, ফলও মিলছে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনই মুর্শিদাবাদে একই নামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

হিন্দুস্থান টাইমস প্রতিবেদন: ভারত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রাখে, বাংলাদেশে ইউনূস সরকারের আপত্তি যখন আগের নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে- তাহলে বৈধতা পায় এমন নির্বাচন করা উচিত- জয়শঙ্কর 

 এ সপ্তাহে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরকে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা’ ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’-এর নীতির প্রকাশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রুশ তেল ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপে থাকার পরও শনিবার তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পুতিনের বৈঠকে পাঁচ বছরের একটি অর্থনৈতিক কর্মসূচিবাণিজ্যে বৈচিত্র্য ও ভারসাম্য আনাচলাচলসংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং জ্বালানি খাতে অংশীদারত্ব আরও গভীর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ২৩তম হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে বক্তব্য দিতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেনগত প্রায় আট দশকে বৈশ্বিক রাজনীতিতে নানা উত্থানপতনের মধ্যেও ভারতরাশিয়া সম্পর্ক বড় শক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল সম্পর্কগুলোর একটি হিসেবে টিকে আছে।

পুতিনের সফর কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করেছেএ প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেনভারত সব বড় দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখে এবং দিল্লি তার কূটনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে গড়ে তুলবেতা কোনো দেশই নির্ধারণ করতে পারে না। তিনি বলেন, “আমরা বারবার পরিষ্কার করেছিআমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। আমরা কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের কথা বলি এবং তা এখনো অব্যাহত আছে। কেউ কেন উল্টো কিছু আশা করবেতা আমার বোধগম্য নয়।

হাস্যরসের ছলে ব্রিটিশ অভিনেতা হিউ গ্রান্টের সেশনের পর মঞ্চে উঠার প্রসঙ্গ টেনে জয়শঙ্কর বলেনবর্তমানে পররাষ্ট্রনীতি অনেক সময় যেকোনো সিনেমার চেয়েও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। তিনি ব্যাখ্যা করেনপুতিনের এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতরাশিয়া সম্পর্ককে নতুনভাবে কল্পনা ও গড়ে তোলাকারণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্কের মতো গতিতে এগোয়নি।

তিনি বলেন, “রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলো এবং চীনকে তাদের প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে দেখেছে। আমরাও সম্ভবত একইভাবে ভেবেছি। ফলে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পিছিয়ে পড়েছিল। এই সফর মূলত সেই সম্পর্ককে নতুনভাবে গড়ে তোলার ব্যাপারেই ছিল।” তিনি আরও বলেনভারতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিপুল জনসমর্থন রয়েছে।

জয়শঙ্কর জানানচুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল একটি চলাচলসংক্রান্ত চুক্তিযা ভারতীয়দের রাশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এ ছাড়া সার উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ গড়ারও সমঝোতা হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সার আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারতকে প্রায়ই অস্থিতিশীল উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয়এ প্রসঙ্গে তিনি ইঙ্গিতে চীনের কথা উল্লেখ করেন। তার মতেসার উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কিত।

তিনি আরও জানানপুতিন বড় ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নিয়ে ভারতে এসেছিলেনযার লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রগতি আনা।

ভারতযুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য আলোচনার প্রেক্ষাপটে জয়শঙ্কর বলেনবাণিজ্যকেন্দ্রিক মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ভারত যুক্তিসঙ্গত শর্তে’ সমঝোতায় যেতে প্রস্তুততবে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করে নয়।

তার মতেভারতযুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন একটি জটিল ইস্যুর প্যাকেজের মুখোমুখি। দুই দেশই কঠিন আলোচনার মাধ্যমে এমন এক সমঝোতা খুঁজছেযা কৃষকক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নানা খাতকে প্রভাবিত করবে। জয়শঙ্কর বলেন, “এই মুহূর্তে বাণিজ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ওয়াশিংটনে এটি অত্যন্ত কেন্দ্রীয় বিষয়আগের প্রশাসনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। আমরা তা বুঝি এবং আলোচনায় প্রস্তুতও আছিতবে শর্ত হতে হবে যুক্তিসঙ্গত।

Bangladesh Crisis | S Jaishankar says Indian students will not be evacuated  from Bangladesh now dgtl - Anandabazar

জয়শঙ্কর আরও বলেন, “কূটনীতি কারও মন ভোলানোর উপায় নয়। আমার কাছে কূটনীতি মানে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা।” তিনি আশাবাদীদুই পক্ষের বাণিজ্যিক স্বার্থের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া যাবে।

তিনি সতর্ক করে বলেনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ভারতকে খুবই বিচক্ষণ হতে হবেকারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরিদের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের নেতা। সমস্যাগুলোর সমাধানে দুই দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে এগোতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ট্রাম্পের বারবার দাবিভারতপাকিস্তানের সংঘাতকালে তিনি নাকি যুদ্ধবিরতি করিয়েছেনএই প্রসঙ্গে ভারত কি তাকে সন্তুষ্ট’ করতে পারতএমন প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, “আমার দেশ ও দেশের মানুষ যা বিশ্বাস করেতার পরিপন্থী কোনো কথা আমি বলতে পারি না। সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের প্রতি অবিচার হয়এমন কোনো মন্তব্য আমি করব না।

নয়াদিল্লি বরাবরই বলেছেচার দিনের সংঘাতের পর ভারত ও পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের আলোচনার মাধ্যমেই যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এটি এসেছিল পাকিস্তানে সন্ত্রাসী ঘাঁটির বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক হামলার পর শুরু হওয়া উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছেপাকিস্তান প্রসঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার কোনো সুযোগ নেই এবং ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবিও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

ভারতচীন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেননিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) শেষ দফার ঘর্ষণবিন্দু’ নিয়ে ২০২৪ সালের অক্টোবরে সমঝোতায় পৌঁছানোর পর সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা ফিরেছে। দুই দেশের সেনাদের টহল পুনরায় শুরু হয়েছে এবং তা এখন স্বাভাবিকভাবে চলছে।

তবে কি ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ভারত-চীন?

তিনি বলেন, “আমাদের মূল বক্তব্য ছিলসীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এখন তা বজায় রয়েছে এবং আরও উন্নত হচ্ছে। তবে সীমান্তই যে একমাত্র সমস্যাতা নয়। বাণিজ্যবিনিয়োগপ্রতিযোগিতাভর্তুকিস্বচ্ছতাসহ আরও নানা ইস্যু আছেযেগুলোর কিছু গালওয়ান ঘটনার আগের।

তার ভাষায়কিছু সমস্যা যেমন সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুর মতো বিষয় ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছেঅন্য কিছু ইস্যু তুলনামূলক বেশি জটিল।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্ষমতা আরও সুসংহত করার প্রেক্ষাপটে জয়শঙ্কর বলেনপাকিস্তানে বাস্তবে সামরিক বাহিনী সবসময়ইপ্রকাশ্যেগোপনেবা মিশ্রভাবেক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল। তিনি বলেনআন্তর্জাতিক মহল প্রায়ই পাকিস্তানকে লেনদেনভিত্তিকভাবে দেখেসেখানে ভালো ও খারাপ সন্ত্রাসী’, ‘ভালো ও কম ভালো সামরিক শাসক’—এভাবে বিভাজন করা হয়। আমাদের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাস্তবতা সবসময়ই পরিষ্কার। আমাদের অধিকাংশ সমস্যাই সেখান থেকেই তৈরি,” বলেন তিনি।

তিনি উল্লেখ করেনপাকিস্তান সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়প্রশিক্ষণ শিবির চালায় এবং ভারতের বিরুদ্ধে প্রায় মতাদর্শিক পর্যায়ের বৈরিতা বজায় রাখে। তিনি বলেন, “দিনের শেষে পাকিস্তানের অবস্থা দেখুন। দুই দেশের সক্ষমতাপারফরম্যান্স ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি তুলনা করুন। তাদের নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেনঅধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আগের আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। তিনি বলেন, “দিনের শেষে যদি পুরো বিষয়টাই সুষ্ঠু নির্বাচনকে ঘিরে হয়তবে বৈধতা পায় এমন নির্বাচন হওয়াই যৌক্তিক। আমরা বাংলাদেশকে শুভকামনা জানাই… যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশই চায় মানুষের ইচ্ছা যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।” ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ফলাফল দুই দেশের সম্পর্কে ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ব দৃষ্টিভঙ্গি” আনবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাযিনি সরকারের পতনের পর ঢাকা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেনতিনি কি ইচ্ছামতো ভারতে থাকতে পারবেনএ প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, “এটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তিনি বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন এবং সেই পরিস্থিতিই তাঁর ভবিষ্যৎ অবস্থান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেবেন

জনপ্রিয় সংবাদ

মারাকেশে নতুন ঢেউ, চার তরুণ নির্মাতায় বদলে যাচ্ছে মরক্কোর সিনেমা

হিন্দুস্থান টাইমস প্রতিবেদন: ভারত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা রাখে, বাংলাদেশে ইউনূস সরকারের আপত্তি যখন আগের নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে- তাহলে বৈধতা পায় এমন নির্বাচন করা উচিত- জয়শঙ্কর 

১১:৩০:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

 এ সপ্তাহে দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরকে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা’ ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’-এর নীতির প্রকাশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রুশ তেল ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপে থাকার পরও শনিবার তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পুতিনের বৈঠকে পাঁচ বছরের একটি অর্থনৈতিক কর্মসূচিবাণিজ্যে বৈচিত্র্য ও ভারসাম্য আনাচলাচলসংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং জ্বালানি খাতে অংশীদারত্ব আরও গভীর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ২৩তম হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে বক্তব্য দিতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেনগত প্রায় আট দশকে বৈশ্বিক রাজনীতিতে নানা উত্থানপতনের মধ্যেও ভারতরাশিয়া সম্পর্ক বড় শক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্থিতিশীল সম্পর্কগুলোর একটি হিসেবে টিকে আছে।

পুতিনের সফর কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে জটিলতা তৈরি করেছেএ প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেনভারত সব বড় দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখে এবং দিল্লি তার কূটনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে গড়ে তুলবেতা কোনো দেশই নির্ধারণ করতে পারে না। তিনি বলেন, “আমরা বারবার পরিষ্কার করেছিআমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। আমরা কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের কথা বলি এবং তা এখনো অব্যাহত আছে। কেউ কেন উল্টো কিছু আশা করবেতা আমার বোধগম্য নয়।

হাস্যরসের ছলে ব্রিটিশ অভিনেতা হিউ গ্রান্টের সেশনের পর মঞ্চে উঠার প্রসঙ্গ টেনে জয়শঙ্কর বলেনবর্তমানে পররাষ্ট্রনীতি অনেক সময় যেকোনো সিনেমার চেয়েও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। তিনি ব্যাখ্যা করেনপুতিনের এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতরাশিয়া সম্পর্ককে নতুনভাবে কল্পনা ও গড়ে তোলাকারণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্কের মতো গতিতে এগোয়নি।

তিনি বলেন, “রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলো এবং চীনকে তাদের প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে দেখেছে। আমরাও সম্ভবত একইভাবে ভেবেছি। ফলে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পিছিয়ে পড়েছিল। এই সফর মূলত সেই সম্পর্ককে নতুনভাবে গড়ে তোলার ব্যাপারেই ছিল।” তিনি আরও বলেনভারতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিপুল জনসমর্থন রয়েছে।

জয়শঙ্কর জানানচুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল একটি চলাচলসংক্রান্ত চুক্তিযা ভারতীয়দের রাশিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। এ ছাড়া সার উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ গড়ারও সমঝোতা হয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সার আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারতকে প্রায়ই অস্থিতিশীল উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয়এ প্রসঙ্গে তিনি ইঙ্গিতে চীনের কথা উল্লেখ করেন। তার মতেসার উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগ খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কিত।

তিনি আরও জানানপুতিন বড় ধরনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল নিয়ে ভারতে এসেছিলেনযার লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রগতি আনা।

ভারতযুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য আলোচনার প্রেক্ষাপটে জয়শঙ্কর বলেনবাণিজ্যকেন্দ্রিক মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ভারত যুক্তিসঙ্গত শর্তে’ সমঝোতায় যেতে প্রস্তুততবে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করে নয়।

তার মতেভারতযুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন একটি জটিল ইস্যুর প্যাকেজের মুখোমুখি। দুই দেশই কঠিন আলোচনার মাধ্যমে এমন এক সমঝোতা খুঁজছেযা কৃষকক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নানা খাতকে প্রভাবিত করবে। জয়শঙ্কর বলেন, “এই মুহূর্তে বাণিজ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ওয়াশিংটনে এটি অত্যন্ত কেন্দ্রীয় বিষয়আগের প্রশাসনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। আমরা তা বুঝি এবং আলোচনায় প্রস্তুতও আছিতবে শর্ত হতে হবে যুক্তিসঙ্গত।

Bangladesh Crisis | S Jaishankar says Indian students will not be evacuated  from Bangladesh now dgtl - Anandabazar

জয়শঙ্কর আরও বলেন, “কূটনীতি কারও মন ভোলানোর উপায় নয়। আমার কাছে কূটনীতি মানে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা।” তিনি আশাবাদীদুই পক্ষের বাণিজ্যিক স্বার্থের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া যাবে।

তিনি সতর্ক করে বলেনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ভারতকে খুবই বিচক্ষণ হতে হবেকারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরিদের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের নেতা। সমস্যাগুলোর সমাধানে দুই দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে এগোতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ট্রাম্পের বারবার দাবিভারতপাকিস্তানের সংঘাতকালে তিনি নাকি যুদ্ধবিরতি করিয়েছেনএই প্রসঙ্গে ভারত কি তাকে সন্তুষ্ট’ করতে পারতএমন প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, “আমার দেশ ও দেশের মানুষ যা বিশ্বাস করেতার পরিপন্থী কোনো কথা আমি বলতে পারি না। সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের প্রতি অবিচার হয়এমন কোনো মন্তব্য আমি করব না।

নয়াদিল্লি বরাবরই বলেছেচার দিনের সংঘাতের পর ভারত ও পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের আলোচনার মাধ্যমেই যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এটি এসেছিল পাকিস্তানে সন্ত্রাসী ঘাঁটির বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক হামলার পর শুরু হওয়া উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছেপাকিস্তান প্রসঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার কোনো সুযোগ নেই এবং ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবিও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

ভারতচীন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেননিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) শেষ দফার ঘর্ষণবিন্দু’ নিয়ে ২০২৪ সালের অক্টোবরে সমঝোতায় পৌঁছানোর পর সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা ফিরেছে। দুই দেশের সেনাদের টহল পুনরায় শুরু হয়েছে এবং তা এখন স্বাভাবিকভাবে চলছে।

তবে কি ঘনিষ্ঠ হচ্ছে ভারত-চীন?

তিনি বলেন, “আমাদের মূল বক্তব্য ছিলসীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এখন তা বজায় রয়েছে এবং আরও উন্নত হচ্ছে। তবে সীমান্তই যে একমাত্র সমস্যাতা নয়। বাণিজ্যবিনিয়োগপ্রতিযোগিতাভর্তুকিস্বচ্ছতাসহ আরও নানা ইস্যু আছেযেগুলোর কিছু গালওয়ান ঘটনার আগের।

তার ভাষায়কিছু সমস্যা যেমন সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুর মতো বিষয় ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছেঅন্য কিছু ইস্যু তুলনামূলক বেশি জটিল।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্ষমতা আরও সুসংহত করার প্রেক্ষাপটে জয়শঙ্কর বলেনপাকিস্তানে বাস্তবে সামরিক বাহিনী সবসময়ইপ্রকাশ্যেগোপনেবা মিশ্রভাবেক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল। তিনি বলেনআন্তর্জাতিক মহল প্রায়ই পাকিস্তানকে লেনদেনভিত্তিকভাবে দেখেসেখানে ভালো ও খারাপ সন্ত্রাসী’, ‘ভালো ও কম ভালো সামরিক শাসক’—এভাবে বিভাজন করা হয়। আমাদের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাস্তবতা সবসময়ই পরিষ্কার। আমাদের অধিকাংশ সমস্যাই সেখান থেকেই তৈরি,” বলেন তিনি।

তিনি উল্লেখ করেনপাকিস্তান সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়প্রশিক্ষণ শিবির চালায় এবং ভারতের বিরুদ্ধে প্রায় মতাদর্শিক পর্যায়ের বৈরিতা বজায় রাখে। তিনি বলেন, “দিনের শেষে পাকিস্তানের অবস্থা দেখুন। দুই দেশের সক্ষমতাপারফরম্যান্স ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি তুলনা করুন। তাদের নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেনঅধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার আগের আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। তিনি বলেন, “দিনের শেষে যদি পুরো বিষয়টাই সুষ্ঠু নির্বাচনকে ঘিরে হয়তবে বৈধতা পায় এমন নির্বাচন হওয়াই যৌক্তিক। আমরা বাংলাদেশকে শুভকামনা জানাই… যেকোনো গণতান্ত্রিক দেশই চায় মানুষের ইচ্ছা যেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়।” ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ফলাফল দুই দেশের সম্পর্কে ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ব দৃষ্টিভঙ্গি” আনবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাযিনি সরকারের পতনের পর ঢাকা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেনতিনি কি ইচ্ছামতো ভারতে থাকতে পারবেনএ প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, “এটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তিনি বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন এবং সেই পরিস্থিতিই তাঁর ভবিষ্যৎ অবস্থান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেবেন