হ্যানয় ও হো চি মিন সিটির মধ্যবিত্ত ও তরুণ কর্মজীবীরা নিজেদের বাড়ির স্বপ্ন থেকে দ্রুতই পিছিয়ে পড়ছেন। কারণ দেশজুড়ে ডেভেলপারদের দৃষ্টি এখন একমাত্র বিলাসবহুল আবাসিক প্রকল্পে—যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বহু গুণ বেশি।
মধ্যবিত্তের দুঃসহ শহরজীবন
রাজধানী হ্যানয়ের বিশ্ববিদ্যালয় কর্মী নগুয়েন বিচ হা স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে মাত্র ১৬.৫ বর্গমিটারের একটি ঘরে থাকেন—যা অনেকটা গাড়ির পার্কিং স্পেসের সমান। শ্বশুরবাড়ির এই ছোট জায়গা, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সীমাবদ্ধতা ও গোপনীয়তার অভাব যেন প্রতিদিনই তাকে মনে করিয়ে দেয়—নিজস্ব ঘর এখনও নাগালের বাইরে।
তার ভাষায়, সঞ্চয়ের গতি যত ধীর, বাড়ির দাম তার চেয়ে দ্রুত বাড়ছে। আজকের দামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে গেলে আরও দশ বছরের সঞ্চয় প্রয়োজন।

লাগামছাড়া দাম, অপ্রতুল সামাজিক আবাসন
হা–র মতো লাখো মানুষ একই অবস্থায় আটকে আছেন। বিলাসবহুল প্রকল্পের দৌড়ে সাশ্রয়ী আবাসন কার্যত উধাও হয়ে গেছে। সামাজিক আবাসনও সীমিত এবং আয়সীমার কারণে অনেকেই সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে পরিবার নিয়ে ভিড়ে ঠাসা ঘরে থাকা বা নিম্নমানের বাসস্থানে সমঝোতা ছাড়া উপায় নেই।
সিঙ্গাপুর–টোকিওর চেয়েও ব্যয়বহুল হ্যানয় ও এইচসিএমসি
ওয়াশিংটনভিত্তিক আরবান ল্যান্ড ইনস্টিটিউট (ULI)–এর হিসাব অনুযায়ী আয়–দামের অনুপাতে হ্যানয় ও হো চি মিন সিটি এখন সিঙ্গাপুর, টোকিও কিংবা সিউলের চেয়েও ব্যয়বহুল।
২০২4–এর জুলাই–সেপ্টেম্বরে হ্যানয়ে প্রতি বর্গমিটারের দাম আগের বছরের তুলনায় ৬০% এবং এইচসিএমসিতে ৬৫% বেড়েছে।
৩৯ বছরের ব্যাংককর্মী আরউইন এখনও বাবা–মায়ের সঙ্গে থাকেন। তিনি মনে করেন, নিজের ঘর কিনতে গেলে হয়তো আরও ২০ বছর সঞ্চয় করতে হবে।
ভিয়েতনামে বাবা–মা সাধারণত সন্তানের প্রথম বাড়ি কেনায় সহায়তা করেন, কিন্তু এখন সেই সহায়তাও দামকে ধরতে পারছে না।
ULI–এর তথ্য বলছে, ভাড়ার চাপ সিঙ্গাপুর–টোকিওর তুলনাতেও বেশি। হো চি মিন সিটির ৩২ বছর বয়সী কর্মী বাও জানান—ভাড়া “রকেটের মতো বাড়ছে”, তাই বাধ্য হয়ে মায়ের সঙ্গেই থাকতে হচ্ছে।

গ্রাম থেকে আসা শ্রমিকদের করুণ বাস্তবতা
অযোগ্যতার কারণে সামাজিক আবাসন পান না—এমন শহরমুখী শ্রমিকদের জীবন আরও কঠিন। হো চি মিন সিটির কারখানাগুলোর শ্রমিকদের অনেকেই খোলা জায়গায় থালা–বাসন ধোয়া, শেয়ারড টয়লেট ব্যবহারসহ অত্যন্ত নিন্মমানের পরিবেশে থাকেন।
Cushman & Wakefield জানায়, হ্যানয়ে নতুন সরবরাহকৃত ইউনিটের ৯১%–ই উচ্চমানের বা বিলাসবহুল। হো চি মিন সিটিতে মাস্টারিজ হোমসের নতুন প্রকল্পে প্রতি বর্গমিটার দাম ১,২৫,০০০ ডং—যেখানে ‘দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দীর্ঘতম মিউজিক্যাল ওয়াটার ক্যানাল’সহ নানাবিধ আকর্ষণ যোগ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—এই মূল্য–বাস্তবতার বৈষম্য রিয়েল এস্টেট বুদবুদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সিকিউরিটিজ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম ব্যাংক ডিপোজিট রেট ও সহজ ঋণনীতির কারণে বড় ঋণ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে ঝুঁকছেন। ব্যাংক–ডেভেলপার যোগসাজশও বাজারকে আরও বেঁকিয়ে দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী চীনের ক্ষোভ
ক্যাবিনেট বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন জোর প্রশ্ন তুলেছিলেন—“৭০–১০০ মিলিয়ন ডং প্রতি বর্গমিটারের ফ্ল্যাট কে কিনবে?”
সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় আবাসন তহবিল গঠন, সামাজিক আবাসনের আয়সীমা বাড়ানো, অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত করা–সহ নানা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ লাখ সামাজিক হাউজিং নির্মাণের লক্ষ্যও নির্ধারিত।
পরিবহন–ব্যবস্থা উন্নত হলে সস্তা শহরতলিতে বসবাস সহজ হবে বলে মনে করেন বাজার–বিশেষজ্ঞরা।
হ্যানয়ের বিচ হা–ও আশাবাদী যে আয়সীমা আরও শিথিল হলে ভবিষ্যতে হয়তো সামাজিক আবাসনে একটি ছোট ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হবে।
তার কথায়—“আমরা মাঝখানে আটকে আছি। বাণিজ্যিক বাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই, আবার সামাজিক আবাসনের যোগ্যতাও পূরণ হয় না। একমাত্র আশাই সামাজিক আবাসন।”










সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















